কানাডায় বাড়ি ক্রয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার অভিযোগও রয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজি, বিনিয়োগকারীদের হাজার কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে ভুয়া ঋণের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও আছে।
এ ছাড়া গত ১১ মাসে দুদকে মোট ১২ হাজার ৮২৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে শুধু গত বছরের নভেম্বরে জমা পড়েছে ৩ হাজার ৪০৬টি। দুদক চেয়ারম্যানের দপ্তর ও অন্যান্য দপ্তর থেকে পাওয়া প্রায় ৩ হাজার ৫০০টি অভিযোগ নিয়েও কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সেবার নামে ঘুষ নেওয়া নাগরিকদের সঙ্গে বঞ্চনা বা এক ধরনের প্রতারো। সেবার বিনিময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়া বা বিভিন্নভাবে খুশি করার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত। এটাকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রের তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না। ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় জিরো টলারেন্সের কথা বলা হলেও সেটার বাস্তবায়ন দেখা যায়। ফলে ঘুষ নেওয়ার মতো নিয়মতান্ত্রিক অনিয়ম বন্ধ হচ্ছে না, বরং বেড়েই চলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘সরকারি সেবা পেতে ঘুষ দেওয়া বা সেবাদাতাকে খুশি করার মতো পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এ ধারণাটা এখন প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ, সেবাগ্রহীতারা এ ধারণা বিশ্বাস করেন যে, অর্থ খরচ না করলে বা সংশ্লিষ্টদের খুশি না করলে সেবা পাওয়া যাবে না অথবা সেবা পেতে বিলম্ব হবে। এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কারণ, যারা ঘুষ নেন তারা এমন কৌশল অবলম্বন করেন, যাতে অধিকাংশই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। মাঝেমধ্যে দু-একজন ধরা পড়েন।’
তিনি আরও বলেন, একটি স্বাধীন দেশে সরকারি সেবা পাওয়া নাগরিকের অধিকার। অথচ সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাকে আবার অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে, এভাবে সেবার নামে অর্থ আদায় নাগরিকের সঙ্গে রাষ্ট্রের এক ধরনের বঞ্চনা বা প্রতারণা এবং রাষ্ট্র এটা দীর্ঘদিন ধরে মেনে নিচ্ছে। এ ধরনের নিয়মতান্ত্রিক অনিয়ম বন্ধে সরকারের আরও কঠোর হওয়া দরকার, শুধু মুখে মুখে ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বললে হবে না, এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন—এ তিনটি বিষয় লাগবেই; কিন্তু এ তিন সূচকের কোনোটাই বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে নেই। ফলে সেবা দেওয়ার নামে ঘুষের অপসংস্কৃতি একটি দৈনন্দিন চর্চায় পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এ অপসংস্কৃতি থেকে পরিত্রাণ সম্ভব নয়।’