বগুড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত গণশুনানিতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা নামে এক ব্যক্তি মঞ্চ লক্ষ্য করে স্যান্ডেল নিক্ষেপ করেছেন।
রোববার (১০ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে বগুড়ার শহিদ টিটু মিলনায়তনে দুদক আয়োজিত গণশুনানিতে এ ঘটনা ঘটে। সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা নামে ওই ব্যক্তি শুনানির সুযোগ না পাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে মঞ্চ লক্ষ্য করে স্যান্ডেল নিক্ষেপ করেন।
জুতা নিক্ষেপ করা সাখাওয়াত হোসেত মোল্লা বলেন, ‘আমার বাড়ি সোনাতলা উপজেলায়। ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান সম্পত্তির চাঁদা না দেয়ায় আমার বাড়িতে হামলা চালায়। এছাড়াও আমার তিনটি জলাশয় থেকে ২১ লাখ টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে আমি বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন করেছি, থানাসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে অভিযোগও দিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। আমি দুদকের গণশুনানির জন্য অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু আজকে শুনানিতে আমাকে অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে জুতা নিক্ষেপ করেছি।’
জুতা নিক্ষেপের ঘটনায় সাময়িক বিশৃঙ্খলা তৈরি হলেও পরবর্তীতে শুনানি যথারীতি শুরু হয়। এরপর দুদক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মোমেন গণশুনানি কার্যক্রম শুরু করেন এবং বলেন, ‘দুর্নীতি আমাদের মধ্যেও আছে, আচরণেও সমস্যা আছে। তবে জনগণের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে এসব সমাধান করা হবে।’ তিনি দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রমে নজর রাখার জন্য সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।
গণশুনানিতে সরকারি ও বেসরকারি ৩২টি দফতরের বিরুদ্ধে ৯৭টি অভিযোগ জমা পড়ে, এর মধ্যে ৫৭টি অভিযোগ সরাসরি শুনানি করা হয়।
শুনানিকালে সবচেয়ে বড় আলোচনার জন্ম দেয় একটি অবৈধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটির কথিত দুই কর্মকর্তা রাব্বি ও সোহেলকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করে পুলিশ।
এছাড়া, অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে অনুপস্থিত থাকায় পদ্মা ইন্স্যুরেন্সের স্থানীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি আদেশ দেয়া হয়।
শুনানিতে উঠে আসে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চারলেন উন্নীতকরণ প্রকল্প এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঙালি নদী খনন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ। এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশনা দেন দুদক চেয়ারম্যান।
শুনানির সমাপনী বক্তব্যে ড. আব্দুল মোমেন ঘুষ বন্ধে জনসচেতনতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘দুর্নীতি করার জন্য ঘুষ দিতে হয়। আপনারা যদি ঘুষ না দেন, তবে একসময় কাজ ঘুষ ছাড়াই হবে। কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের বিকল্প নেই- তাদের কাজ করতেই হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক আকতার হোসেন, রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক, বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা, পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা এবং বগুড়ার উপ-পরিচালক মাহফুজ ইকবাল।
প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এই গণশুনানিতে স্থানীয় নাগরিকরা তাদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান জানান।