ঢাকা ০২:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
পূজা দেখতে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার এক গারো কিশোরী। নেপথ্যে ১০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে হাইকোর্টের আপীল বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে ৫৪ জন কর্মচারি নিয়োগ, আরো প্রায় ৬০০জনের নিয়োগ চুড়ান্ত!  রাজৈরের বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন কৃষক দল ও পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। ফরিদপুরের ট্রাক চাপায় এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।  মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তোফায়েল আহমেদ। জরুরি ভর্তি করা হল হাসপাতালে। বহু বছর সেনাবাহিনীর থাবায় মুখোশ উন্মোচন হলো মাদক ব্যবসায়ী কাশেম ওরফে ফেন্সি কাসেমের। শেরপুরে দলিত নারীদের মুষ্টির চালে “দুর্গা পূজা”। “গীতার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো” এ শ্লোগানে মুখরিত মাদারীপুর। মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজাচ্ছে দেবী দুর্গাকে।মন্ডপে মন্ডপে চলছে মা’কে বরণের প্রস্তুতি। এক রাতের রক্তগাথা: শাপলা চত্বরে নৃশংসতার ১২ বছর।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুরের আগেই জানতে পারি হাসিনার পতন হবে -চৌধুরী মামুন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৯:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
  • ১০৫ জন সংবাদটি পড়েছেন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় এ বছরের ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেন সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী মামুন। ৫ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে ২০১৮-এর ভোটে অনিয়ম, গুম, খুন ও জুলাই আন্দোলন নিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন সাবেক এই পুলিশ প্রধান।

 

জবানবন্দিতে ৪ আগস্টের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ৪ আগস্ট বেলা ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমাদের বৈঠক হয়। সেখানে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ তিন বাহিনীর প্রধান, আমিসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক হয়। আন্দোলন নিয়ে এবং তা দমন করার বিষয়ে আলোচনা হয়। পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। গোয়েন্দা প্রতিবেদন জানায় যে, আন্দোলন গুরুতর পর্যায়ে চলে গেছে। তা দমন করা প্রয়োজন। সংস্কারের পরিবর্তন বা পতন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা চেষ্টা করেছি সরকারকে সঠিক তথ্য দিতে। সরকার তার দুর্বলতা শুনতে প্রস্তুত ছিল না। এই মিটিং থাকাবস্থায় পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে এবং বিভিন্ন স্থানে সমস্যা দেখা দেয়। পরে বৈঠক মুলতবি হয়।

তিনি আরও বলেন, ৪ আগস্ট রাতে হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বৈঠক ডাকেন। গণভবনে রাত ১০টার দিকে বৈঠক হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার বোন শেখ রেহানা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তিন বাহিনীর প্রধান, আমিসহ র‍্যাব ডিজি উপস্থিত ছিলাম। এসবি প্রধান মনিরুল বাইরে বসা ছিলেন। জেনারেল মুজিব উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। খোলামেলা কথা হয়। কীভাবে ৫ আগস্টের আন্দোলন ও গণজমায়েত দমন করা যায়, তা নিয়ে কথা হয়। ফোর্স মোতায়েন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এই বৈঠক প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট হয়। বৈঠক শেষে আমরা সেনাবাহিনীর অপারেশন কন্ট্রোল রুমে চলে যাই। তিন বাহিনীর প্রধান, মেজর জেনারেল মুজিব, ডিজি র‍্যাব, গোয়েন্দা বাহিনী, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও আমি নিজে ছিলাম। সেখানে ফোর্স মোতায়েন নিয়ে কথা হয়। বৈঠক প্রায় রাত সাড়ে ১২ টায় শেষ হয়। বৈঠকে ঢাকা শহর, ঢাকার প্রবেশ মুখে কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। পুলিশ সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়।

শেখ হাসিনার পতনের দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চৌধুরী মামুন বলেন, পরদিন ৫ আগস্ট বেলা ১০টা পর্যন্ত ঢাকার ভেতরে আমাদের পুলিশ শক্ত অবস্থান ছিল। ঢাকার প্রবেশ মুখে উত্তরা-যাত্রাবাড়ি এলাকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়। আমি তখন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অবস্থান নেই। ডিএমপি কমিশনারসহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ অফিসাররা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ছিলেন। সেখান থেকে তারা নির্দেশনা প্রদান করেন। বেলা ১১টার দিকে উত্তরা থেকে লক্ষ লক্ষ লোক ঢাকার ভেতরে আসতে শুরু করেন। তখন জানতে পারি যে, সেনাবাহিনী বাধা দেয়নি। সেনাবাহিনীর মাঠপর্যায়ের অফিসার ও ফোর্স আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এর ফলে জনগণের গণভবনমুখি স্রোতকে দমন ও আটকানো সম্ভব হয়নি। দুপুর ১টার দিকে ঢাকার ভেতরে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। পিএমও থেকে আমাদেরকে বলা হয় মহাখালী এলাকায় জনস্রোত আটকানোর জন্য। আমি ৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২ থেকে ১টার মধ্যে বুঝতে পারি যে, সরকার পতন হবে। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন, এটা আমি এসবির মাধ্যমে জানতে পারি। তিনি ভারত যাবেন কিনা, তা জানতে পারিনি। সেনাবাহিনী তা জানায়নি।

সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়ার বর্ণনা দিয়ে মামুন বলেন, আমি বিকেলে জানতে পারি পুলিশ অফিসারদের নেওয়ার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টারে হেলিকপ্টার আসবে। আমি এ হেলিকপ্টারে করে তেজগাঁও বিমানবন্দরে যাই এবং সেখান থেকে সেনাবাহিনীর অফিসার্স মেসে আশ্রয় গ্রহণ করি।

  • জবানবন্দিতে নিজে অনুতপ্ত জানিয়ে তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে দমন করতে গিয়ে সরকারের নির্দেশনায় এবং অতি উৎসাহী পুলিশ অফিসার ও পুলিশ বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং জনগণের ওপর গুলি করাসহ নির্বিচারে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও অসংখ্য মানুষকে আহত ও হত্যা করায় সাবেক পুলিশ প্রধান হিসেবে আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
Tag :
About Author Information

GOURANGA BOSE

পূজা দেখতে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার এক গারো কিশোরী।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুরের আগেই জানতে পারি হাসিনার পতন হবে -চৌধুরী মামুন

আপডেট সময় : ০৮:৪৯:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় এ বছরের ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেন সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী মামুন। ৫ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে ২০১৮-এর ভোটে অনিয়ম, গুম, খুন ও জুলাই আন্দোলন নিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন সাবেক এই পুলিশ প্রধান।

 

জবানবন্দিতে ৪ আগস্টের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ৪ আগস্ট বেলা ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমাদের বৈঠক হয়। সেখানে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ তিন বাহিনীর প্রধান, আমিসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক হয়। আন্দোলন নিয়ে এবং তা দমন করার বিষয়ে আলোচনা হয়। পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। গোয়েন্দা প্রতিবেদন জানায় যে, আন্দোলন গুরুতর পর্যায়ে চলে গেছে। তা দমন করা প্রয়োজন। সংস্কারের পরিবর্তন বা পতন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা চেষ্টা করেছি সরকারকে সঠিক তথ্য দিতে। সরকার তার দুর্বলতা শুনতে প্রস্তুত ছিল না। এই মিটিং থাকাবস্থায় পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে এবং বিভিন্ন স্থানে সমস্যা দেখা দেয়। পরে বৈঠক মুলতবি হয়।

তিনি আরও বলেন, ৪ আগস্ট রাতে হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বৈঠক ডাকেন। গণভবনে রাত ১০টার দিকে বৈঠক হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার বোন শেখ রেহানা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তিন বাহিনীর প্রধান, আমিসহ র‍্যাব ডিজি উপস্থিত ছিলাম। এসবি প্রধান মনিরুল বাইরে বসা ছিলেন। জেনারেল মুজিব উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। খোলামেলা কথা হয়। কীভাবে ৫ আগস্টের আন্দোলন ও গণজমায়েত দমন করা যায়, তা নিয়ে কথা হয়। ফোর্স মোতায়েন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এই বৈঠক প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট হয়। বৈঠক শেষে আমরা সেনাবাহিনীর অপারেশন কন্ট্রোল রুমে চলে যাই। তিন বাহিনীর প্রধান, মেজর জেনারেল মুজিব, ডিজি র‍্যাব, গোয়েন্দা বাহিনী, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও আমি নিজে ছিলাম। সেখানে ফোর্স মোতায়েন নিয়ে কথা হয়। বৈঠক প্রায় রাত সাড়ে ১২ টায় শেষ হয়। বৈঠকে ঢাকা শহর, ঢাকার প্রবেশ মুখে কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। পুলিশ সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়।

শেখ হাসিনার পতনের দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চৌধুরী মামুন বলেন, পরদিন ৫ আগস্ট বেলা ১০টা পর্যন্ত ঢাকার ভেতরে আমাদের পুলিশ শক্ত অবস্থান ছিল। ঢাকার প্রবেশ মুখে উত্তরা-যাত্রাবাড়ি এলাকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়। আমি তখন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অবস্থান নেই। ডিএমপি কমিশনারসহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ অফিসাররা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ছিলেন। সেখান থেকে তারা নির্দেশনা প্রদান করেন। বেলা ১১টার দিকে উত্তরা থেকে লক্ষ লক্ষ লোক ঢাকার ভেতরে আসতে শুরু করেন। তখন জানতে পারি যে, সেনাবাহিনী বাধা দেয়নি। সেনাবাহিনীর মাঠপর্যায়ের অফিসার ও ফোর্স আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এর ফলে জনগণের গণভবনমুখি স্রোতকে দমন ও আটকানো সম্ভব হয়নি। দুপুর ১টার দিকে ঢাকার ভেতরে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। পিএমও থেকে আমাদেরকে বলা হয় মহাখালী এলাকায় জনস্রোত আটকানোর জন্য। আমি ৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২ থেকে ১টার মধ্যে বুঝতে পারি যে, সরকার পতন হবে। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন, এটা আমি এসবির মাধ্যমে জানতে পারি। তিনি ভারত যাবেন কিনা, তা জানতে পারিনি। সেনাবাহিনী তা জানায়নি।

সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়ার বর্ণনা দিয়ে মামুন বলেন, আমি বিকেলে জানতে পারি পুলিশ অফিসারদের নেওয়ার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টারে হেলিকপ্টার আসবে। আমি এ হেলিকপ্টারে করে তেজগাঁও বিমানবন্দরে যাই এবং সেখান থেকে সেনাবাহিনীর অফিসার্স মেসে আশ্রয় গ্রহণ করি।

  • জবানবন্দিতে নিজে অনুতপ্ত জানিয়ে তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে দমন করতে গিয়ে সরকারের নির্দেশনায় এবং অতি উৎসাহী পুলিশ অফিসার ও পুলিশ বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং জনগণের ওপর গুলি করাসহ নির্বিচারে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও অসংখ্য মানুষকে আহত ও হত্যা করায় সাবেক পুলিশ প্রধান হিসেবে আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী।