নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর সাব-রেজিস্টার আব্দুল্লাহ আল ইমামের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশনের (বিআরএসএ) প্রভাব খাটিয়ে ব্যাপক আধিপত্য ও সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। নেত্রকোনা সদর অফিস থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার লোভনীয় পয়েন্টে তদবির করে পোস্টিং ভোগ, প্রতি দলিলে অফিস খরচের নামে অতিরিক্ত টাকা আত্মসাৎ, টাকা না দিলে দলিলে ইচ্ছা করে দেখিয়ে হয়রানি, জমির প্রকৃত বিনিময় মূল্য কম দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে দলিলে সই, এতে রেজিস্ট্রেশন ফি হতে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে বেশ কয়েকটি লোভনীয় অফিসগুলোর মধ্যে একটি সদর। তাই তিনি উচ্চ মহলে তদবির করে সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস বেছে নিয়েছেন। নেত্রকোনা সদর থেকে রেজিস্ট্রি অফিসে দায়িত্ব পালনকালে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ আয় করেন। দায়িত্ব পালনকালে কাউকে আমলে নিতেন না। তবে এতোগুলো খারাপ দিকের মধ্যে ভালো দিকও রয়েছে বটে। কর্মস্থলে যোগদানের পরপরই অফিসটাইমে সে তার কাজকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়। যখনই যেখানে দায়িত্বে ছিলেন সেখানকার কর্মচারী, দলিল লেখকদের সাথে সৌজন্যমূলক সুন্দর আচরণে সকলের মনে জায়গা করে নিতেন। তবে এই হাসির মাঝেও যেনো কিছু একটা লুকিয়ে থাকে। সে কাউকে তোয়াক্কা করে না, তার যখন যা ভালো লাগে তাই করে। অনেকে তাকে ‘সাইলেন্ট রেজিস্ট্রার’ ও বলে থাকেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে শুধু যে সাব-রেজিস্ট্রারই অনিয়ম করে তা নয়। এর পেছনে রয়েছে বড় একটি সিন্ডিকেট৷ যার মধ্যে অন্যতম জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুল হাফিজ, মোহরার (টিটু- জহির), উমেদার তৌহিদ, অফিস সহকারী, দলিল লেখক ভেন্ডার সমিতির সভাপতি- সাধারন সম্পাদকসহ কমিটির নেতৃবৃন্দরা।
জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুল হাফিজের দৌরাত্ম জো
“জমি নিবন্ধন করতে আসা সেবাগ্রাহকরা যেনো দ্রুত সেবা পায় তাই তার সকল উপজেলায় ঘুষের রেট নির্ধারণ করে দিয়েছেন জেলা রেজিস্ট্রার, সরাসরি বদলী বাণিজ্য থেকে কখনো কখনো সুপারিশ, মোহরার নিয়োগ বাণিজ্য, রেকর্ড রূমে নকল বাণিজ্য, অডিট এলেই লাখ টাকার খাম দিয়ে খুশি করলেই কোনো ফাকফোকর থাকে না। জেলা রেজিস্ট্রারের আওতাধীন তার সকল উপজেলার কোনো অনিয়ম প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে গেলে শুধু একটি কথা শোনা যায়, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে’। তবে বাস্তবের সাথে এ বক্তব্যের কোনো মিল নেই’।
নকলনবিশ ও কেরানির ঘুষ বাণিজ্য:
সদর রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ লেনদেন, দালালের দৌরাত্ম্য ও জমির শ্রেণি পরিবর্তনের নামে রাজস্ব ফাঁকিসহ নানা অভিযোগ। সিন্ডিকেটে জড়িত অফিস সহকারী ও নকলনবিশ প্রধান টিটু- জহির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে সহযোগী হিসেবে তাল মেলাচ্ছেন দলিল ভেন্ডার সমিতির সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির নেতৃবৃন্দরা। কারন সমিতির নামেও দলিল প্রতি সেরেস্তা খরচের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় দলিলপ্রতি৷ শুধু তাই নয়, তারা পে-অর্ডারেও ঘুষ নেয়।
দলিল রেজিস্ট্রি করার আগে কেরানি ও নকল নবিস প্রধান টিটুর কাছে আসতে হয়। তাদের গ্রহীতারা প্রতি দলিলে দুপুরে লাঞ্চ বাবদ অতিরিক্ত হাজারখানেক টাকা ঘুষ দিতে হয়। ছোটখাটো কিছু ভুল এবং অসম্পূর্ণতা থাকলে তা পরিপূর্ণ করতে গেলে কালক্ষেপণ হয় আর এতে জমির ক্রেতা চলে যাওয়ার ভয়ে জমির দাতারা, নকল নবিশ প্রধান টিটুর কাছে ধরনা দেন। এভাবে টেবিল পার হয়ে সাবরেজিস্ট্রারের টেবিলে চোখের ইশারায় উমেদার তৌহিদের নিকট দলিল সম্পাদনের জন্য উত্থাপিত হয়।
আব্দুল্লাহ আল ইমামের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলা। গ্রামের বাড়িকে করেছে নান্দনিক চাকচিক্য আলিশান ভবন। ঢাকার মোহাম্মদপুর হাউজিং এ বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক, এছাড়াও নামে বেনামে ফ্ল্যাট তো আছেই। দেশের বাড়িতে প্লটের অভাব নেই।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাব রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল ইমাম ও জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুল হাফিজকে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন করা হলেও কল রিসিভ করেনি। একটি বিশেষ সূত্রে জানা যায়, ‘দুজন কর্মকর্তাই গণমাধ্যমের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেনা’।