ঢাকা ০৪:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
পূজা দেখতে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার এক গারো কিশোরী। নেপথ্যে ১০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে হাইকোর্টের আপীল বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে ৫৪ জন কর্মচারি নিয়োগ, আরো প্রায় ৬০০জনের নিয়োগ চুড়ান্ত!  রাজৈরের বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন কৃষক দল ও পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। ফরিদপুরের ট্রাক চাপায় এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।  মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তোফায়েল আহমেদ। জরুরি ভর্তি করা হল হাসপাতালে। বহু বছর সেনাবাহিনীর থাবায় মুখোশ উন্মোচন হলো মাদক ব্যবসায়ী কাশেম ওরফে ফেন্সি কাসেমের। শেরপুরে দলিত নারীদের মুষ্টির চালে “দুর্গা পূজা”। “গীতার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো” এ শ্লোগানে মুখরিত মাদারীপুর। মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজাচ্ছে দেবী দুর্গাকে।মন্ডপে মন্ডপে চলছে মা’কে বরণের প্রস্তুতি। এক রাতের রক্তগাথা: শাপলা চত্বরে নৃশংসতার ১২ বছর।

খুলনায় আরেক এরশাদ শিকদারের উত্থান।

খুলনা নগরীর পাওয়ার হাউস মোড়ে রেলওয়ের জমি দখল করে ১৯৯৫ সালে ‘সাদ মনি মার্কেট’ নির্মাণ করেছিলেন আলোচিত এরশাদ শিকদার। ২০০২ সালে তাঁর বিচার চলাকালে অবৈধ মার্কেটটি ভেঙে দেয় প্রশাসন। ২৩ বছর পর সেই জমিতে আবারও মার্কেট উঠছে।

শুধু ওই জায়গাই নয়; এরশাদ শিকদারের আলোচিত নদীবন্দর ঘাটও নতুন করে দখল হয়েছে। আশপাশের পুকুর, মাঠ, ফাঁকা জমিও হচ্ছে দখল। এরশাদ শিকদারের ফাঁসির পর দুদশক ঘাটের পাশের বড়বাজার এলাকায় স্বস্তি ছিল। তবে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পালাবদলের পর আবার চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে।

 

অভিযোগের সব তীর খুলনা সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা ফরিদ আহমেদের (ফরিদ মোল্লা) দিকে। তবে তিনি সব কিছু অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, ‘অন্যায়ভাবে এক টাকাও খাই না। আর রেলওয়ে কি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে? দেয়নি। তাহলে আমি দখলবাজ হলাম কীভাবে? সব প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র।’

নানা রকম অভিযোগ পেয়ে এ নেতার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে খুলনা মহানগর বিএনপি। দখল, চাঁদাবাজির অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ফরিদ মোল্লার এক মাসের আটকাদেশের অনুমতি চেয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।

কয়েক দিন খুলনার বড়বাজার, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ঘাট এলাকা ঘুরে তথ্য সংগ্রহের সময় অনেক মানুষ ফরিদ মোল্লার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। স্থানীয় থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

 

কে এই ফরিদ মোল্লা ?

ফরিদ মোল্লার রাজনৈতিক জীবন বিএনপি নেতা সাহারুজ্জামান মোর্ত্তুজার হাত ধরে শুরু। পরে ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতৃত্বে আসেন তিনি। ২০১৬ সালে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হন।

২০২২ সালে সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। কমিউনিস্ট নেতা কমরেড রতন সেন, নগরের ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি কেআই হাসান সোহেল হত্যাসহ ২১ মামলার আসামি ছিলেন ফরিদ মোল্লা। এর মধ্যে রতন সেন ও সোহেল হত্যা মামলা হয়েছিল বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে। পরে তাঁর বেশির ভাগ মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা হয়েছে।

 

ডাক্তারবাড়ি ও স্কুলের সীমানা দখল করে মার্কেট

রেলওয়ের চিকিৎসকদের বাসভবন ছিল রেলওয়ে মার্কেটের ভেতরে। স্থানীয়দের কাছে সেটি ‘ডাক্তারবাড়ি’ নামে পরিচিত। এর পাশেই রেলওয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্থানীয় কাউন্সিলর শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন ভবনটি ভাঙার উদ্যোগ নিলে স্থানীয়দের বাধায় ব্যর্থ হন।

 

গণঅভ্যুত্থানের পর কয়েক দফায় ভবনটির ছাদসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলা হয়। গত ৯ মার্চ ভবনের বাকি অংশ ভেঙে রাতারাতি সেখানে ১৪টি দোকান নির্মাণ করা হয়। দোকান নির্মাণের জন্য বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভেঙে বেশ কিছু জায়গা নিয়ে নতুন প্রাচীর করা হয়েছে।

সরেজমিন প্রাচীর ভাঙার চিহ্ন পাওয়া গেছে। দোকানগুলো ফরিদ মোল্লার তত্ত্বাবধানে নির্মিত বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান। তবে কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। রেলওয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ সারাক্ষণ বার্তার সাথে প্রথমে কথা বলতে চাননি। পরে বলেন, ‘কারা ভেঙেছে, জানি না। বিষয়টি নিয়ে আমরা থানায় অভিযোগ করেছি।’

ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘ডাক্তারবাড়ি নিয়ে আশিক ও গোবিন্দ নামে দু’ব্যক্তির সঙ্গে রেলওয়ের মামলা চলছে। তারাই হয়তো দোকান করেছে। এর সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই।’

 

ঈদগাহের জমিতে মার্কেট

নগরের ৬ নম্বর ঘাট এলাকার খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) পার্কের পাশেই বায়তুন নাজাত জামে মসজিদ। ২০২১ সালে মসজিদের সামনে ফাঁকা অংশে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় মুসল্লিরা বিষয়টি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলকে জানান। পরে শেখ সোহেলের নির্দেশে স্থাপনা ভেঙে দিয়ে ওই জমিতে ঈদগাহের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বালু ভরাট করে ঈদগাহ নির্মাণের প্রস্তুতি চলছিল।

 

অভ্যুত্থানের পর ওই জমিতে মার্কেট নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। গত জুনে সেখানে ১৬টি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। সেখানে গিয়ে ঘরগুলো ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যায়। একটি ঘরে ‘ইজারা গ্রহীতা তানভীর আহমেদ বাঁধন’ লেখা একটি সাইনবোর্ড ঝুলছিল। বাঁধন ফরিদ মোল্লার ছেলে।

 

স্থানীয়রা জানান, মার্কেট নির্মাণে বাধা দিলে ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে গালিগালাজ করেন ফরিদ মোল্লা। মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. আব্দুল করিমের কাছে জানতে চাইলে বেশ কিছু সময় নীরব থেকে বলেন, ‘আমাকে ক্ষমা করে দেন। কিছু বলতে পারব না।’

ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘ওইটা কোনোদিনই ঈদগাহ ছিল না। অল্প কিছু জমি আমার ছেলের নামে, বাকিটা অন্যদের নামে নেওয়া।’

 

ছাড় পাননি বিএনপি নেতাও

নগরের পাওয়ার হাউস মোড়ের মার্কেট নির্মাণকাজের শুরুটাও ছিল বেশ নাটকীয়। প্রথমে বিএনপি নেতা ফরিদ মোল্লা ও নাজির উদ্দিন নান্নুর শুভেচ্ছা বিলবোর্ড দিয়ে সামনের অংশ ঢেকে ফেলা হয়। এরপর পেছনে শুরু হয় নির্মাণকাজ। রোববার দুপুরে ওই স্থানে গিয়ে দেখা যায়, কংক্রিটের কলাম নির্মাণের জন্য রড বাঁধা। স্থানীয় এক চা দোকানি, দুই রেস্তুরাঁকর্মী ও দুই টিন ব্যবসায়ী জানান, একপাশে ফরিদ মোল্লা মার্কেট বানাচ্ছে, আরেক পাশে নান্নু। বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন কাজ বন্ধ আছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই জমি ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজির উদ্দিন আহমেদ নান্নুর নামে ইজারা নেওয়া ছিল। ২০১৮ সেখানে মার্কেট করতে গেলে আওয়ামী লীগের লোকজন বাধা দেন। গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি মার্কেট তৈরি করতে গেলে বাধা দেন ফরিদ মোল্লা। গত মার্চে অর্ধেক জমি ফরিদ মোল্লাকে দিয়ে বাকি অর্ধেক দখলে রাখেন তিনি।

 

পুরাতন রেলস্টেশনের সামনে সেনাবাহিনীর মালপত্র নামানোর জায়গাটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। ওই জমিও ইজারা নেন নান্নু। গত এপ্রিলে ওই জমিতেও মার্কেট নির্মাণ করেন ফরিদ মোল্লা। এই দুই কাজে তার সহযোগী ছিলেন থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি। দোকান নির্মাণ বাবদ নান্নুকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তবে তা আর দেওয়া হয়নি।

 

সোমবার গিয়ে সেখানে ১২টি নতুন দোকান দেখা গেছে। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা দোকানগুলো ফরিদ মোল্লা ও শফির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।

 

স্ট্রোকের কারণে নাজির উদ্দিন আহমেদ নান্নু শয্যাশায়ী। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে পরিবারের সম্মতি মেলেনি। পরিবারের এক সদস্য বলেন, বিষয়টি দলের নেতাদের জানিয়েও ফল পাওয়া যায়নি। নেতাদের কাছ থেকে আঘাত পেয়ে তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

জানতে চাইলে ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘ওই জায়গা কি আমার নামে? আরেকজনের জায়গায় আমি মার্কেট করব কীভাবে? নান্নু ভাইয়ের এক ছেলে মাদক সেবন করে, ওকে মাঝে একটা চড় দিয়েছি। ও আজেবাজে কথা বলতে পারে।’

ফরিদ মোল্লার সঙ্গে কথা বলার ৩০ মিনিট পর নাজির উদ্দিন নান্নুর পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবেদককে আবার ফোন দিয়ে বলা হয়, ‘এসব বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। কী হচ্ছে, আমরা কিছু জানি না। আমাদের কারও নাম পত্রিকায় দেবেন না।’

 

দখলের আরও অভিযোগ

অভ্যুত্থানের কয়েক দিন পর নগরীর ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট দখল করেন ফরিদ মোল্লা। ঘাটটির ইজারাদার ছিলেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি চৌধুরী মিনহাজ উজ জামান সজল। গত বছরের ৯ আগস্ট সজলের সঙ্গে চুক্তি করে ঘাট পরিচালনা শুরু করেন ফরিদ মোল্লা। সুবিধা করতে না পেরে ঘাট ছেড়ে দেন তিনি। নতুন অর্থবছরে ঘাট আরেকজনের কাছে ইজারা দেয় বিআইডব্লিউটিএ।

 

শনিবার ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মামুর আস্তানার পাশে ভৈরবী নামে রেস্তুরাঁ তৈরি করেছেন ফরিদ মোল্লা। জায়গাটি রেলওয়ে থেকে তাঁর স্ত্রী নামে ইজারা নেওয়া। এর পেছনে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে মেলা বসিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়। রেলওয়ে কলোনির ভেতরে বেশকিছু পুকুর দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। পুকুরগুলো ফরিদ মোল্লার লোকজন দখল করেছেন বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

 

স্টেশন রোডে মশিউর রহমান মার্কেটের পাশে রেলওয়ের গাড়িচালকের ভবন ভেঙে সেখানেও বেশকিছু দোকান নির্মাণ করে বিক্রি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরিদ মোল্লার অনুসারী শফিকুল ইসলাম শফির নাম এসেছে। হকার্স মার্কেটে দোকান দখলেরও অভিযোগ ফরিদ মোল্লার বিরুদ্ধে।

 

এ ছাড়া নিক্সন মার্কেটে দোকান ও অফিস; শিল্প ব্যাংক ভবনের পাশে রেলওয়ের জমিতে অফিস নির্মাণ করেছেন ফরিদ মোল্লা। তাঁর নিজের বাসাও রেলওয়ের জমিতে। তবে জমিটি রেলওয়ের কাছ থেকে বৈধভাবে ইজারা নেওয়া বলে জানান তিনি।

 

ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের লোকজন পালিয়ে গেলে আমার এক আত্মীয় ঘাটটি চালায়। সে আমার নাম ব্যবহার করে। আমি ঘাট নিইনি। ভৈরবী আমার স্ত্রীর নামে ইজারা নেওয়া। পেছনে মেলার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’ তিনি বলেন, ‘বৈধভাবে জমি ইজারা নিয়ে দোকান বানানো তো অপরাধ না। আর বাড়ির জমি আমার শ্বশুর ইজারা নিয়েছেন আরও কয়েক যুগ আগে। ’

সারাক্ষণ বার্তাকে যা বলছে রেলওয়ে,

রেলওয়ের খুলনার ফিল্ড কানুনগো  মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘ভৈরবীর ৮০০ বর্গফুট ও পাশে ৮০০ বর্গফুট জায়গা ফরিদ মোল্লা ও শফিকুল ইসলাম ইজারা নিয়েছেন। ৬ নম্বর ঘাট ও ডাক্তার বাড়ির মার্কেট অবৈধভাবে নির্মাণ করা। যে কোনো সময় আমরা সেগুলো ভেঙে দেব।’

সহিদুজ্জামান বলেন, ‘ডাক্তার বাড়ির বিষয়ে আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পাওয়ার হাউজ মোড় ও পুরাতন রেলস্টেশনের সামনের জমির ইজারা গ্রহীতা নাজির উদ্দিন নান্নু। কীভাবে সেখানে দোকান নির্মাণ হলো খোঁজ নিয়ে দেখব।’

 

নেতাদের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া

একের পর এক অভিযোগ উঠলেও ফরিদ মোল্লার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফরিদ মোল্লা খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিনের প্রধান অনুসারী। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএনপি।

শফিকুল আলম তুহিন বলেন, ‘ফরিদ মোল্লা বিএনপির দুঃসময়ের সঙ্গী। ঢালাও অভিযোগ করলেই কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। কিছু তথ্য পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদনের পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

 

আটকাদেশের আবেদন

অভ্যুত্থানের পর থেকে আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে ফরিদ মোল্লার বিরুদ্ধে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা ভুক্তভোগী হন বেশি। অবশ্য তারা কেউই লিখিত অভিযোগ করেননি। কয়েক মাস আগে বড় বাজার ও সোনাপট্টির ব্যবসায়ীদের একটি অংশ চাঁদাবাজির বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এরপরই পুলিশ তৎপর হয়।

 

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ‘ফরিদ মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা ও জিডি না থাকায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে এক মাসের আটকাদেশ চেয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে।’

Tag :
About Author Information

GOURANGA BOSE

পূজা দেখতে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার এক গারো কিশোরী।

খুলনায় আরেক এরশাদ শিকদারের উত্থান।

আপডেট সময় : ১২:১৮:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

খুলনা নগরীর পাওয়ার হাউস মোড়ে রেলওয়ের জমি দখল করে ১৯৯৫ সালে ‘সাদ মনি মার্কেট’ নির্মাণ করেছিলেন আলোচিত এরশাদ শিকদার। ২০০২ সালে তাঁর বিচার চলাকালে অবৈধ মার্কেটটি ভেঙে দেয় প্রশাসন। ২৩ বছর পর সেই জমিতে আবারও মার্কেট উঠছে।

শুধু ওই জায়গাই নয়; এরশাদ শিকদারের আলোচিত নদীবন্দর ঘাটও নতুন করে দখল হয়েছে। আশপাশের পুকুর, মাঠ, ফাঁকা জমিও হচ্ছে দখল। এরশাদ শিকদারের ফাঁসির পর দুদশক ঘাটের পাশের বড়বাজার এলাকায় স্বস্তি ছিল। তবে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পালাবদলের পর আবার চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে।

 

অভিযোগের সব তীর খুলনা সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা ফরিদ আহমেদের (ফরিদ মোল্লা) দিকে। তবে তিনি সব কিছু অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, ‘অন্যায়ভাবে এক টাকাও খাই না। আর রেলওয়ে কি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে? দেয়নি। তাহলে আমি দখলবাজ হলাম কীভাবে? সব প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র।’

নানা রকম অভিযোগ পেয়ে এ নেতার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে খুলনা মহানগর বিএনপি। দখল, চাঁদাবাজির অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ফরিদ মোল্লার এক মাসের আটকাদেশের অনুমতি চেয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।

কয়েক দিন খুলনার বড়বাজার, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ঘাট এলাকা ঘুরে তথ্য সংগ্রহের সময় অনেক মানুষ ফরিদ মোল্লার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। স্থানীয় থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

 

কে এই ফরিদ মোল্লা ?

ফরিদ মোল্লার রাজনৈতিক জীবন বিএনপি নেতা সাহারুজ্জামান মোর্ত্তুজার হাত ধরে শুরু। পরে ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতৃত্বে আসেন তিনি। ২০১৬ সালে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হন।

২০২২ সালে সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। কমিউনিস্ট নেতা কমরেড রতন সেন, নগরের ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি কেআই হাসান সোহেল হত্যাসহ ২১ মামলার আসামি ছিলেন ফরিদ মোল্লা। এর মধ্যে রতন সেন ও সোহেল হত্যা মামলা হয়েছিল বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে। পরে তাঁর বেশির ভাগ মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা হয়েছে।

 

ডাক্তারবাড়ি ও স্কুলের সীমানা দখল করে মার্কেট

রেলওয়ের চিকিৎসকদের বাসভবন ছিল রেলওয়ে মার্কেটের ভেতরে। স্থানীয়দের কাছে সেটি ‘ডাক্তারবাড়ি’ নামে পরিচিত। এর পাশেই রেলওয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্থানীয় কাউন্সিলর শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন ভবনটি ভাঙার উদ্যোগ নিলে স্থানীয়দের বাধায় ব্যর্থ হন।

 

গণঅভ্যুত্থানের পর কয়েক দফায় ভবনটির ছাদসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলা হয়। গত ৯ মার্চ ভবনের বাকি অংশ ভেঙে রাতারাতি সেখানে ১৪টি দোকান নির্মাণ করা হয়। দোকান নির্মাণের জন্য বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভেঙে বেশ কিছু জায়গা নিয়ে নতুন প্রাচীর করা হয়েছে।

সরেজমিন প্রাচীর ভাঙার চিহ্ন পাওয়া গেছে। দোকানগুলো ফরিদ মোল্লার তত্ত্বাবধানে নির্মিত বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান। তবে কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। রেলওয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ সারাক্ষণ বার্তার সাথে প্রথমে কথা বলতে চাননি। পরে বলেন, ‘কারা ভেঙেছে, জানি না। বিষয়টি নিয়ে আমরা থানায় অভিযোগ করেছি।’

ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘ডাক্তারবাড়ি নিয়ে আশিক ও গোবিন্দ নামে দু’ব্যক্তির সঙ্গে রেলওয়ের মামলা চলছে। তারাই হয়তো দোকান করেছে। এর সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই।’

 

ঈদগাহের জমিতে মার্কেট

নগরের ৬ নম্বর ঘাট এলাকার খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) পার্কের পাশেই বায়তুন নাজাত জামে মসজিদ। ২০২১ সালে মসজিদের সামনে ফাঁকা অংশে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় মুসল্লিরা বিষয়টি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলকে জানান। পরে শেখ সোহেলের নির্দেশে স্থাপনা ভেঙে দিয়ে ওই জমিতে ঈদগাহের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বালু ভরাট করে ঈদগাহ নির্মাণের প্রস্তুতি চলছিল।

 

অভ্যুত্থানের পর ওই জমিতে মার্কেট নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। গত জুনে সেখানে ১৬টি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। সেখানে গিয়ে ঘরগুলো ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যায়। একটি ঘরে ‘ইজারা গ্রহীতা তানভীর আহমেদ বাঁধন’ লেখা একটি সাইনবোর্ড ঝুলছিল। বাঁধন ফরিদ মোল্লার ছেলে।

 

স্থানীয়রা জানান, মার্কেট নির্মাণে বাধা দিলে ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে গালিগালাজ করেন ফরিদ মোল্লা। মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. আব্দুল করিমের কাছে জানতে চাইলে বেশ কিছু সময় নীরব থেকে বলেন, ‘আমাকে ক্ষমা করে দেন। কিছু বলতে পারব না।’

ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘ওইটা কোনোদিনই ঈদগাহ ছিল না। অল্প কিছু জমি আমার ছেলের নামে, বাকিটা অন্যদের নামে নেওয়া।’

 

ছাড় পাননি বিএনপি নেতাও

নগরের পাওয়ার হাউস মোড়ের মার্কেট নির্মাণকাজের শুরুটাও ছিল বেশ নাটকীয়। প্রথমে বিএনপি নেতা ফরিদ মোল্লা ও নাজির উদ্দিন নান্নুর শুভেচ্ছা বিলবোর্ড দিয়ে সামনের অংশ ঢেকে ফেলা হয়। এরপর পেছনে শুরু হয় নির্মাণকাজ। রোববার দুপুরে ওই স্থানে গিয়ে দেখা যায়, কংক্রিটের কলাম নির্মাণের জন্য রড বাঁধা। স্থানীয় এক চা দোকানি, দুই রেস্তুরাঁকর্মী ও দুই টিন ব্যবসায়ী জানান, একপাশে ফরিদ মোল্লা মার্কেট বানাচ্ছে, আরেক পাশে নান্নু। বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন কাজ বন্ধ আছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই জমি ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজির উদ্দিন আহমেদ নান্নুর নামে ইজারা নেওয়া ছিল। ২০১৮ সেখানে মার্কেট করতে গেলে আওয়ামী লীগের লোকজন বাধা দেন। গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি মার্কেট তৈরি করতে গেলে বাধা দেন ফরিদ মোল্লা। গত মার্চে অর্ধেক জমি ফরিদ মোল্লাকে দিয়ে বাকি অর্ধেক দখলে রাখেন তিনি।

 

পুরাতন রেলস্টেশনের সামনে সেনাবাহিনীর মালপত্র নামানোর জায়গাটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। ওই জমিও ইজারা নেন নান্নু। গত এপ্রিলে ওই জমিতেও মার্কেট নির্মাণ করেন ফরিদ মোল্লা। এই দুই কাজে তার সহযোগী ছিলেন থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি। দোকান নির্মাণ বাবদ নান্নুকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তবে তা আর দেওয়া হয়নি।

 

সোমবার গিয়ে সেখানে ১২টি নতুন দোকান দেখা গেছে। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা দোকানগুলো ফরিদ মোল্লা ও শফির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।

 

স্ট্রোকের কারণে নাজির উদ্দিন আহমেদ নান্নু শয্যাশায়ী। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে পরিবারের সম্মতি মেলেনি। পরিবারের এক সদস্য বলেন, বিষয়টি দলের নেতাদের জানিয়েও ফল পাওয়া যায়নি। নেতাদের কাছ থেকে আঘাত পেয়ে তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

জানতে চাইলে ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘ওই জায়গা কি আমার নামে? আরেকজনের জায়গায় আমি মার্কেট করব কীভাবে? নান্নু ভাইয়ের এক ছেলে মাদক সেবন করে, ওকে মাঝে একটা চড় দিয়েছি। ও আজেবাজে কথা বলতে পারে।’

ফরিদ মোল্লার সঙ্গে কথা বলার ৩০ মিনিট পর নাজির উদ্দিন নান্নুর পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবেদককে আবার ফোন দিয়ে বলা হয়, ‘এসব বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। কী হচ্ছে, আমরা কিছু জানি না। আমাদের কারও নাম পত্রিকায় দেবেন না।’

 

দখলের আরও অভিযোগ

অভ্যুত্থানের কয়েক দিন পর নগরীর ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট দখল করেন ফরিদ মোল্লা। ঘাটটির ইজারাদার ছিলেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি চৌধুরী মিনহাজ উজ জামান সজল। গত বছরের ৯ আগস্ট সজলের সঙ্গে চুক্তি করে ঘাট পরিচালনা শুরু করেন ফরিদ মোল্লা। সুবিধা করতে না পেরে ঘাট ছেড়ে দেন তিনি। নতুন অর্থবছরে ঘাট আরেকজনের কাছে ইজারা দেয় বিআইডব্লিউটিএ।

 

শনিবার ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মামুর আস্তানার পাশে ভৈরবী নামে রেস্তুরাঁ তৈরি করেছেন ফরিদ মোল্লা। জায়গাটি রেলওয়ে থেকে তাঁর স্ত্রী নামে ইজারা নেওয়া। এর পেছনে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে মেলা বসিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়। রেলওয়ে কলোনির ভেতরে বেশকিছু পুকুর দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। পুকুরগুলো ফরিদ মোল্লার লোকজন দখল করেছেন বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

 

স্টেশন রোডে মশিউর রহমান মার্কেটের পাশে রেলওয়ের গাড়িচালকের ভবন ভেঙে সেখানেও বেশকিছু দোকান নির্মাণ করে বিক্রি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরিদ মোল্লার অনুসারী শফিকুল ইসলাম শফির নাম এসেছে। হকার্স মার্কেটে দোকান দখলেরও অভিযোগ ফরিদ মোল্লার বিরুদ্ধে।

 

এ ছাড়া নিক্সন মার্কেটে দোকান ও অফিস; শিল্প ব্যাংক ভবনের পাশে রেলওয়ের জমিতে অফিস নির্মাণ করেছেন ফরিদ মোল্লা। তাঁর নিজের বাসাও রেলওয়ের জমিতে। তবে জমিটি রেলওয়ের কাছ থেকে বৈধভাবে ইজারা নেওয়া বলে জানান তিনি।

 

ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের লোকজন পালিয়ে গেলে আমার এক আত্মীয় ঘাটটি চালায়। সে আমার নাম ব্যবহার করে। আমি ঘাট নিইনি। ভৈরবী আমার স্ত্রীর নামে ইজারা নেওয়া। পেছনে মেলার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’ তিনি বলেন, ‘বৈধভাবে জমি ইজারা নিয়ে দোকান বানানো তো অপরাধ না। আর বাড়ির জমি আমার শ্বশুর ইজারা নিয়েছেন আরও কয়েক যুগ আগে। ’

সারাক্ষণ বার্তাকে যা বলছে রেলওয়ে,

রেলওয়ের খুলনার ফিল্ড কানুনগো  মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘ভৈরবীর ৮০০ বর্গফুট ও পাশে ৮০০ বর্গফুট জায়গা ফরিদ মোল্লা ও শফিকুল ইসলাম ইজারা নিয়েছেন। ৬ নম্বর ঘাট ও ডাক্তার বাড়ির মার্কেট অবৈধভাবে নির্মাণ করা। যে কোনো সময় আমরা সেগুলো ভেঙে দেব।’

সহিদুজ্জামান বলেন, ‘ডাক্তার বাড়ির বিষয়ে আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পাওয়ার হাউজ মোড় ও পুরাতন রেলস্টেশনের সামনের জমির ইজারা গ্রহীতা নাজির উদ্দিন নান্নু। কীভাবে সেখানে দোকান নির্মাণ হলো খোঁজ নিয়ে দেখব।’

 

নেতাদের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া

একের পর এক অভিযোগ উঠলেও ফরিদ মোল্লার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফরিদ মোল্লা খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিনের প্রধান অনুসারী। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএনপি।

শফিকুল আলম তুহিন বলেন, ‘ফরিদ মোল্লা বিএনপির দুঃসময়ের সঙ্গী। ঢালাও অভিযোগ করলেই কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। কিছু তথ্য পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদনের পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

 

আটকাদেশের আবেদন

অভ্যুত্থানের পর থেকে আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে ফরিদ মোল্লার বিরুদ্ধে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা ভুক্তভোগী হন বেশি। অবশ্য তারা কেউই লিখিত অভিযোগ করেননি। কয়েক মাস আগে বড় বাজার ও সোনাপট্টির ব্যবসায়ীদের একটি অংশ চাঁদাবাজির বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এরপরই পুলিশ তৎপর হয়।

 

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ‘ফরিদ মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা ও জিডি না থাকায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে এক মাসের আটকাদেশ চেয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে।’