চট্টগ্রামের বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি)-এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আহমেদ ইফতেখারুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মৃত মায়ের সই জাল করে টাকা আত্মসাৎ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা গায়েব, দাতাদের সহায়তায় কেনা জমি দখলসহ নানা দুর্নীতির তথ্য সামনে এসেছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর ২০২১ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১২ সালে মারা যাওয়া মা আনোয়ারা ইসলামের নাম ব্যবহার করে শেয়ার স্থানান্তরের আবেদন করেন ইফতেখার। ওই আবেদনে জাল সই ব্যবহার করে ২০১৫ সালে দুটি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি করেন। এভাবে তিনি প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
১৯৯৭ সালে ইউএসটিসির প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলাম কর্ণফুলীতে ৩৪০০ শতক জমি কেনেন দরিদ্র মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে ওষুধ উৎপাদনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ২০০৮ সালে প্রতারণার মাধ্যমে ইফতেখার জমিটি নিজের নামে করে নেন। এতে প্রতিষ্ঠাতার স্বপ্ন ভেস্তে যায় বলে অভিযোগ করেছেন তার সাবেক সহকারী মাহবুব ইসলাম।
সম্প্রতি ইউএসটিসির বায়োকেমিস্ট্রি ও বায়োটেকনোলজি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সিজিপিএ ৪.০০ এবং চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক পাওয়া প্রার্থী জয়া শীলকে নিয়োগ বোর্ড নির্বাচিত করলেও শেষ মুহূর্তে তাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, যোগ্যতা নয়, বরং ব্যক্তিগত স্বার্থ ও প্রভাবের ভিত্তিতেই নিয়োগ হয়ে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মৃত্যুর আগে ইউএসটিসির জন্য প্রায় ৪০ কোটি ৬০ লাখ টাকার এফডিআর রেখে যান। কিন্তু এ টাকার কোনো হিসাব নেই। অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান ইফতেখার আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
সাবেক ট্রেজারার ড. ফসিউল আলম জানান, তাকে নিয়মিত খালি চেকে সই করার জন্য চাপ দেওয়া হতো। তিনি অস্বীকার করায় চাকরি হারান। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক ট্রেজারার ড. নুরুল আবছারও ইফতেখারকে সহযোগিতা করেছিলেন।
অভিযোগকারীদের দাবি, স্বচ্ছ হিসাব ও জবাবদিহির অভাবে ইউএসটিসি বর্তমানে ঋণগ্রস্ত অবস্থায় পড়েছে। শিক্ষকদের একটি অংশ মনে করছেন, আর্থিক জালিয়াতি ও নিয়োগে স্বজনপ্রীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় তার সুনাম হারাচ্ছে।