মানবতার সেবায় নিবেদিতপ্রাণ এক তরুণের হাত ধরেই সূচনা হয় “জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ”-এর। প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান হাওলাদার, যিনি ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাটের মোবারক আলী হাওলাদার বাড়ির সন্তান। পিতা মো. শাহে আলম হাওলাদার।
শিক্ষা জীবনের শুরু বরিশাল জেলার দেউলা রাহমানিয়া দ্বীনিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসায়। পরবর্তীতে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন। মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহিমিয়া মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন তিনি।
২০১৩ সালে রাজধানীর ভাটারায় নাজেরা ও হিফজ সমাপ্ত করেন এবং ২০২১ সালে বাড্ডার মারকাজুল উলুম মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগে অধ্যয়ন করেন।
বর্তমানে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি শিক্ষার্থীদের প্রিয় উস্তাদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আরও পড়ুন: প্রায় সাড়ে সাতশত বছরের পুরনো মনপুরা দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্য।
প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্প
এক শীতের রাতে, বন্ধু তামিম সরকারকে সঙ্গে নিয়ে গুলশান এলাকায় হেঁটে যাচ্ছিলেন হাবিবুর রহমান। বিরিয়ানি খেয়ে ফেরার পথে চোখে পড়ে — এক মা তার ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে ফুটপাথে ঘুমাচ্ছেন।
দৃশ্যটি হৃদয়ে নাড়া দেয়। তিনি ভাবতে লাগলেন — “এই মানুষগুলোর তো কোনো নিরাপত্তা নেই, নেই খাবারের নিশ্চয়তা, নেই মাথার ওপর ছাউনি!”
সেই মুহূর্তেই মনে এক সিদ্ধান্ত — “অসহায়দের জন্য কিছু করতে হবে।”
এরপর থেকেই শুরু হয় ছোট পরিসরে মানবসেবার যাত্রা। মাসের বেতনের টাকায় বাজার করে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করতেন, রাতের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে খুঁজতেন ক্ষুধার্ত মানুষ।
মানবতার পথে যাত্রা
২০২৪ সালে নোয়াখালীর ভয়াবহ বন্যা সেই মানবিক উদ্যোগে নতুন দিক উন্মোচন করে। তিনি বুঝতে পারেন — “একজন নয়, যদি দশজন একসাথে কাজ করি, সাহায্য আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।”
এই ভাবনা থেকেই গড়ে ওঠে একদল স্বপ্নবাজ তরুণের ভলান্টিয়ার গ্রুপ।
পরে সেই গ্রুপের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় —
“জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ”
(সৃষ্টির সেবায় স্রষ্টার সন্তুষ্টি)
সংগঠনের মূল লক্ষ্য স্পষ্ট —
“চাঁদাবাজ, মাদক ও ক্ষুধা মুক্ত বাংলাদেশ গড়া।”
প্রতিষ্ঠাতার অনুপ্রেরণার কথা
মো. হাবিবুর রহমান হাওলাদার বলেন,
“আমি অনেক বাচ্চার মুখে হাসি ফুটিয়েছি, কিন্তু কখনও প্রকাশ করিনি। কারণ, সাহায্য প্রকাশের জন্য নয়, তৃপ্তির জন্য।
তবে আজ বলছি শুধু একটি উদ্দেশ্যে — যেন অন্যরা অনুপ্রাণিত হয়, যেন মানবতার হাত আরও প্রসারিত হয়।”
তিনি আরও বলেন,
“আমি হাসিখুশি মানুষ, কিন্তু এই হাসির পেছনে আছে অনেক দুঃখের গল্প। সেই দুঃখ থেকেই জন্ম নিয়েছে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর গল্প।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আজ “জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ” একটি মানবসেবা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। সংগঠনের লক্ষ্য —
“মানবতার জয় হোক, দুঃখের নয়।”
প্রতিষ্ঠাতা আশা প্রকাশ করেছেন,
“ইনশাআল্লাহ, একদিন এই উদ্যোগ পৌঁছে যাবে বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায়।”
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে “জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ” দেশের বিভিন্ন জেলায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সচেতনতা—সবক্ষেত্রেই মানবতার আলো ছড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে এই তরুণদের সংগঠন।
সারাক্ষণ ডেস্ক 









