ঢাকা ০৪:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
আইন মন্ত্রণালয় আগামী ৬ মাসে ২০ হাজার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে সামাজিক ব্যবসা পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পারে : প্রধান উপদেষ্টা রাজৈরে জামায়াতের উপজেলা কার্যালয় ও ইসলামি পাঠাগারের শুভ উদ্ধোধন ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন ও দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত হিসেবে ঘোষণা জার্মানি বাংলাদেশের উন্নয়নের নির্ভরযোগ্য অংশীদার: প্রধান উপদেষ্টা দেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর নির্দেশ চুয়ান্ন বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ হয়নি -ফারুক ই আজম,বীর প্রতীক উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গণঅভ্যুত্থান দিবসসমূহ উদযাপনে ৩৬ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু আগামীকাল বেইলি রোডের ক্ষত শুকায়নি, সেই খালেকুজ্জামান পেলেন ‘দামি’ চেয়ার

বেইলি রোডের ক্ষত শুকায়নি, সেই খালেকুজ্জামান পেলেন ‘দামি’ চেয়ার

  • সারাক্ষণ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৫৯:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • ৯৬ জন সংবাদটি পড়েছেন

রাজধানীর বেইলি রোডে ২০২৪ সালের শুরুতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে কঙ্কালসার হয়ে যায় গ্রিন কোজি কটেজ। সাততলার এই বাণিজ্যিক ভবনে ওই বছর প্রাণ হারিয়েছিল ৪৬ জন; দগ্ধ ও আহত হয় আরও ১৩ জন।

ঘটনার রেশ কাটার আগেই রাজধানীজুড়ে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোয় সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সিটি করপোরেশন। গ্রেপ্তার করা হয় আট শতাধিক মানুষকে।

জনমনে প্রশ্ন ওঠে, গ্রিন কোজি কটেজে থাকা রেস্তোরাঁগুলোতে প্রতিদিন যেখানে অসংখ্য মানুষ ভিড় করত, সেই ভবনের নকশার এমন করুণ দশা কেন? ভবনটিতে কোনো জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা ছিল না কেন? ভবনে চলাচলের সিঁড়িটাই-বা এত সরু কেন? জরুরি নির্গমন পথ থাকলে বা সিঁড়িটা প্রশস্ত হলে তো এত প্রাণহানি হতো না।

কার অঙ্গুলি হেলনে ভবনটির নকশার অনুমোদন পায়? পত্রপত্রিকা মারফত খবর আসে, গ্রিন কোজি কটেজের নকশার অনুমোদন দিয়েছিলেন রাজউক কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী। ২০১১ সালে রাজউকের অথরাইজড অফিসার হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি ভবনটির অনুমোদন দেন।

সে সময় খালেকুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে ব্যাপক শোরগোল চললেও একপর্যায়ে থেমে যায়। দুই বছরের বেশি সময় পর আজ আবার তিনি উঠে এসেছেন আলোচনায়। গ্রিন কোজি কটেজের নকশা অনুমোদনে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া সেই খালেকুজ্জামান চৌধুরী পেয়েছেন ভালো পদায়ন।

আজ মঙ্গলবার গণপূর্ত অধিদপ্তরের ‘দামি চেয়ার’ হিসেবে পরিচিত মেট্রোপলিটন জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে তাঁকে দায়িত্ব দিয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।

চাকরিজীবনে বছর পাঁচেক আগে বিভাগীয় মামলায় দণ্ড পাওয়া এ প্রকৌশলীকে গুরুত্বপূর্ণ এই চেয়ারে দায়িত্ব দেওয়ায় খোদ পূর্ত ভবনের প্রকৌশলীদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খালেকুজ্জামান চৌধুরী আজ রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার বিষয়ে যেসব অভিযোগ ছিল, তা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আর বেইলি রোডের ঘটনায় ভবন অনুমোদন ও নির্মাণে কোনো অনিয়ম করিনি।’

রাজউক সূত্রে জানা যায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে ২০১১ সালে এই প্রকৌশলী অথরাইজড অফিসার প্রেষণে রাজউকে আসেন। সে সময় বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের নকশার অনুমোদন দেন তিনি। জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা না থাকা, সরু একটিমাত্র সিঁড়িসহ নানা অনিয়মে পূর্ণ ছিল নকশাটি।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গণপূর্ত ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা খালেকুজ্জামানের চাকরিজীবনের বড় সময় কেটেছে অস্ট্রেলিয়ায়। স্ত্রী-সন্তান অস্ট্রেলিয়ায় থাকায় সেখানে তিনি বহুবার যাতায়াত করেন। তবে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে উচ্চতর শিক্ষাছুটির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর লঘুদণ্ড দেয় পূর্ত মন্ত্রণালয়। তাঁর বেতন স্কেলও এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।

এরপর নিজ জেলার বাসিন্দা ফরিদপুরের প্রভাবশালী সাবেক দুদক কমিশনার মোজ্জাম্মেল হক খানের মাধ্যমে জোরালো তদবির শুরু করেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী। একপর্যায়ে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা সাবেক পূর্তসচিব শহীদ উল্লা খন্দকারের আমলে একটি আবেদন করে তিনি। তৎকালীন সচিব এ বিষয়ে জনপ্রশাসনের মতামত চান। জনপ্রশাসন তাদের মতামতে তাঁর জ্যেষ্ঠতা স্থগিত রাখার সুপারিশ করে।

কিন্তু দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খানের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার তাঁকে পদোন্নতি দেন। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্র খালেকুজ্জামান চৌধুরীকে সর্বশেষ গোপালগঞ্জ জোন থেকে গণপূর্তের মেট্রোপলিটন জোনে আনা হলো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sanjib Das

জনপ্রিয় সংবাদ

আইন মন্ত্রণালয় আগামী ৬ মাসে ২০ হাজার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে

বেইলি রোডের ক্ষত শুকায়নি, সেই খালেকুজ্জামান পেলেন ‘দামি’ চেয়ার

আপডেট সময় : ১১:৫৯:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

রাজধানীর বেইলি রোডে ২০২৪ সালের শুরুতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে কঙ্কালসার হয়ে যায় গ্রিন কোজি কটেজ। সাততলার এই বাণিজ্যিক ভবনে ওই বছর প্রাণ হারিয়েছিল ৪৬ জন; দগ্ধ ও আহত হয় আরও ১৩ জন।

ঘটনার রেশ কাটার আগেই রাজধানীজুড়ে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোয় সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সিটি করপোরেশন। গ্রেপ্তার করা হয় আট শতাধিক মানুষকে।

জনমনে প্রশ্ন ওঠে, গ্রিন কোজি কটেজে থাকা রেস্তোরাঁগুলোতে প্রতিদিন যেখানে অসংখ্য মানুষ ভিড় করত, সেই ভবনের নকশার এমন করুণ দশা কেন? ভবনটিতে কোনো জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা ছিল না কেন? ভবনে চলাচলের সিঁড়িটাই-বা এত সরু কেন? জরুরি নির্গমন পথ থাকলে বা সিঁড়িটা প্রশস্ত হলে তো এত প্রাণহানি হতো না।

কার অঙ্গুলি হেলনে ভবনটির নকশার অনুমোদন পায়? পত্রপত্রিকা মারফত খবর আসে, গ্রিন কোজি কটেজের নকশার অনুমোদন দিয়েছিলেন রাজউক কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী। ২০১১ সালে রাজউকের অথরাইজড অফিসার হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি ভবনটির অনুমোদন দেন।

সে সময় খালেকুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে ব্যাপক শোরগোল চললেও একপর্যায়ে থেমে যায়। দুই বছরের বেশি সময় পর আজ আবার তিনি উঠে এসেছেন আলোচনায়। গ্রিন কোজি কটেজের নকশা অনুমোদনে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া সেই খালেকুজ্জামান চৌধুরী পেয়েছেন ভালো পদায়ন।

আজ মঙ্গলবার গণপূর্ত অধিদপ্তরের ‘দামি চেয়ার’ হিসেবে পরিচিত মেট্রোপলিটন জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে তাঁকে দায়িত্ব দিয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।

চাকরিজীবনে বছর পাঁচেক আগে বিভাগীয় মামলায় দণ্ড পাওয়া এ প্রকৌশলীকে গুরুত্বপূর্ণ এই চেয়ারে দায়িত্ব দেওয়ায় খোদ পূর্ত ভবনের প্রকৌশলীদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খালেকুজ্জামান চৌধুরী আজ রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার বিষয়ে যেসব অভিযোগ ছিল, তা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আর বেইলি রোডের ঘটনায় ভবন অনুমোদন ও নির্মাণে কোনো অনিয়ম করিনি।’

রাজউক সূত্রে জানা যায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে ২০১১ সালে এই প্রকৌশলী অথরাইজড অফিসার প্রেষণে রাজউকে আসেন। সে সময় বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের নকশার অনুমোদন দেন তিনি। জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা না থাকা, সরু একটিমাত্র সিঁড়িসহ নানা অনিয়মে পূর্ণ ছিল নকশাটি।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গণপূর্ত ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা খালেকুজ্জামানের চাকরিজীবনের বড় সময় কেটেছে অস্ট্রেলিয়ায়। স্ত্রী-সন্তান অস্ট্রেলিয়ায় থাকায় সেখানে তিনি বহুবার যাতায়াত করেন। তবে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে উচ্চতর শিক্ষাছুটির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর লঘুদণ্ড দেয় পূর্ত মন্ত্রণালয়। তাঁর বেতন স্কেলও এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।

এরপর নিজ জেলার বাসিন্দা ফরিদপুরের প্রভাবশালী সাবেক দুদক কমিশনার মোজ্জাম্মেল হক খানের মাধ্যমে জোরালো তদবির শুরু করেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী। একপর্যায়ে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা সাবেক পূর্তসচিব শহীদ উল্লা খন্দকারের আমলে একটি আবেদন করে তিনি। তৎকালীন সচিব এ বিষয়ে জনপ্রশাসনের মতামত চান। জনপ্রশাসন তাদের মতামতে তাঁর জ্যেষ্ঠতা স্থগিত রাখার সুপারিশ করে।

কিন্তু দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খানের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার তাঁকে পদোন্নতি দেন। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্র খালেকুজ্জামান চৌধুরীকে সর্বশেষ গোপালগঞ্জ জোন থেকে গণপূর্তের মেট্রোপলিটন জোনে আনা হলো।