ঢাকা ০২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
পূজা দেখতে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার এক গারো কিশোরী। নেপথ্যে ১০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে হাইকোর্টের আপীল বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে ৫৪ জন কর্মচারি নিয়োগ, আরো প্রায় ৬০০জনের নিয়োগ চুড়ান্ত!  রাজৈরের বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন কৃষক দল ও পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। ফরিদপুরের ট্রাক চাপায় এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।  মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তোফায়েল আহমেদ। জরুরি ভর্তি করা হল হাসপাতালে। বহু বছর সেনাবাহিনীর থাবায় মুখোশ উন্মোচন হলো মাদক ব্যবসায়ী কাশেম ওরফে ফেন্সি কাসেমের। শেরপুরে দলিত নারীদের মুষ্টির চালে “দুর্গা পূজা”। “গীতার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো” এ শ্লোগানে মুখরিত মাদারীপুর। মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজাচ্ছে দেবী দুর্গাকে।মন্ডপে মন্ডপে চলছে মা’কে বরণের প্রস্তুতি। এক রাতের রক্তগাথা: শাপলা চত্বরে নৃশংসতার ১২ বছর।

বিটিভির বার্তা বিভাগে ক্ষমতার অপব্যবস্থাপনা: মুন্সী ফরিদুজামান ও সৈয়দা তাসমিনা আহমেদের নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি নিয়ে নতুন বিতর্ক

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক বছর অতিবাহিত হলেও দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) বার্তা বিভাগ এখনও স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার আস্থাভাজন মুন্সী ফরিদুজামান ও ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ ও তাদের গঠিত সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিটিভির একাধিক সূত্র জানায়, এই দুই কর্মকর্তার মাধ্যমে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে নিয়মিত তথ্য ও ভিডিওচিত্র পাঠানো হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও দৃষ্টিগোচর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার শাসন পতনের পর মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু দপ্তরে পরিবর্তন হলেও বিটিভিতে শুধু মহাপরিচালক ও জেনারেল ম্যানেজার পরিবর্তন হয়েছে, অন্য কোনো সংস্কার হয়নি। বরং ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন মুন্সী ফরিদুজামানকে বিটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক এবং ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদকে উপ-মহাপরিচালক (বার্তা) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ড. সৈয়দা তাসমিনা দীর্ঘদিন ধরে বিটিভির অন্যতম প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তার ক্ষমতার পেছনে রয়েছে তাঁর ভাসুর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক ও দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. মহসিনের প্রভাব।

বিটিভির এক তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উঠে এসেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাল বিল, বাজেট ও অন্যান্য অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া, ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল অডিট রিপোর্টেও ১০ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা অনিয়মসহ অন্যান্য দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে মাত্র সাবেক জেনারেল ম্যানেজারকে বদলি করা হলেও ড. সৈয়দা তাসমিনা এখনও পদে রয়েছেন এবং দুদক থেকেও মামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে অভিযোগ।

মুন্সী ফরিদুজামান বিটিভিতে দীর্ঘ সময় ক্ষমতাসীনদের আস্থাভাজন হিসেবে কাজ করে আসছেন। ২০০৯-১৪ সালের মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে বিটিভিতে ফিরে এসে প্রধান বার্তা সম্পাদক পদে উন্নীত হন। তার বিরুদ্ধে অফিসের অনিয়ম ও বিদেশি ট্যুর সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার পক্ষে প্রতিবাদমূলক পোস্ট দেওয়ার কারণে অনেক সংবাদকর্মীকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়, যেখানে মুন্সী ফরিদুজামানের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। এছাড়া, রিপোর্টার এ কে এম শহীদুল্লাহকে অফিস ডিউটি থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং পরবর্তীতে চাকুরিচ্যুতির ঘটনাও এর অন্তর্ভুক্ত।

মুন্সী ফরিদুজামান ও সৈয়দা তাসমিনা আহমেদের নেতৃত্বে বিটিভির সংবাদ বিভাগ রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতিতে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিটিভির সংবাদ প্রকাশনায় প্রায় ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অপচয়ের বিষয়েও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বর্তমানে বিটিভিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরোপিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড, চাকরিচ্যুতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠেছে।

তবে মন্ত্রণালয় ও বিটিভির কর্তৃপক্ষ এখনও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতায় বড় ক্ষতি করতে পারে।

Tag :
About Author Information

Milon Ahammed

পূজা দেখতে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার এক গারো কিশোরী।

বিটিভির বার্তা বিভাগে ক্ষমতার অপব্যবস্থাপনা: মুন্সী ফরিদুজামান ও সৈয়দা তাসমিনা আহমেদের নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি নিয়ে নতুন বিতর্ক

আপডেট সময় : ০১:৪১:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক বছর অতিবাহিত হলেও দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) বার্তা বিভাগ এখনও স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার আস্থাভাজন মুন্সী ফরিদুজামান ও ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ ও তাদের গঠিত সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিটিভির একাধিক সূত্র জানায়, এই দুই কর্মকর্তার মাধ্যমে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে নিয়মিত তথ্য ও ভিডিওচিত্র পাঠানো হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও দৃষ্টিগোচর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার শাসন পতনের পর মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু দপ্তরে পরিবর্তন হলেও বিটিভিতে শুধু মহাপরিচালক ও জেনারেল ম্যানেজার পরিবর্তন হয়েছে, অন্য কোনো সংস্কার হয়নি। বরং ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন মুন্সী ফরিদুজামানকে বিটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক এবং ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদকে উপ-মহাপরিচালক (বার্তা) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ড. সৈয়দা তাসমিনা দীর্ঘদিন ধরে বিটিভির অন্যতম প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তার ক্ষমতার পেছনে রয়েছে তাঁর ভাসুর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক ও দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. মহসিনের প্রভাব।

বিটিভির এক তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উঠে এসেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাল বিল, বাজেট ও অন্যান্য অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া, ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল অডিট রিপোর্টেও ১০ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা অনিয়মসহ অন্যান্য দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে মাত্র সাবেক জেনারেল ম্যানেজারকে বদলি করা হলেও ড. সৈয়দা তাসমিনা এখনও পদে রয়েছেন এবং দুদক থেকেও মামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে অভিযোগ।

মুন্সী ফরিদুজামান বিটিভিতে দীর্ঘ সময় ক্ষমতাসীনদের আস্থাভাজন হিসেবে কাজ করে আসছেন। ২০০৯-১৪ সালের মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে বিটিভিতে ফিরে এসে প্রধান বার্তা সম্পাদক পদে উন্নীত হন। তার বিরুদ্ধে অফিসের অনিয়ম ও বিদেশি ট্যুর সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার পক্ষে প্রতিবাদমূলক পোস্ট দেওয়ার কারণে অনেক সংবাদকর্মীকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়, যেখানে মুন্সী ফরিদুজামানের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। এছাড়া, রিপোর্টার এ কে এম শহীদুল্লাহকে অফিস ডিউটি থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং পরবর্তীতে চাকুরিচ্যুতির ঘটনাও এর অন্তর্ভুক্ত।

মুন্সী ফরিদুজামান ও সৈয়দা তাসমিনা আহমেদের নেতৃত্বে বিটিভির সংবাদ বিভাগ রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতিতে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিটিভির সংবাদ প্রকাশনায় প্রায় ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অপচয়ের বিষয়েও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বর্তমানে বিটিভিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরোপিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড, চাকরিচ্যুতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠেছে।

তবে মন্ত্রণালয় ও বিটিভির কর্তৃপক্ষ এখনও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতায় বড় ক্ষতি করতে পারে।