ঢাকা ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
নেপথ্যে ১০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে হাইকোর্টের আপীল বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে ৫৪ জন কর্মচারি নিয়োগ, আরো প্রায় ৬০০জনের নিয়োগ চুড়ান্ত!  রাজৈরের বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন কৃষক দল ও পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। ফরিদপুরের ট্রাক চাপায় এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।  মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তোফায়েল আহমেদ। জরুরি ভর্তি করা হল হাসপাতালে। বহু বছর সেনাবাহিনীর থাবায় মুখোশ উন্মোচন হলো মাদক ব্যবসায়ী কাশেম ওরফে ফেন্সি কাসেমের। শেরপুরে দলিত নারীদের মুষ্টির চালে “দুর্গা পূজা”। “গীতার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো” এ শ্লোগানে মুখরিত মাদারীপুর। মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজাচ্ছে দেবী দুর্গাকে।মন্ডপে মন্ডপে চলছে মা’কে বরণের প্রস্তুতি। এক রাতের রক্তগাথা: শাপলা চত্বরে নৃশংসতার ১২ বছর। বিসিআইসি: খাদ্য নিরাপত্তা ও শিল্পায়নের অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান।

নির্বাচনী ছন্দে রাজনীতি।বহু মাত্রিক দ্বন্দ্বে ঘুর্ণায়মান।

  • সারাক্ষণ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৪১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৪০ জন সংবাদটি পড়েছেন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ঘোষণার পর থেকে দলগুলো অনেকটা নির্বাচনমুখী। রাজনীতিও পেয়েছে নির্বাচনী ছন্দ। জুলাই সনদ ও পিআর পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমানে আসনভিত্তিক প্রার্থী চূড়ান্তকরণে ব্যস্ত। কেউ পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে, কেউবা যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে। বিশ্লেষকদের মতে, সংকট কাটাতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। তাই শেষ পর্যন্ত সব দলের লক্ষ্য এখন একটিই, ভোটের ময়দান।

দলের প্রার্থী চূড়ান্ত না করলেও প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে কাজ করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ পর্যন্ত তার তত্ত্বাবধানে আসনভিত্তিক পাঁচটি জরিপও করা হয়েছে। সাংগঠনিক টিমের সদস্যদের মাধ্যমেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন। গত সোমবার থেকে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির কমিটির দুই সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ডা. জাহিদ হোসেন এবং সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা সম্ভব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আগামী মাসের মধ্যে ৩০০ আসনে বিএনপি ও মিত্র রাজনৈতিক দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বলে জানা গেছে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, গত ১৮ মাস আগে থেকে নির্বাচন সামনে রেখে এই কাজ শুরু হয়েছে। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা আগের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। জনগণের ভালোবাসায় যেসব মানুষ নিজ নিজ এলাকা জনপ্রিয়, তাদেরকেই বিএনপি মনোনয়ন দেবে। খুব সহসায় মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

বিএনপি মিত্র রাজনৈতিক দলের নেতাদের সূত্রে জানা যায়, মিত্র দল ও জোটের প্রধানকে মৌখিকভাবে প্রার্থী তালিকা দিতে বলা হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। মনোনয়নের ব্যাপারে তারা কয়েক দিনের মধ্যে বসবেন বলে জানান তিনি।

এদিকে, ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও অনেক দলের শীর্ষ নেতারা কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন, তা প্রকাশ করেছেন। নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকার দুটি আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তিনি ঢাকা-৯ (সবুজবাগ-মতিঝিল) ও ঢাকা-১১ (বাড্ডা-রামপুরা) আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বিএনপির মিত্র লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম নিজে নির্বাচন নাও করতে পারেন। তাঁর পরিবর্তে বড় ছেলে ওমর ফারুক চট্টগ্রাম-১৪ থেকে ভোট করবেন। আসন্ন নিজ এলাকার আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। বগুড়া-২ অথবা ঢাকার কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব অথবা তার স্ত্রী তানিয়া রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার পিরোজপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ফেনী-২ আসন থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। ওই এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ঢাকা-১২ অথবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ নির্বাচন করবেন নিজ জেলা ভোলার সদর ও ঢাকা-১৭ আসন থেকে। ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। নিজ এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এমডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ঢাকা-১৩ থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিএনপির মিত্র পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চ। তাদের কাছে বিএনপি প্রার্থী তালিকা চেয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একাধিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,তাঁরা শুধু মনোনয়ন বা প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইছেন না; এর আগে নির্বাচনের কৌশলসহ সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা করতে চান।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরীক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। এই দল প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচন করবেন, এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। এ জন্য দলটির পক্ষ থেকে গণসংযোগ, ভোটারের সঙ্গে মতবিনিময়সহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আমাদের সময়কে বলেন, প্রার্থী যাচাই-বাছাই চলছে। এই মাসে অথবা আগামী মাসে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হবে। তবে দলের সিদ্ধান্ত ঢাকা-৮ আসনে আমি নির্বাচন করব।

এদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এরই মধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ২৯৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদও আসনভিত্তিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা শুরু করেছে। অন্যদিকে বিএনপি আসনভিত্তিক চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করলেও দলের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বাছাই চলছে।

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার আমাদের সময়কে বলেন, প্রাথমিকভাবে আসনভিত্তিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। প্রার্থী চূড়ান্ত আরও পরে।

অন্যদিকে অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী তরুণ ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এখনও ইসির নিবন্ধন না পাওয়ায় প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি। তবে দলের ভেতরে প্রার্থীদের একটা তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। দলের শীর্ষ নেতাদের আসন এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্যান্য আসনেও যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে নতুন এই দলটির। তবে গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একীভূত হওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। তাই এই দুই দলের চূড়ান্ত প্রার্থী হয়তো তফসিলের আগে চূড়ান্ত হতে পারে।

এদিকে আসনভিত্তিক আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন ফরম সংগ্রহের আহ্বান জানানো হয়েছে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফরম বিতরণ করবে দলটি।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলমান। এরই মধ্যে ৩৬টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আরও ১০০ আসনের প্রার্থী যাচাই-বাছাই চলছে। পর্যায়ক্রমে বাকি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

বর্তমানে ইসির নিবন্ধন তালিকায় ৫০টি দল রয়েছে। নতুন করে আরও ছয়টি দলের নিবন্ধন প্রায় চূড়ান্ত। আগামী নির্বাচনে অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল ভোটে অংশগ্রহণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত থাকায় আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই আওয়ামী লীগের। আওয়ামী জোটে যেসব দল ছিল, তারা নির্বাচন করবে কি না, তা দলীয় ও সরকারের ওপর নির্ভর করছে।

রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে নানা দাবি থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী ট্রেনে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে যে সংকট চলছে, তা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন নিয়ে যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে, সেটা সাময়িক। এটা কেটে যাবে। তফসিল ঘোষণা হলে সব দাবি ভুলে সবাই নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে। দলগুলো নির্বাচনী ট্রেনে যাত্রা শুরু করেছে  তাদের প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে।

Tag :
About Author Information

GOURANGA BOSE

জনপ্রিয় সংবাদ

নেপথ্যে ১০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে হাইকোর্টের আপীল বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে ৫৪ জন কর্মচারি নিয়োগ, আরো প্রায় ৬০০জনের নিয়োগ চুড়ান্ত! 

নির্বাচনী ছন্দে রাজনীতি।বহু মাত্রিক দ্বন্দ্বে ঘুর্ণায়মান।

আপডেট সময় : ০১:৪১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ঘোষণার পর থেকে দলগুলো অনেকটা নির্বাচনমুখী। রাজনীতিও পেয়েছে নির্বাচনী ছন্দ। জুলাই সনদ ও পিআর পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমানে আসনভিত্তিক প্রার্থী চূড়ান্তকরণে ব্যস্ত। কেউ পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে, কেউবা যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে। বিশ্লেষকদের মতে, সংকট কাটাতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। তাই শেষ পর্যন্ত সব দলের লক্ষ্য এখন একটিই, ভোটের ময়দান।

দলের প্রার্থী চূড়ান্ত না করলেও প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে কাজ করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ পর্যন্ত তার তত্ত্বাবধানে আসনভিত্তিক পাঁচটি জরিপও করা হয়েছে। সাংগঠনিক টিমের সদস্যদের মাধ্যমেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন। গত সোমবার থেকে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির কমিটির দুই সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ডা. জাহিদ হোসেন এবং সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা সম্ভব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আগামী মাসের মধ্যে ৩০০ আসনে বিএনপি ও মিত্র রাজনৈতিক দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বলে জানা গেছে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, গত ১৮ মাস আগে থেকে নির্বাচন সামনে রেখে এই কাজ শুরু হয়েছে। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা আগের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। জনগণের ভালোবাসায় যেসব মানুষ নিজ নিজ এলাকা জনপ্রিয়, তাদেরকেই বিএনপি মনোনয়ন দেবে। খুব সহসায় মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

বিএনপি মিত্র রাজনৈতিক দলের নেতাদের সূত্রে জানা যায়, মিত্র দল ও জোটের প্রধানকে মৌখিকভাবে প্রার্থী তালিকা দিতে বলা হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। মনোনয়নের ব্যাপারে তারা কয়েক দিনের মধ্যে বসবেন বলে জানান তিনি।

এদিকে, ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও অনেক দলের শীর্ষ নেতারা কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন, তা প্রকাশ করেছেন। নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকার দুটি আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তিনি ঢাকা-৯ (সবুজবাগ-মতিঝিল) ও ঢাকা-১১ (বাড্ডা-রামপুরা) আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বিএনপির মিত্র লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম নিজে নির্বাচন নাও করতে পারেন। তাঁর পরিবর্তে বড় ছেলে ওমর ফারুক চট্টগ্রাম-১৪ থেকে ভোট করবেন। আসন্ন নিজ এলাকার আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। বগুড়া-২ অথবা ঢাকার কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব অথবা তার স্ত্রী তানিয়া রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার পিরোজপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ফেনী-২ আসন থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। ওই এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ঢাকা-১২ অথবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ নির্বাচন করবেন নিজ জেলা ভোলার সদর ও ঢাকা-১৭ আসন থেকে। ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। নিজ এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এমডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ঢাকা-১৩ থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিএনপির মিত্র পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চ। তাদের কাছে বিএনপি প্রার্থী তালিকা চেয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একাধিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,তাঁরা শুধু মনোনয়ন বা প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইছেন না; এর আগে নির্বাচনের কৌশলসহ সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা করতে চান।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরীক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। এই দল প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচন করবেন, এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। এ জন্য দলটির পক্ষ থেকে গণসংযোগ, ভোটারের সঙ্গে মতবিনিময়সহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আমাদের সময়কে বলেন, প্রার্থী যাচাই-বাছাই চলছে। এই মাসে অথবা আগামী মাসে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হবে। তবে দলের সিদ্ধান্ত ঢাকা-৮ আসনে আমি নির্বাচন করব।

এদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এরই মধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ২৯৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদও আসনভিত্তিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা শুরু করেছে। অন্যদিকে বিএনপি আসনভিত্তিক চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করলেও দলের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বাছাই চলছে।

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার আমাদের সময়কে বলেন, প্রাথমিকভাবে আসনভিত্তিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। প্রার্থী চূড়ান্ত আরও পরে।

অন্যদিকে অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী তরুণ ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এখনও ইসির নিবন্ধন না পাওয়ায় প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি। তবে দলের ভেতরে প্রার্থীদের একটা তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। দলের শীর্ষ নেতাদের আসন এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্যান্য আসনেও যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে নতুন এই দলটির। তবে গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একীভূত হওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। তাই এই দুই দলের চূড়ান্ত প্রার্থী হয়তো তফসিলের আগে চূড়ান্ত হতে পারে।

এদিকে আসনভিত্তিক আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন ফরম সংগ্রহের আহ্বান জানানো হয়েছে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফরম বিতরণ করবে দলটি।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলমান। এরই মধ্যে ৩৬টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আরও ১০০ আসনের প্রার্থী যাচাই-বাছাই চলছে। পর্যায়ক্রমে বাকি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

বর্তমানে ইসির নিবন্ধন তালিকায় ৫০টি দল রয়েছে। নতুন করে আরও ছয়টি দলের নিবন্ধন প্রায় চূড়ান্ত। আগামী নির্বাচনে অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল ভোটে অংশগ্রহণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত থাকায় আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই আওয়ামী লীগের। আওয়ামী জোটে যেসব দল ছিল, তারা নির্বাচন করবে কি না, তা দলীয় ও সরকারের ওপর নির্ভর করছে।

রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে নানা দাবি থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী ট্রেনে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে যে সংকট চলছে, তা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন নিয়ে যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে, সেটা সাময়িক। এটা কেটে যাবে। তফসিল ঘোষণা হলে সব দাবি ভুলে সবাই নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে। দলগুলো নির্বাচনী ট্রেনে যাত্রা শুরু করেছে  তাদের প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে।