ঢাকা ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান, বিপুল পরিমাণ কারেন্ট জাল জব্দ ও ধ্বংস মাদারীপুরে ১৬ বছর পর বিএনপির কর্মী সম্মেলন ঢাকায় ৮ বছর ধরে একই পদে: গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুলের প্রভাব ও অনিয়ম অভিযোগ জনগণ প্রচলিত রাজনীতির পরিবর্তন চায়: তারেক রহমান মাগুরায় সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮৭ লাখ টাকা উধাও: গ্রাহকের অভিযোগে তোলপাড় ঠাকুরগাঁওয়ে বন্ধুমহল ব্লাড ডোনার সোসাইটির ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন সম্পন্ন বিটিভির বার্তা বিভাগে ক্ষমতার অপব্যবস্থাপনা: মুন্সী ফরিদুজামান ও সৈয়দা তাসমিনা আহমেদের নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি নিয়ে নতুন বিতর্ক ঠাকুরগাঁও সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১৪ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ ঠাকুরগাঁওয়ে সেনা অভিযানে ২১ বোতল ফেন্সিডিলসহ তালিকাভুক্ত জুলাই যোদ্ধা আটক গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা: রাজৈরে মানববন্ধন, দোষীদের ফাঁসির দাবি

সমন্বয়ক রিয়াদের কেরামতি,এক বছরেই গ্রামে পাকা বাড়ি

  • স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
  • ৩৩ জন সংবাদটি পড়েছেন

রাজধানীর গুলশানে গত শনিবার সন্ধ্যায় সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের কাছে চাঁদাবাজিকালে চারজনের সঙ্গে হাতেনাতে আটক হন ‘সমন্বয়ক’ আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের পর সংশ্লিষ্ট সংগঠনের পদ থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। তার চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকাশ পেলে এলাকাতেও আলোচনা শুরু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিয়াদের মূল বাড়ি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবীপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে।রিয়াদের বাবা আট বছর আগে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। এখন দিনমজুর। রিয়াদও চলতেন আর্থিক কষ্টে। তবে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বছর না যেতেই তাঁর গ্রামের বাড়িতে উঠতে শুরু করে পাকা দালান। হঠাৎ এমন পরিবর্তনে বিস্মিত এলাকাবাসী।

জানা যায়, রিয়াদের দাদা ওয়ালীউল্যাহ ছিলেন রিকশাচালক। দাদার মতো তার বাবা আবু রায়হানও রিকশাচালক ছিলেন আট বছর আগে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছেন দিনমজুর হিসেবে।

গত বছরের ৫ আগস্টের আগে দিনমজুর হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন তার পরিবারের একাধিক সদস্য। বাবা কঠোর পরিশ্রম করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন। স্বপ্ন ছিল ছেলে একদিন বড় চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন। রিয়াদের মা নাজমুন নাহার একজন গৃহিণী। তিনি একসময় সংসার চালাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন।দারিদ্র্য, অনটন লেগেই থাকত তাদের পরিবারে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রিয়াদ। বড় ভাই চট্টগ্রাম ফিশারিজ কোম্পানিতে চাকরি করেন।

সহপাঠীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় নবীপুর হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন রিয়াদ। পরে ভর্তি হন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সরকারি মুজিব মহাবিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। সাবেক সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার হাতে ফুল দিয়ে ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকায় গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এক পর্যায়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। হয়ে ওঠেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। ধীরে ধীরে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন।

রিয়াদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাল্টে গেছে আগের পরিবেশ। নেই আগের ভাঙাচোরা ঘরদোর। আগের ঘরের পাশে নির্মিত হচ্ছে পাকা ঘর। পাকা ঘর নির্মাণ করার পাশাপাশি রিয়াদ কিনেছেন দামি গাড়িও। ছেলে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করেছেন রিয়াদের মা-বাবা তা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। রিয়াদের মা সামসুন্নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা না খেয়ে ওকে শহরে পাঠাইছি। ছেলেটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত, ভালোই ছিল। টিভিতে দেখি আমার ছেলেকে পুলিশে ধরেছে।’

রিয়াদের পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রিকশা চালানোর মাধ্যমে যে পরিবার চলত, দিন এনে দিন খেতে হতো; সেখানে ৫ আগস্টের পর রিয়াদের বিলাসী জীবনযাপন, ছাদ ঢালাই করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করা দেখে আমরা অবাক হয়েছি।’

জানা যায়, রিয়াদ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। গত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সমন্বয়ক পরিচয়ে হয়ে ওঠেন চাঁদাবাজ। সমন্বয়কের মুখোশ পরে কিভাবে গ্রামের এক হতদরিদ্র রিকশাওয়ালা পরিবারের ছেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন এবং বিলাসী জীবন যাপন করে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গ্রামবাসী। নবীপুর হাই স্কুলের সাবেক সভাপতি শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার স্কুলের এই ছাত্রকে সবাই দান-খয়রাত করে পড়াত, কারণ তার দরিদ্র রিকশাচালক বাবার পক্ষে পড়ালেখার খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। সে কিভাবে এত ভয়ংকর চাঁদাবাজ হয়ে উঠল তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।’ সাধারণ পরিবার থেকে শহরে উঠে আসা ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া এমন আরো রিয়াদ সমাজের আড়ালে লুকিয়ে আছে কি না প্রশাসনকে তা খুঁজে বের করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে আটক রিয়াদের ছবির ফ্রেমে আছেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা। ফেসবুকে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে নিজের শক্তির জানান দিতেন তিনি। তার ছবির ফ্রেমে বাদ যাননি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও। একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে ছবি পাওয়া গেছে তার ফেসবুকে।

 

Tag :
About Author Information

GOURANGA BOSE

জনপ্রিয় সংবাদ

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান, বিপুল পরিমাণ কারেন্ট জাল জব্দ ও ধ্বংস

সমন্বয়ক রিয়াদের কেরামতি,এক বছরেই গ্রামে পাকা বাড়ি

আপডেট সময় : ০৮:৩৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর গুলশানে গত শনিবার সন্ধ্যায় সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের কাছে চাঁদাবাজিকালে চারজনের সঙ্গে হাতেনাতে আটক হন ‘সমন্বয়ক’ আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের পর সংশ্লিষ্ট সংগঠনের পদ থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। তার চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকাশ পেলে এলাকাতেও আলোচনা শুরু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিয়াদের মূল বাড়ি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবীপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে।রিয়াদের বাবা আট বছর আগে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। এখন দিনমজুর। রিয়াদও চলতেন আর্থিক কষ্টে। তবে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বছর না যেতেই তাঁর গ্রামের বাড়িতে উঠতে শুরু করে পাকা দালান। হঠাৎ এমন পরিবর্তনে বিস্মিত এলাকাবাসী।

জানা যায়, রিয়াদের দাদা ওয়ালীউল্যাহ ছিলেন রিকশাচালক। দাদার মতো তার বাবা আবু রায়হানও রিকশাচালক ছিলেন আট বছর আগে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছেন দিনমজুর হিসেবে।

গত বছরের ৫ আগস্টের আগে দিনমজুর হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন তার পরিবারের একাধিক সদস্য। বাবা কঠোর পরিশ্রম করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন। স্বপ্ন ছিল ছেলে একদিন বড় চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন। রিয়াদের মা নাজমুন নাহার একজন গৃহিণী। তিনি একসময় সংসার চালাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন।দারিদ্র্য, অনটন লেগেই থাকত তাদের পরিবারে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রিয়াদ। বড় ভাই চট্টগ্রাম ফিশারিজ কোম্পানিতে চাকরি করেন।

সহপাঠীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় নবীপুর হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন রিয়াদ। পরে ভর্তি হন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সরকারি মুজিব মহাবিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। সাবেক সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার হাতে ফুল দিয়ে ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকায় গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এক পর্যায়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। হয়ে ওঠেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। ধীরে ধীরে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন।

রিয়াদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাল্টে গেছে আগের পরিবেশ। নেই আগের ভাঙাচোরা ঘরদোর। আগের ঘরের পাশে নির্মিত হচ্ছে পাকা ঘর। পাকা ঘর নির্মাণ করার পাশাপাশি রিয়াদ কিনেছেন দামি গাড়িও। ছেলে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করেছেন রিয়াদের মা-বাবা তা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। রিয়াদের মা সামসুন্নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা না খেয়ে ওকে শহরে পাঠাইছি। ছেলেটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত, ভালোই ছিল। টিভিতে দেখি আমার ছেলেকে পুলিশে ধরেছে।’

রিয়াদের পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রিকশা চালানোর মাধ্যমে যে পরিবার চলত, দিন এনে দিন খেতে হতো; সেখানে ৫ আগস্টের পর রিয়াদের বিলাসী জীবনযাপন, ছাদ ঢালাই করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করা দেখে আমরা অবাক হয়েছি।’

জানা যায়, রিয়াদ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। গত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সমন্বয়ক পরিচয়ে হয়ে ওঠেন চাঁদাবাজ। সমন্বয়কের মুখোশ পরে কিভাবে গ্রামের এক হতদরিদ্র রিকশাওয়ালা পরিবারের ছেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন এবং বিলাসী জীবন যাপন করে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গ্রামবাসী। নবীপুর হাই স্কুলের সাবেক সভাপতি শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার স্কুলের এই ছাত্রকে সবাই দান-খয়রাত করে পড়াত, কারণ তার দরিদ্র রিকশাচালক বাবার পক্ষে পড়ালেখার খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। সে কিভাবে এত ভয়ংকর চাঁদাবাজ হয়ে উঠল তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।’ সাধারণ পরিবার থেকে শহরে উঠে আসা ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া এমন আরো রিয়াদ সমাজের আড়ালে লুকিয়ে আছে কি না প্রশাসনকে তা খুঁজে বের করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে আটক রিয়াদের ছবির ফ্রেমে আছেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা। ফেসবুকে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে নিজের শক্তির জানান দিতেন তিনি। তার ছবির ফ্রেমে বাদ যাননি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও। একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে ছবি পাওয়া গেছে তার ফেসবুকে।