ঢাকা ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
নেপথ্যে ১০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে হাইকোর্টের আপীল বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে ৫৪ জন কর্মচারি নিয়োগ, আরো প্রায় ৬০০জনের নিয়োগ চুড়ান্ত!  রাজৈরের বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন কৃষক দল ও পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। ফরিদপুরের ট্রাক চাপায় এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।  মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তোফায়েল আহমেদ। জরুরি ভর্তি করা হল হাসপাতালে। বহু বছর সেনাবাহিনীর থাবায় মুখোশ উন্মোচন হলো মাদক ব্যবসায়ী কাশেম ওরফে ফেন্সি কাসেমের। শেরপুরে দলিত নারীদের মুষ্টির চালে “দুর্গা পূজা”। “গীতার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো” এ শ্লোগানে মুখরিত মাদারীপুর। মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজাচ্ছে দেবী দুর্গাকে।মন্ডপে মন্ডপে চলছে মা’কে বরণের প্রস্তুতি। এক রাতের রক্তগাথা: শাপলা চত্বরে নৃশংসতার ১২ বছর। বিসিআইসি: খাদ্য নিরাপত্তা ও শিল্পায়নের অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান।

বিআরটিএ’র দুর্নীতি: দেড় হাজার টাকা বেতনের সেই কর্মচারী এখন শতকোটি টাকার মালিক।

  • সারাক্ষণ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৩৩:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৪৯ জন সংবাদটি পড়েছেন

 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র দেড় হাজার টাকা বেতনের সাবেক ক্যাশিয়ার সরদার মাহবুবুর রহমান এখন শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সহযোগিতায় রাজধানী ঢাকা, গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে একাধিক বহুতল ভবন ও ফ্ল্যাট বাড়ি সহ অঢেল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। তার সহকর্মীরা এখন বলছেন, বিআরইটিএ’র এই দুর্নীতিবাজ ও প্রভাবশালী কর্মকর্তা সরদার মাহবুবুর রহমানের হাতে জাদুর চেরাগ ছিল। শুধু তিনিই নন, তার অন্যতম সহযোগিদের মধ্যে বিআরটিএ’র উপ-পরিচাক (ইঞ্জিনিয়ার) মো. সানাউল হক ও মটরযান পরিদর্শক, সিলেট সার্কেট মো. দেলোয়ার হোসেন অন্যতম। তারা দু’জনই ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পালিয়ে যাওয়া মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিআরটিএর থেকে অবৈধ আয় যোগানের অন্যতম সহযোগি ছিলেন।

জানা গেছে, সরদার মাহাবুবুর রহমান ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআরটিএ) ক্যাশিয়ার হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক এমর্পোমেন্ট পদে কর্মরত। চাকরির শুরুতে তার বেতন ছিল সর্ব-সাকল্যে দেড় হাজার টাকা। কয়েক দাপে পদোন্নতি পেয়ে ২০২৩ সালে উপ-পরিচালক (ডিডি, অর্থ) হন তিনি। এখন তার বেতন প্রায় ৭০ হাজার টাকা। সরকারি এই কর্মকর্তা রাজধানী ঢাকায় একাধিক বহুতল ভবন ও ফ্ল্যাটের মালিক। আর ক্রয় করেছেন দামি গাড়ি। আবার গোপালগঞ্জ জেলা শহরে ১৪ তলার ভবন নির্মাণ করছেন।

অথচ তার সারা জীবনের চাকরি হতে আয়কৃত অর্থের পরিমাণ হিসাব করলে প্রায় ৯৫ লাখ টাকার মত হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার পরিচিতজনেরা জানান, বিএরটিএ’র এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার প্রয়াত কৃষক বাবার কৃর্ষি জমি রয়েছে। এখন অঢেল সম্পত্তি গড়ে তোলার খবর গ্রামের লোকজনের মাঝে নানা প্রশ্ন জেগেছে।

তারা বলছেন, সরদার মাহাবুবুর রহমানের কাছে কি জাদুর কাঠি আছে ?

নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার ডমুরিয়া গ্রামে মাহাবুবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি। তার গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার বাবার রেখে যাওয়া কৃর্ষি জমি এখনো অক্ষত রয়েছে। যা এখনো তাদের কোন শরীক বিক্রি করেননি। তার স্ত্রীর নাম মিন্নি বেগম। তিনি একজন গৃহিনী। তাদের তিন ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি তার শ্বশুরবাড়ি থেকেও কোন প্রকার আর্থিক সুবিধা পাননি। তাহলে এতো সম্পদের মালিক হলেন কিভাবে ? সেই প্রশ্নের জবাবে তার পরিচিতজনেরা বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পালিয়ে যাওয়া মন্ত্রী, এমপিদের সহযোগিতায় অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ আয়ের মাধ্যমেই তিনি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।

সূত্র জানায়, বিআরটিএ’র জেলা ও সার্কেল অফিসগুলোর জন্য বার্ষিক বরাদ্দ করা হয়। আর সেই বরাদ্দের অর্থ তার একক ক্ষমতা বলে নির্ধারণ করতেন এই মাহাবুবুর রহমান। তিনি বাজেট বাড়িয়ে সংশ্লিষ্ট সার্কেল থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন গ্রহণ করতেন।আর কমিশন ছাড়া ক্রয়ের ভাউচার পাস করতে না। এ ছাড়া বিআরটিএর বেসরকারি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের বিল পাস করাতে ঘুষ নিতেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাজেট সংক্রান্ত কমিটি হওয়ায় তার ক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সরকার মাহাবুবুর রহমানের বাবা আব্দুর রাশেদ সরদার গত প্রায় ৩০ বছর আগে মারা যান। তিনি কৃষিকাজ করতেন। পৈতৃক টিনের বাড়ি ছিল। তা এখন ভেঙে একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।তারা দুই ভাই ও দুই বোন। তার ভাই পুলিশ কর্মকর্তা বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ঢাকা উদ্যানে মাহবুবুর রহমানের একটি আটতলা অট্টালিকা ব্লক-এ, রোড-২, বাড়ি নম্বর-২১ গড়েছেন। বাড়ির ছাদের ওপরেও ফ্ল্যাট করা হয়েছে। বাড়ির নিচতলায় দোকান ভাড়া দেওয়া আছে।বাড়িটির ম্যানেজার ও একাধিক ভাড়াটিয়া জানিয়েছেন, গত ৭ থেকে ৮ বছর আগে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ওই বাড়িতে তিনি কখনো বাস করেননি। বাড়িটির বাইরের দিকে নির্মাণ শেষ করা বা রং করা হয়নি। প্রত্যেক তলায় দুটি করে ইউনিট করা হয়েছে।

এছাড়া, গোপালগঞ্জের থানাপাড়া জামে মসজিদের পাশে ২০১৪ সালে ৬৫ লাখ টাকায় তার স্ত্রীর নামে সাড়ে ৬ শতাংশ জমি করা হয়। সেখানে ১৪ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। সম্প্রতি ৯ তলার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। ভবনের প্রতিি তলায় তিন ইউনিট। স্থানীয়রা এবং নির্মাণ শ্রমিকগন বাড়ির মালিক হিসেবে সরদার মাহাবুবুর রহমানের বলে জানেন এবং রাজধানীতে বিআরটিএ’র বড় কর্মকর্তা তিনি। ভবন নির্মাণে প্রতি বর্গফুটের খরচ প্রায় ২ হাজার ৩শ’ টাকা করা হচ্ছে। সরদার মাহাবুবুর রহমানের শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জ এলাকায়।

তার শ্বশুর প্রয়াত মোহাম্মদ আলী একজন পুলিশের কর্মকর্তা ছিলেন। নব্বই দশকে তিনি অবসরে যান। এরপর গোপালগঞ্জ শহরের মিয়াপাড়ায় জমি কিনে ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করতেন। তার সাত মেয়ে ও চার ছেলে। গোপালগঞ্জ শহরে তার মুদি ব্যবসা ছিল। তার মেয়ের জামাইয়ের টাকায় জমি কিনেই সেখানে বাড়ি করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

বিআরটিএ’র অপর সূত্র জানায়, সরদার মাহাবুবুর রহমান মিরপুরের উত্তর টোলারবাগের ১৯/সি-২ নম্বর ভবনে পরিবার নিয়ে থাকতেন। ভবনের পাশের ফ্ল্যাটের এক বাসিন্দা জানান, একই হোল্ডিংয়ে পাশাপাশি দুটি ছয়তলা ভবন। প্রথম ভবনের ৩/এ ফ্ল্যাটের মালিক মাহবুবুর রহমান। গত ২০১০ সালে ভবন নির্মাণের পর মাহবুবুর সরদার কিনে বসবাস করলে বেশ কয়েক বছর আগে সেখান থেকে উত্তরায় চলে যান। এরপর ধানমন্ডি এলাকায় অপর একটি ফ্ল্যাটে থাকছেন।

শুধু বাড়ি নির্মান আর ফ্ল্যাটই নয়, দামি প্রাইভেটকার রয়েছে। যা তার পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করছেন। তার গাড়ির কোন বেতনভুক্ত চালক নেই, সেলিম নামে সরকারি গাড়ির চালককে দিয়ে তার ব্যক্তিগত গাড়ি চালাচ্ছেন বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সরদার মাহাবুবুর রহমানের সম্পদের বিবরণীর বিষয়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, তার বৈধ আয়ের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য নেই। তিনি যে পর্যায়ের কর্মচারী, সেই পর্যায়ে তো প্রশ্নই ওঠে না এত সম্পদ করার। বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারী হিসেবে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে কোনো পর্যায়ের ব্যক্তির পক্ষে বৈধ উপায়ে বিশাল সম্পদ অর্জন করার সুযোগ নেই। যোগসাজশমূলক দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতা ব্যবহার করে সম্পদ গড়েছেন। তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। আর সম্পদের হিসাব নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক এমর্পোমেন্ট সরদার মাহাবুবুর রহমান এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি।‘আমার যা সম্পদ রয়েছে, তার সবই সরকারি ট্যাক্সফাইল এর ওঠানো আছে।’ সেই আয় থেকেই আমি সব করেছেন বলে জানান তিনি।

Tag :
About Author Information

GOURANGA BOSE

জনপ্রিয় সংবাদ

নেপথ্যে ১০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে হাইকোর্টের আপীল বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে ৫৪ জন কর্মচারি নিয়োগ, আরো প্রায় ৬০০জনের নিয়োগ চুড়ান্ত! 

বিআরটিএ’র দুর্নীতি: দেড় হাজার টাকা বেতনের সেই কর্মচারী এখন শতকোটি টাকার মালিক।

আপডেট সময় : ০১:৩৩:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র দেড় হাজার টাকা বেতনের সাবেক ক্যাশিয়ার সরদার মাহবুবুর রহমান এখন শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সহযোগিতায় রাজধানী ঢাকা, গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে একাধিক বহুতল ভবন ও ফ্ল্যাট বাড়ি সহ অঢেল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। তার সহকর্মীরা এখন বলছেন, বিআরইটিএ’র এই দুর্নীতিবাজ ও প্রভাবশালী কর্মকর্তা সরদার মাহবুবুর রহমানের হাতে জাদুর চেরাগ ছিল। শুধু তিনিই নন, তার অন্যতম সহযোগিদের মধ্যে বিআরটিএ’র উপ-পরিচাক (ইঞ্জিনিয়ার) মো. সানাউল হক ও মটরযান পরিদর্শক, সিলেট সার্কেট মো. দেলোয়ার হোসেন অন্যতম। তারা দু’জনই ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পালিয়ে যাওয়া মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিআরটিএর থেকে অবৈধ আয় যোগানের অন্যতম সহযোগি ছিলেন।

জানা গেছে, সরদার মাহাবুবুর রহমান ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআরটিএ) ক্যাশিয়ার হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক এমর্পোমেন্ট পদে কর্মরত। চাকরির শুরুতে তার বেতন ছিল সর্ব-সাকল্যে দেড় হাজার টাকা। কয়েক দাপে পদোন্নতি পেয়ে ২০২৩ সালে উপ-পরিচালক (ডিডি, অর্থ) হন তিনি। এখন তার বেতন প্রায় ৭০ হাজার টাকা। সরকারি এই কর্মকর্তা রাজধানী ঢাকায় একাধিক বহুতল ভবন ও ফ্ল্যাটের মালিক। আর ক্রয় করেছেন দামি গাড়ি। আবার গোপালগঞ্জ জেলা শহরে ১৪ তলার ভবন নির্মাণ করছেন।

অথচ তার সারা জীবনের চাকরি হতে আয়কৃত অর্থের পরিমাণ হিসাব করলে প্রায় ৯৫ লাখ টাকার মত হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার পরিচিতজনেরা জানান, বিএরটিএ’র এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার প্রয়াত কৃষক বাবার কৃর্ষি জমি রয়েছে। এখন অঢেল সম্পত্তি গড়ে তোলার খবর গ্রামের লোকজনের মাঝে নানা প্রশ্ন জেগেছে।

তারা বলছেন, সরদার মাহাবুবুর রহমানের কাছে কি জাদুর কাঠি আছে ?

নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার ডমুরিয়া গ্রামে মাহাবুবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি। তার গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার বাবার রেখে যাওয়া কৃর্ষি জমি এখনো অক্ষত রয়েছে। যা এখনো তাদের কোন শরীক বিক্রি করেননি। তার স্ত্রীর নাম মিন্নি বেগম। তিনি একজন গৃহিনী। তাদের তিন ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি তার শ্বশুরবাড়ি থেকেও কোন প্রকার আর্থিক সুবিধা পাননি। তাহলে এতো সম্পদের মালিক হলেন কিভাবে ? সেই প্রশ্নের জবাবে তার পরিচিতজনেরা বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পালিয়ে যাওয়া মন্ত্রী, এমপিদের সহযোগিতায় অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ আয়ের মাধ্যমেই তিনি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।

সূত্র জানায়, বিআরটিএ’র জেলা ও সার্কেল অফিসগুলোর জন্য বার্ষিক বরাদ্দ করা হয়। আর সেই বরাদ্দের অর্থ তার একক ক্ষমতা বলে নির্ধারণ করতেন এই মাহাবুবুর রহমান। তিনি বাজেট বাড়িয়ে সংশ্লিষ্ট সার্কেল থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন গ্রহণ করতেন।আর কমিশন ছাড়া ক্রয়ের ভাউচার পাস করতে না। এ ছাড়া বিআরটিএর বেসরকারি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের বিল পাস করাতে ঘুষ নিতেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাজেট সংক্রান্ত কমিটি হওয়ায় তার ক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সরকার মাহাবুবুর রহমানের বাবা আব্দুর রাশেদ সরদার গত প্রায় ৩০ বছর আগে মারা যান। তিনি কৃষিকাজ করতেন। পৈতৃক টিনের বাড়ি ছিল। তা এখন ভেঙে একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।তারা দুই ভাই ও দুই বোন। তার ভাই পুলিশ কর্মকর্তা বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ঢাকা উদ্যানে মাহবুবুর রহমানের একটি আটতলা অট্টালিকা ব্লক-এ, রোড-২, বাড়ি নম্বর-২১ গড়েছেন। বাড়ির ছাদের ওপরেও ফ্ল্যাট করা হয়েছে। বাড়ির নিচতলায় দোকান ভাড়া দেওয়া আছে।বাড়িটির ম্যানেজার ও একাধিক ভাড়াটিয়া জানিয়েছেন, গত ৭ থেকে ৮ বছর আগে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ওই বাড়িতে তিনি কখনো বাস করেননি। বাড়িটির বাইরের দিকে নির্মাণ শেষ করা বা রং করা হয়নি। প্রত্যেক তলায় দুটি করে ইউনিট করা হয়েছে।

এছাড়া, গোপালগঞ্জের থানাপাড়া জামে মসজিদের পাশে ২০১৪ সালে ৬৫ লাখ টাকায় তার স্ত্রীর নামে সাড়ে ৬ শতাংশ জমি করা হয়। সেখানে ১৪ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। সম্প্রতি ৯ তলার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। ভবনের প্রতিি তলায় তিন ইউনিট। স্থানীয়রা এবং নির্মাণ শ্রমিকগন বাড়ির মালিক হিসেবে সরদার মাহাবুবুর রহমানের বলে জানেন এবং রাজধানীতে বিআরটিএ’র বড় কর্মকর্তা তিনি। ভবন নির্মাণে প্রতি বর্গফুটের খরচ প্রায় ২ হাজার ৩শ’ টাকা করা হচ্ছে। সরদার মাহাবুবুর রহমানের শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জ এলাকায়।

তার শ্বশুর প্রয়াত মোহাম্মদ আলী একজন পুলিশের কর্মকর্তা ছিলেন। নব্বই দশকে তিনি অবসরে যান। এরপর গোপালগঞ্জ শহরের মিয়াপাড়ায় জমি কিনে ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করতেন। তার সাত মেয়ে ও চার ছেলে। গোপালগঞ্জ শহরে তার মুদি ব্যবসা ছিল। তার মেয়ের জামাইয়ের টাকায় জমি কিনেই সেখানে বাড়ি করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

বিআরটিএ’র অপর সূত্র জানায়, সরদার মাহাবুবুর রহমান মিরপুরের উত্তর টোলারবাগের ১৯/সি-২ নম্বর ভবনে পরিবার নিয়ে থাকতেন। ভবনের পাশের ফ্ল্যাটের এক বাসিন্দা জানান, একই হোল্ডিংয়ে পাশাপাশি দুটি ছয়তলা ভবন। প্রথম ভবনের ৩/এ ফ্ল্যাটের মালিক মাহবুবুর রহমান। গত ২০১০ সালে ভবন নির্মাণের পর মাহবুবুর সরদার কিনে বসবাস করলে বেশ কয়েক বছর আগে সেখান থেকে উত্তরায় চলে যান। এরপর ধানমন্ডি এলাকায় অপর একটি ফ্ল্যাটে থাকছেন।

শুধু বাড়ি নির্মান আর ফ্ল্যাটই নয়, দামি প্রাইভেটকার রয়েছে। যা তার পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করছেন। তার গাড়ির কোন বেতনভুক্ত চালক নেই, সেলিম নামে সরকারি গাড়ির চালককে দিয়ে তার ব্যক্তিগত গাড়ি চালাচ্ছেন বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সরদার মাহাবুবুর রহমানের সম্পদের বিবরণীর বিষয়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, তার বৈধ আয়ের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য নেই। তিনি যে পর্যায়ের কর্মচারী, সেই পর্যায়ে তো প্রশ্নই ওঠে না এত সম্পদ করার। বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারী হিসেবে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে কোনো পর্যায়ের ব্যক্তির পক্ষে বৈধ উপায়ে বিশাল সম্পদ অর্জন করার সুযোগ নেই। যোগসাজশমূলক দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতা ব্যবহার করে সম্পদ গড়েছেন। তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। আর সম্পদের হিসাব নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক এমর্পোমেন্ট সরদার মাহাবুবুর রহমান এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি।‘আমার যা সম্পদ রয়েছে, তার সবই সরকারি ট্যাক্সফাইল এর ওঠানো আছে।’ সেই আয় থেকেই আমি সব করেছেন বলে জানান তিনি।