নীলফামারী সদরের রামগঞ্জে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত জামায়াত কর্মী আবু বকর সিদ্দিকের মরদেহ ১২ বছর পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ ও সিআইডির ফরেনসিক টিম এ কার্যক্রম পরিচালনা করে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। এরই অংশ হিসেবে ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে নীলফামারী সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ওই হামলার ঘটনার পরদিন রামগঞ্জ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা, এবং সংঘর্ষে প্রাণ হারান জামায়াত কর্মী আবু বকর সিদ্দিকসহ পাঁচজন।
তবে নিহত আবু বকরের পরিবার শুরু থেকেই দাবি করে আসছে যে, এটি কোনো সংঘর্ষে মৃত্যু নয়— বরং পূর্বপরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে এবং গাড়িচাপা দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তৎকালীন প্রশাসন ঘটনাটিকে ‘সংঘর্ষে প্রাণহানি’ বলে উল্লেখ করলেও, দীর্ঘদিন ধরে পরিবারটি দাবি করে আসছিল যে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা হয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর আবু বকরের ছেলে লিটন রহমান ২০২ জনকে আসামি করে নতুন করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক সাংসদ আসাদুজ্জামান নূরকে প্রধান আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন।
বৃহস্পতিবার মরদেহ উত্তোলন ও নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজীর ইসলাম, নীলফামারী থানার এসআই সজীব সাহা, নিহতের ছেলে লিটন রহমান এবং সদর উপজেলা জামায়াতের আমির আবু হানিফা শাহ।
মরদেহের হাড় ও অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে। পুলিশ জানায়, রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলার তদন্তে নতুন গতির সঞ্চার হবে।
নিহতের ছেলে লিটন রহমান সারাক্ষণ বার্তাকে বলেন, “আমার বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মূলহোতা ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। দীর্ঘদিন ধরে বিচার চাইছি। আজ কবর খোঁড়ার মাধ্যমে নতুন করে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলো। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
ঘটনাটি নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে পুরো এলাকায়। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপক আলোচনা ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।