ঢাকা ০৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
জনগণ প্রচলিত রাজনীতির পরিবর্তন চায়: তারেক রহমান মাগুরায় সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮৭ লাখ টাকা উধাও: গ্রাহকের অভিযোগে তোলপাড় ঠাকুরগাঁওয়ে বন্ধুমহল ব্লাড ডোনার সোসাইটির ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন সম্পন্ন বিটিভির বার্তা বিভাগে ক্ষমতার অপব্যবস্থাপনা: মুন্সী ফরিদুজামান ও সৈয়দা তাসমিনা আহমেদের নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি নিয়ে নতুন বিতর্ক ঠাকুরগাঁও সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১৪ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ ঠাকুরগাঁওয়ে সেনা অভিযানে ২১ বোতল ফেন্সিডিলসহ তালিকাভুক্ত জুলাই যোদ্ধা আটক গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা: রাজৈরে মানববন্ধন, দোষীদের ফাঁসির দাবি এস. আলম গ্রুপের ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ: ১১৭ দেশে নজিরবিহীন অনুসন্ধান জামায়াতের ভাব বেড়ে গেছে: গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জালিয়াতির চক্রে রাজউক।নথি জালিয়াতিতে জড়িত রাজউকের বিশেষ চক্রের সাথে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ।

সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ’ ওসি, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা চাঁদা নিয়ে প্রস্থান!

যশোর শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ ওসিকে আটকে চাঁদা দাবির’ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আরও আলোচিত হয়ে ওঠে। চাঁদা আদায়ের অভিযোগের তীর এক স্বেচ্ছসেবক দলের নেতার দিকে, যিনি ৫-৬ জন সহযোগী নিয়ে সেখানে হানা দেন।

ঘটনাটি ঘটে গত ৩০ জুন সন্ধ্যায়। সিসিটিভি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম এক নারীকে সঙ্গে নিয়ে যশোর পাউবোর পুরোনো রেস্ট হাউজের ‘কপোতাক্ষ কক্ষে’ অবস্থান করছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম হাসান সনি ৫-৬ জন সঙ্গী নিয়ে সেখানে যান। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা দরজা ধাক্কা দেওয়ার পর ওসি সাইফুল ইসলাম বাইরে বের হন। এরপর ধস্তাধস্তি করে তাকে আবার কক্ষে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, তারা ওসির কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন এবং পরে দুই লাখ টাকায় রফা হয়।
ঘটনার সময় রেস্ট হাউজে দায়িত্বরত আনসার সদস্য ও কেয়ারটেকারসহ কয়েকজন কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান বলেন, ‘টাকা লেনদেন এবং রেস্ট হাউজ ভাঙচুরের সময় আমাকেও মারধর করা হয়। বাবুর্চিও নিস্তার পাননি।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‌ওসি সাইফুল স্ত্রী পরিচয়ে একজন নারীকে নিয়ে বাংলোয় ওঠেন। আমি নিজে দরজা খুলে দেই। কপোতাক্ষ (কক্ষ) গুছিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে যাই। এরপর কিছু সময় পর ওসি স্যার নাশতা আনতে শহরের একটি হোটেলে পাঠান। আর ওসি সাইফুল ইসলাম ওই নারীসহ কক্ষে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করার পরে এলাকার কিছু লোকজন প্রবেশ করেন। রেস্ট হাউজের সামনে এসে দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন। এর কিছুক্ষণ পর সাইফুল ইসলাম দরজা খুলে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর চক্রটি তাকে টেনে-হিঁচড়ে ওই নারীসহ ঘরে ঢোকেন।’
ঘটনার দিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেটে ডিউটি করা দায়িত্বরত আনসার সদস্য রাজু বলেন, ওইদিন সন্ধ্যায় একজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে বাংলোতে প্রবেশ করেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এর ঘণ্টাখানেক পরে এলাকার কিছু লোকজন বাংলোর ভেতরে প্রবেশের পর দরজা আটকে দেন এবং ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেননি। এরপর আরও অনেকে আসেন। থানা থেকে পুলিশের লোকজনও আসেন। তবে ভেতরে কী ঘটেছে তা তিনি জানেন না।
রেস্ট হাউজের ইনচার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরুন হোসেন বলেন, কার্যত পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশনায় তিনি ওসি সাইফুল ইসলামকে কক্ষ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সঙ্গে আনা নারীকে স্ত্রী পরিচয় দিয়েছিলেন। আর সাইফুল ইসলাম রেস্ট হাউজে অবস্থানকালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পাউবো ও থানার লোকজন সেখানে যান।
তবে পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওসি সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একজন বন্ধুকে নিয়ে যশোরে এসেছিলাম। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতারা পূর্বপরিচিত, তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসব প্রচার চালানো হচ্ছে।’
অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা গোলাম হাসান সনি দাবি করেছেন, ‘আমরা সংবাদ পেয়ে রেস্ট হাউজে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো নারী পাইনি, ওসির সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পী বলেন, ’সনি ছাত্রদল থেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হয়েছে। ফলে তিনি ছাত্রদলে নাই। এ ধরনের অভিযোগ আমার জানা নাই।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব রাজেদুর রহমান সাগর বলেন, সনি স্বেচ্ছাসেবক দলেও আছে, ছাত্রদলের পদেও আছে। এ ধরনের অভিযোগ জানা নাই। ব্যক্তির দায় দল নেবে না। দল কঠোর অবস্থানে আছে, অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যশোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুরোধে ওসিকে রেস্ট হাউজের কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, যা এখন তদন্তাধীন।
এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবুল হাসনাত বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, তবে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

Tag :
About Author Information

GOURANGA BOSE

জনপ্রিয় সংবাদ

জনগণ প্রচলিত রাজনীতির পরিবর্তন চায়: তারেক রহমান

সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ’ ওসি, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা চাঁদা নিয়ে প্রস্থান!

আপডেট সময় : ০১:৩১:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

যশোর শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ ওসিকে আটকে চাঁদা দাবির’ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আরও আলোচিত হয়ে ওঠে। চাঁদা আদায়ের অভিযোগের তীর এক স্বেচ্ছসেবক দলের নেতার দিকে, যিনি ৫-৬ জন সহযোগী নিয়ে সেখানে হানা দেন।

ঘটনাটি ঘটে গত ৩০ জুন সন্ধ্যায়। সিসিটিভি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম এক নারীকে সঙ্গে নিয়ে যশোর পাউবোর পুরোনো রেস্ট হাউজের ‘কপোতাক্ষ কক্ষে’ অবস্থান করছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম হাসান সনি ৫-৬ জন সঙ্গী নিয়ে সেখানে যান। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা দরজা ধাক্কা দেওয়ার পর ওসি সাইফুল ইসলাম বাইরে বের হন। এরপর ধস্তাধস্তি করে তাকে আবার কক্ষে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, তারা ওসির কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন এবং পরে দুই লাখ টাকায় রফা হয়।
ঘটনার সময় রেস্ট হাউজে দায়িত্বরত আনসার সদস্য ও কেয়ারটেকারসহ কয়েকজন কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান বলেন, ‘টাকা লেনদেন এবং রেস্ট হাউজ ভাঙচুরের সময় আমাকেও মারধর করা হয়। বাবুর্চিও নিস্তার পাননি।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‌ওসি সাইফুল স্ত্রী পরিচয়ে একজন নারীকে নিয়ে বাংলোয় ওঠেন। আমি নিজে দরজা খুলে দেই। কপোতাক্ষ (কক্ষ) গুছিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে যাই। এরপর কিছু সময় পর ওসি স্যার নাশতা আনতে শহরের একটি হোটেলে পাঠান। আর ওসি সাইফুল ইসলাম ওই নারীসহ কক্ষে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করার পরে এলাকার কিছু লোকজন প্রবেশ করেন। রেস্ট হাউজের সামনে এসে দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন। এর কিছুক্ষণ পর সাইফুল ইসলাম দরজা খুলে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর চক্রটি তাকে টেনে-হিঁচড়ে ওই নারীসহ ঘরে ঢোকেন।’
ঘটনার দিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেটে ডিউটি করা দায়িত্বরত আনসার সদস্য রাজু বলেন, ওইদিন সন্ধ্যায় একজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে বাংলোতে প্রবেশ করেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এর ঘণ্টাখানেক পরে এলাকার কিছু লোকজন বাংলোর ভেতরে প্রবেশের পর দরজা আটকে দেন এবং ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেননি। এরপর আরও অনেকে আসেন। থানা থেকে পুলিশের লোকজনও আসেন। তবে ভেতরে কী ঘটেছে তা তিনি জানেন না।
রেস্ট হাউজের ইনচার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরুন হোসেন বলেন, কার্যত পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশনায় তিনি ওসি সাইফুল ইসলামকে কক্ষ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সঙ্গে আনা নারীকে স্ত্রী পরিচয় দিয়েছিলেন। আর সাইফুল ইসলাম রেস্ট হাউজে অবস্থানকালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পাউবো ও থানার লোকজন সেখানে যান।
তবে পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওসি সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একজন বন্ধুকে নিয়ে যশোরে এসেছিলাম। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতারা পূর্বপরিচিত, তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসব প্রচার চালানো হচ্ছে।’
অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা গোলাম হাসান সনি দাবি করেছেন, ‘আমরা সংবাদ পেয়ে রেস্ট হাউজে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো নারী পাইনি, ওসির সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পী বলেন, ’সনি ছাত্রদল থেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হয়েছে। ফলে তিনি ছাত্রদলে নাই। এ ধরনের অভিযোগ আমার জানা নাই।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব রাজেদুর রহমান সাগর বলেন, সনি স্বেচ্ছাসেবক দলেও আছে, ছাত্রদলের পদেও আছে। এ ধরনের অভিযোগ জানা নাই। ব্যক্তির দায় দল নেবে না। দল কঠোর অবস্থানে আছে, অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যশোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুরোধে ওসিকে রেস্ট হাউজের কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, যা এখন তদন্তাধীন।
এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবুল হাসনাত বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, তবে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’