ঢাকা ০১:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
আইন মন্ত্রণালয় আগামী ৬ মাসে ২০ হাজার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে সামাজিক ব্যবসা পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পারে : প্রধান উপদেষ্টা রাজৈরে জামায়াতের উপজেলা কার্যালয় ও ইসলামি পাঠাগারের শুভ উদ্ধোধন ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন ও দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত হিসেবে ঘোষণা জার্মানি বাংলাদেশের উন্নয়নের নির্ভরযোগ্য অংশীদার: প্রধান উপদেষ্টা দেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর নির্দেশ চুয়ান্ন বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ হয়নি -ফারুক ই আজম,বীর প্রতীক উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গণঅভ্যুত্থান দিবসসমূহ উদযাপনে ৩৬ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু আগামীকাল বেইলি রোডের ক্ষত শুকায়নি, সেই খালেকুজ্জামান পেলেন ‘দামি’ চেয়ার

বিআইডব্লিউটিএ’র ১১ হাউজবোট ক্রয়ের দরপত্রে ‘নজিরবিহীন অনিয়ম’

  • সারাক্ষণ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:২৫:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
  • ১১২ জন সংবাদটি পড়েছেন

দেশের নদ-নদীতে জমে থাকা পলি বা বালি অপসারণসহ নদীর তলদেশে জমে থাকা বর্জ্য অপসারণ করার জন্য নেওয়া প্রকল্পের হাউজবোট ক্রয়ের দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে বাস্তবায়নধীন ৩৫টি ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১১টি হাউজবোট ক্রয়ের ক্ষেত্রে একাধিক জায়গায় অনিয়ম ও বিধিলঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিশেষ করে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর ২০০৮) দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে হোপ (হেড অব প্রোকিউরিং এনটিটি) বা ক্রয়কারী সংস্থার প্রধানের অব্যবহিত নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কয়েক ধাপ নীচের কর্মকর্তাকে। একইসঙ্গে মূল্যায়ন কমিটি গঠনের পূর্বে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমতির বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নেওয়া হয়নি। এমন বিধিলঙ্ঘনের বিষয়টি আমলে নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দরপত্রে অনিয়ম ও নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। যদিও বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে বিধিলঙ্ঘনের বিষয়টিকে সামান্য ভুল বলে দাবি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ৪ হাজার পাঁচশ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ৫ নং প্যাকেজের আওতায় ১ নং লটে ১১টি ক্রু হাউজবোট কেনার কথা রয়েছে। এ হাউজবোট কিনতে ২০২৪ সালে ৬ জুন একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। এসব হাউজবোট কেনার জন্য ৪১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়। তবে এ দরপত্র প্রক্রিয়ার শুরুতেই উঠেছে- নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করার অভিযোগ।

জানা গেছে, বিধি অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে হোপ (হেড অব প্রোকিউরিং এনটিটি) বা ক্রয়কারী সংস্থার প্রধানের অব্যবহিত নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়ার কথা। কিন্তু আইন না মেনে কয়েক ধাপ নিচের কর্মকর্তা প্রকল্প পরিচালক মজনু মিয়াকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এদিকে মূল্যায়ন কমিটি গঠনে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাওয়ার পাশাপাশি যদি অনুমোদন নেওয়া হয় তাহলে ইজিপি সিস্টেমের ওয়ার্ক ফ্লো চার্ট দাখিল করতে বলা হয়। একইসঙ্গে অনুমোদনকারীর অব্যবহিত নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তার পরিবর্তে প্রকল্প পরিচালককে মূল্যায়ন কমিটির আহবায়ক করা হয় তার যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ মে মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির ব্যাখ্যা দেয় বিআইডব্লিউটিএ। সংস্থাটির চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত ওই ব্যাখ্যায় বিআইডব্লিউটিএ এ দরপত্র প্রক্রিয়ার এ অনিয়মকে ‘ভুল’ বলে উল্লেখ করেছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, দরপত্রটি ই-জিপি সিস্টেমে আহব্বান করা হলে বিধি অনুযায়ী অনলাইনে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। মূল্যায়ন কমিটিতে হেড অব প্রোকিউরিং এনটিটি (হোপ) কর্তৃক হোপের অব্যবহিত নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা হিসেবে প্রকল্প পরিচালক দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। ই-জিপি সিস্টেমে দরপত্র আহব্বান করাকালীন মূল্যায়ন কমিটি গঠনের সময় ই-জিপিতে ওয়ার্ক ফ্লো তৈরিতে ভুলক্রমে ‘হোপ’কে অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাখা হয়। ফলে তা হোপ কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং প্রকল্প পরিচালককে দরপত্রের মূল্যায়ন কমিটির আহবায়ক করা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে ই-জিপি সিস্টেমে মূল্যায়ন কমিটির গঠন ও অনুমোদনের বিষয়টি সিস্টেম কর্তৃক সয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়। ভবিষ্যতে এ জাতীয় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দরপত্রে বিধিলঙ্ঘনের বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখবে। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। এটা যদি ইনটেনশনাল ভুল হয় তাহলে মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা আছে; মন্ত্রণালয় সেটা দেখবে।’

সূত্রমতে, এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে চারটি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড ৫০ কোটি ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ১১০ টাকায় দরপত্র জমা দেয়। ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ৩৮ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৩ টাকায় দরপত্র জমা দেয়। এদের মধ্যে থ্রি এঙ্গেল মেরিন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ৩২ কোটি ৩৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকায় দরপত্র জমা দেয়। এছাড়া আনন্দ শিপইয়ার্ড ৩৭ কোটি ২২ লাখ ২৬ হাজার টাকায় দরপত্র জমা দেয়। এরমধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে থ্রি এঙ্গেল নামক একটি প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করে।

জানা গেছে, এ দরপত্রের বৈধতা রাখা হয় চলতি বছরের ১০ আগস্ট পর্যন্ত। তবে বিআইডব্লিউটিএ এর কয়েকজন কর্মকর্তা সরাসরি এ টেন্ডার বাণিজ্যতে জড়িত থাকায় আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘনকে ভুল বলে চালানোর চেষ্টা করছে। এ দরপত্র প্রক্রিয়ায় মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন থাকায় ভুল বলে স্বীকার করার পরেও সেটি সংশোধন না করে তাদের সুপারিশ করা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে নানা তদবির করা হচ্ছে।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর ২০০৮) এর বিধি ৩ এ বলা হয়েছে- ‘দরপত্র অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ মূল্যায়ন কমিটি গঠন করবে। তবে পরিচালনা পর্ষদ বা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ হয় বা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি সুপারিশকারি কর্তৃপক্ষ হয় তাহলে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা মন্ত্রণালয় অথবা বিভাগের সচিবের অনুমোদনক্রমে মূল্যায়ন কমিটি নিয়োগ করতে হবে।’

বিধি অনুসারে- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের অনুমোদনক্রমে মূল্যায়ন কমিটি গঠন হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ফলে এখানে স্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন করা হয়েছে।

অপরদিকে পিপিএর ২০০৮ এর বিধি ১০ এর ক, ঘ এবং ঙ অনুচ্ছেদ মোতাবেক অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ যেহেতু মন্ত্রণালয় সেহেতু মূল্যায়ন কমিটিতে সভাপতিত্ব করবেন অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের অব্যবহিত নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা। পিপিএর এর এই বিধি অনুযায়ী- মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি হওয়ার কথা কোনো অতিরিক্ত সচিবের। তারা অসমর্থ হলে এ দায়িত্ব পাবার কথা বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানের। তিনি কোনো কারণে অসমর্থ হলে সভাপতিত্ব করার কথা বিআইডব্লিউটিএ এর কোনো সদস্যের। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ধাপে ধাপে নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সভাপতিত্বের কথা থাকলেও এ বিধিও অমান্য করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কয়েক ধাপ নিচের কর্মকর্তা প্রকল্প পরিচালককে।

সূত্র বলছে, একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে আইন অমান্য করে কয়েক ধাপ নিচের কর্মকর্তা খোদ প্রকল্প পরিচালককেই মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। যাকে আইনের লঙ্ঘন, দুর্নীতির স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে সংস্থাটিতে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের অনিয়মের খবর পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ আছে, পতিত সরকারের একটি চক্রের মাধ্যমে এখানে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন বিতর্কিত প্রধান প্রকৌশলী।

সম্প্রতি একটি দরপত্রের অনিয়মকে কেন্দ্র করে মন্ত্রণালয়ে করা এক অভিযোগ তুলে নিতে ওই প্রকৌশলী প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। একজন ঠিকাদার এমন অভিযোগ করে তেজগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sanjib Das

জনপ্রিয় সংবাদ

আইন মন্ত্রণালয় আগামী ৬ মাসে ২০ হাজার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে

বিআইডব্লিউটিএ’র ১১ হাউজবোট ক্রয়ের দরপত্রে ‘নজিরবিহীন অনিয়ম’

আপডেট সময় : ০৮:২৫:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

দেশের নদ-নদীতে জমে থাকা পলি বা বালি অপসারণসহ নদীর তলদেশে জমে থাকা বর্জ্য অপসারণ করার জন্য নেওয়া প্রকল্পের হাউজবোট ক্রয়ের দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে বাস্তবায়নধীন ৩৫টি ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১১টি হাউজবোট ক্রয়ের ক্ষেত্রে একাধিক জায়গায় অনিয়ম ও বিধিলঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিশেষ করে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর ২০০৮) দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে হোপ (হেড অব প্রোকিউরিং এনটিটি) বা ক্রয়কারী সংস্থার প্রধানের অব্যবহিত নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কয়েক ধাপ নীচের কর্মকর্তাকে। একইসঙ্গে মূল্যায়ন কমিটি গঠনের পূর্বে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমতির বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নেওয়া হয়নি। এমন বিধিলঙ্ঘনের বিষয়টি আমলে নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দরপত্রে অনিয়ম ও নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। যদিও বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে বিধিলঙ্ঘনের বিষয়টিকে সামান্য ভুল বলে দাবি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ৪ হাজার পাঁচশ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ৫ নং প্যাকেজের আওতায় ১ নং লটে ১১টি ক্রু হাউজবোট কেনার কথা রয়েছে। এ হাউজবোট কিনতে ২০২৪ সালে ৬ জুন একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। এসব হাউজবোট কেনার জন্য ৪১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়। তবে এ দরপত্র প্রক্রিয়ার শুরুতেই উঠেছে- নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করার অভিযোগ।

জানা গেছে, বিধি অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে হোপ (হেড অব প্রোকিউরিং এনটিটি) বা ক্রয়কারী সংস্থার প্রধানের অব্যবহিত নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়ার কথা। কিন্তু আইন না মেনে কয়েক ধাপ নিচের কর্মকর্তা প্রকল্প পরিচালক মজনু মিয়াকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এদিকে মূল্যায়ন কমিটি গঠনে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাওয়ার পাশাপাশি যদি অনুমোদন নেওয়া হয় তাহলে ইজিপি সিস্টেমের ওয়ার্ক ফ্লো চার্ট দাখিল করতে বলা হয়। একইসঙ্গে অনুমোদনকারীর অব্যবহিত নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তার পরিবর্তে প্রকল্প পরিচালককে মূল্যায়ন কমিটির আহবায়ক করা হয় তার যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ মে মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির ব্যাখ্যা দেয় বিআইডব্লিউটিএ। সংস্থাটির চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত ওই ব্যাখ্যায় বিআইডব্লিউটিএ এ দরপত্র প্রক্রিয়ার এ অনিয়মকে ‘ভুল’ বলে উল্লেখ করেছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, দরপত্রটি ই-জিপি সিস্টেমে আহব্বান করা হলে বিধি অনুযায়ী অনলাইনে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। মূল্যায়ন কমিটিতে হেড অব প্রোকিউরিং এনটিটি (হোপ) কর্তৃক হোপের অব্যবহিত নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা হিসেবে প্রকল্প পরিচালক দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। ই-জিপি সিস্টেমে দরপত্র আহব্বান করাকালীন মূল্যায়ন কমিটি গঠনের সময় ই-জিপিতে ওয়ার্ক ফ্লো তৈরিতে ভুলক্রমে ‘হোপ’কে অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাখা হয়। ফলে তা হোপ কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং প্রকল্প পরিচালককে দরপত্রের মূল্যায়ন কমিটির আহবায়ক করা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে ই-জিপি সিস্টেমে মূল্যায়ন কমিটির গঠন ও অনুমোদনের বিষয়টি সিস্টেম কর্তৃক সয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়। ভবিষ্যতে এ জাতীয় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দরপত্রে বিধিলঙ্ঘনের বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখবে। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। এটা যদি ইনটেনশনাল ভুল হয় তাহলে মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা আছে; মন্ত্রণালয় সেটা দেখবে।’

সূত্রমতে, এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে চারটি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড ৫০ কোটি ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ১১০ টাকায় দরপত্র জমা দেয়। ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ৩৮ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৩ টাকায় দরপত্র জমা দেয়। এদের মধ্যে থ্রি এঙ্গেল মেরিন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ৩২ কোটি ৩৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকায় দরপত্র জমা দেয়। এছাড়া আনন্দ শিপইয়ার্ড ৩৭ কোটি ২২ লাখ ২৬ হাজার টাকায় দরপত্র জমা দেয়। এরমধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে থ্রি এঙ্গেল নামক একটি প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করে।

জানা গেছে, এ দরপত্রের বৈধতা রাখা হয় চলতি বছরের ১০ আগস্ট পর্যন্ত। তবে বিআইডব্লিউটিএ এর কয়েকজন কর্মকর্তা সরাসরি এ টেন্ডার বাণিজ্যতে জড়িত থাকায় আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘনকে ভুল বলে চালানোর চেষ্টা করছে। এ দরপত্র প্রক্রিয়ায় মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন থাকায় ভুল বলে স্বীকার করার পরেও সেটি সংশোধন না করে তাদের সুপারিশ করা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে নানা তদবির করা হচ্ছে।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর ২০০৮) এর বিধি ৩ এ বলা হয়েছে- ‘দরপত্র অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ মূল্যায়ন কমিটি গঠন করবে। তবে পরিচালনা পর্ষদ বা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ হয় বা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি সুপারিশকারি কর্তৃপক্ষ হয় তাহলে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা মন্ত্রণালয় অথবা বিভাগের সচিবের অনুমোদনক্রমে মূল্যায়ন কমিটি নিয়োগ করতে হবে।’

বিধি অনুসারে- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের অনুমোদনক্রমে মূল্যায়ন কমিটি গঠন হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ফলে এখানে স্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন করা হয়েছে।

অপরদিকে পিপিএর ২০০৮ এর বিধি ১০ এর ক, ঘ এবং ঙ অনুচ্ছেদ মোতাবেক অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ যেহেতু মন্ত্রণালয় সেহেতু মূল্যায়ন কমিটিতে সভাপতিত্ব করবেন অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের অব্যবহিত নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা। পিপিএর এর এই বিধি অনুযায়ী- মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি হওয়ার কথা কোনো অতিরিক্ত সচিবের। তারা অসমর্থ হলে এ দায়িত্ব পাবার কথা বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানের। তিনি কোনো কারণে অসমর্থ হলে সভাপতিত্ব করার কথা বিআইডব্লিউটিএ এর কোনো সদস্যের। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ধাপে ধাপে নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সভাপতিত্বের কথা থাকলেও এ বিধিও অমান্য করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কয়েক ধাপ নিচের কর্মকর্তা প্রকল্প পরিচালককে।

সূত্র বলছে, একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে আইন অমান্য করে কয়েক ধাপ নিচের কর্মকর্তা খোদ প্রকল্প পরিচালককেই মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। যাকে আইনের লঙ্ঘন, দুর্নীতির স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে সংস্থাটিতে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের অনিয়মের খবর পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ আছে, পতিত সরকারের একটি চক্রের মাধ্যমে এখানে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন বিতর্কিত প্রধান প্রকৌশলী।

সম্প্রতি একটি দরপত্রের অনিয়মকে কেন্দ্র করে মন্ত্রণালয়ে করা এক অভিযোগ তুলে নিতে ওই প্রকৌশলী প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। একজন ঠিকাদার এমন অভিযোগ করে তেজগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।