ঢাকা ০৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
ঠাকুরগাঁওয়ে বন্ধুমহল ব্লাড ডোনার সোসাইটির ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন সম্পন্ন বিটিভির বার্তা বিভাগে ক্ষমতার অপব্যবস্থাপনা: মুন্সী ফরিদুজামান ও সৈয়দা তাসমিনা আহমেদের নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি নিয়ে নতুন বিতর্ক ঠাকুরগাঁও সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১৪ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ ঠাকুরগাঁওয়ে সেনা অভিযানে ২১ বোতল ফেন্সিডিলসহ তালিকাভুক্ত জুলাই যোদ্ধা আটক গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা: রাজৈরে মানববন্ধন, দোষীদের ফাঁসির দাবি এস. আলম গ্রুপের ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ: ১১৭ দেশে নজিরবিহীন অনুসন্ধান জামায়াতের ভাব বেড়ে গেছে: গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জালিয়াতির চক্রে রাজউক।নথি জালিয়াতিতে জড়িত রাজউকের বিশেষ চক্রের সাথে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ। লক্ষ্মীপুরে আলোচিত যুবলীগ–ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার উখিয়ায় অস্ত্র-গুলিসহ আরাকান আর্মির এক সদস্যের আত্মসমর্পণ

গুম,খুন ও গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত তবুও ধরা ছোঁয়ার বাইরে অপরাধী পুলিশ কর্মকর্তারা

 

পুলিশের রাজনৈতিক ভূমিকা ও ব্যাপক দমন-পীড়নের কারণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে’ রূপ নিয়েছিল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগে আওয়ামীলীগের স্বৈরাচারী শাসকের পতন ঘটে। দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ৫ আগস্টের পর দেশের সার্বিক নিরাপত্তা, আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে পুলিশের একাংশের বিতর্কিত ভূমিকা।

শুধু মাঠপর্যায়ে নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম জড়িয়েছে গুম, নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘন; সর্বোপরি অবৈধ সম্পদ অর্জনের মতো গুরুতর অভিযোগে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দলীয় লেজুড়বৃত্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে যেমন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, আবার অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে করা হয়েছে গ্রেপ্তার।তবে, অধিকাংশ ‘বিতর্কিত ও অপরাধী’ পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন পলাতক অবস্থায়। সময়মতো তাদের গ্রেপ্তার বা অবস্থান শনাক্ত করতে না পারায় প্রশ্ন উঠছে— আইন কি শুধুই দুর্বলদের জন্য, নাকি প্রভাবশালী পলাতক কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারে রয়েছে সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছার অভাব!

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের আল্টিমেটাম সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক প্রভাবশালী কর্মকর্তা আর কাজে যোগ দেননি। এমন পলাতক বা আত্মগোপনে থাকা কর্মকর্তাদের ‘অপরাধী’ হিসেবে সন্ধান করেও খুঁজে পাচ্ছে না বাহিনী-সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ ৮ জুলাই দেওয়া তথ্যমতে, নানা অভিযোগে কর্মকর্তাসহ ৫১ জন পুলিশ সদস্যকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করা হয়েছে ৮২ জন সদস্যকে। তদন্তকারী সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে দিতে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে এনসিবি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমন-পীড়ন, হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ নানা অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬১ জন। গ্রেপ্তার-পরবর্তী তাদের প্রত্যেককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

 

কর্মস্থলে অনুপস্থিতি ও বরখাস্ত কর্মকর্তারা

 

পুলিশের কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনতে গত ১১ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, পুলিশের যেসব সদস্য কাজে যোগ দেননি, তাদের জন্য শেষ সময় হচ্ছে ১৪ আগস্ট। ওই দিনের মধ্যে যদি কেউ যোগ না দেন, তাহলে ধরে নেওয়া হবে তারা চাকরি করতে ইচ্ছুক নন। এর আগে ৮ আগস্টের মধ্যে কর্মকর্তাসহ অনুপস্থিত সদস্যদের নিজ নিজ ইউনিটে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর (অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ৪০ দিন পর্যন্ত) কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ১৮৭ জন সদস্য। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডিআইজি (উপ-মহাপরিদর্শক) পদমর্যাদার একজন, অতিরিক্ত ডিআইজি সাতজন, পুলিশ সুপার দুজন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একজন, সহকারী পুলিশ সুপার পাঁচজন, পুলিশ পরিদর্শক পাঁচজন, এসআই ও সার্জেন্ট ১৪ জন, এএসআই নয়জন, নায়েক সাতজন ও কনস্টেবল ১৩৬ জন।এর মধ্যে কর্মস্থলে গরহাজির ৪৯ জন, স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেন তিনজন, ছুটি শেষ হয়ে গেলেও কাজে ফেরেননি ৯৬ জন। এছাড়া, অন্যান্য কারণে পুলিশের ৩৯ সদস্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ-ই আর কর্মস্থলে যোগ দেননি।

কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা পুলিশের চার কর্মকর্তাকে সর্বশেষ গত ১৪ জুলাই সাময়িক বরখাস্ত করে সরকার। এর মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ভাই ও ডিএমপির সহকারী কমিশনার (এসি) গোলাম রুহানীও রয়েছেন। রুহানী গত বছরের ১১ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। বরখাস্ত হওয়া বাকি তিন কর্মকর্তা হলেন- ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. রওশানুল হক সৈকত, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল ইসলাম এবং ডিএমপির (ট্রাফিক মিরপুর জোন) সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ।

পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ ৮ জুলাই দেওয়া তথ্যমতে, নানা অভিযোগে কর্মকর্তাসহ ৫১ জন পুলিশ সদস্যকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করা হয়েছে ৮২ জন সদস্যকে। তদন্তকারী সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে দিতে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে এনসিবি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমন-পীড়ন, হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ নানা অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬১ জন। গ্রেপ্তার-পরবর্তী তাদের প্রত্যেককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছ।

বাধ্যতামূলক অবসরে ৫১ কর্মকর্তা ওসি

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, নানা অভিযোগে কর্মকর্তাসহ ৫১ পুলিশ সদস্যকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, সিআইডির সাবেক প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আতিকুল ইসলাম, র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করা অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার হারুন-অর রশিদ, হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (অতিরিক্ত আইজিপি সুপারনিউমারারি) পরবর্তীতে ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত আইজিপি কৃষ্ণ পদ রায়, খন্দকার লুৎফুল কবির, মীর রেজাউল আলম, রেলওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, শিল্পাঞ্চল পুলিশের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) এ কে এম হাফিজ আক্তার, ঢাকা পুলিশ টেলিকমের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) বশির আহম্মদ, ডিআইজি আব্দুল বাতেন, ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, ডিআইজি আতিকুল ইসলাম, ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি-সিটিটিসি প্রধান) মো. আসাদুজ্জামান, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মোজাম্মেল হক, সরদার রকিবুল ইসলাম, মো. ইমাম হোসেন, অ্যাডিশনাল ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, আরআরএফ পুলিশ সুপার (পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্তির আদেশপ্রাপ্ত) মো. মীজানুর রহমান, এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, ডিএমপির সহকারী পুলিশ সুপার মো. দাদন ফকির, এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভূঁইয়া মাহবুব হাসান, সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান ঝন্টু, সিআইডির (এপিবিএনে বদলির আদেশপ্রাপ্ত) মো. জিয়াউর রহমান, এসবির সহকারী পুলিশ সুপার আবু মো. ফজলুল করিম, শিল্পাঞ্চল পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রনজিত কুমার বড়ুয়া, বেতবুনিয়া পিএসটিএসের সহকারী পুলিশ সুপার অপ্পেলা রাজু নাহা, সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. আক্তারুজ্জামান, সিলেট এসএমপির সহকারী পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আজিজুর রহমান সরকার।

জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা ২২টি মামলায় মোট ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। পলাতক রয়েছেন ৮৭ জন আসামি।

গত ১০ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান। ট্রাইব্যুনালে মামলার পরিসংখ্যান নিয়ে বলা হয়, মোট ৩৩৯টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি মিস কেইসে ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মোট ৩৯টি মামলার তদন্ত চলছে। এর মধ্যে সাবেক পুলিশ প্রধান ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালকসহ অন্তত সোয়া তিন ডজন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তারা প্রত্যেকে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।

ওই কর্মকর্তারা হলেন- সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের সাবেক উপ-কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা, রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন, র‌্যাবের দুই সাবেক কর্মকর্তা এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী, বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন, আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় বরখাস্ত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, দারুস সালাম জোনের সাবেক এডিসি এম এম মইনুল ইসলাম, ডিএমপির বাড্ডা জোনের সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা, ঢাকার ওয়ারী জোনের সাবেক এসি তানজিল আহমেদ, পুলিশের সাবেক এসি (ডিবি) জাবেদ ইকবাল, উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ওসি মো. মুজিবুর রহমান, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল হক, ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ, এসআই চঞ্চল চন্দ্র, সাবেক এসআই মো. আব্দুল মালেক, কনস্টেবল মুকুল হোসেন, শাহবাগ থানার ওসি অপারেশন মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন, মো. নাসিরুল ইসলাম, সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সাহা, রবিউল আলম, গাজীপুরের কোনাবাড়ি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিদর্শক কে এম আশরাফ উদ্দিন, গাজীপুরের সাবেক ডিবি সদস্য পরিদর্শক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল ফাহিম হাসান, কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান সজিব, মো. আকরাম হোসেন, উত্তরার কনস্টেবল হোসেন আলী ও সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপন।

পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ

এদিকে, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুলকে।

সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার আটক

জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় হওয়া একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহারকে ২০ জুন রাতে রাজধানীর বেইলি রোড থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ইকবাল বাহার বেইলি রোডের একটি ক্লাবে জুয়া খেলছিলেন। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিএমপি জানায়, গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী, মিরপুর মডেল ও গুলশান থানায় পৃথক তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ইকবাল বাহার ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পুলিশে যোগ দেন। ২০১৯ সালে সেখান থেকে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে স্বাভাবিক অবসরে যান।

ডিএমপির সাবেক কর্মকর্তা মশিউর ও জুয়েল বরখাস্তের পর গ্রেপ্তার

গত বছরের ২৪ নভেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান ও সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের আগেই ডিবির সাবেক ডিসি (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ও পুলিশ সুপার হিসেবে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত মশিউর রহমানকে নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার করে ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে পাঠানো হয়। অন্যদিকে, ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগের এডিসি (সুপারনিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) জুয়েল রানাকে নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার করে ১৮ অক্টোবর আদালতে পাঠানো হয়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য কয়েক ধাপে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা- ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। তাদের মধ্যে আর্থিক অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল

বরখাস্ত-অবসরে পাঠানো অধিকাংশ কর্মকর্তা আত্মগোপনে-পলাতক

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের পলাতক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কেউ কানাডা, কেউ ভারতে, আবার কেউ দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে আছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের মনিরুল ইসলাম ও ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, হারুন অর রশীদ ও বিপ্লব কুমার সরকার।

হাবিবুর রহমানের অবস্থান জানে না পুলিশ

৫ আগস্টের পরেও অনেকটা সরবে থাকা হাবিবুর রহমান এখন কোথায়, তা নিশ্চিত নয় পুলিশ। ২০০১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীতে দীর্ঘ ও আলোচিত কর্মজীবন সম্পন্ন করেন হাবিবুর রহমান। ৫ আগস্টও ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি সক্রিয় ছিলেন। ৫ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে আর উপস্থিত হননি। তিনি দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

গত ২৫ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের মামলায় হাবিবুরসহ চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। চানখাঁরপুলে আন্দোলন দমনের সময় ছয়জন নিহতের ঘটনায় হাবিবুরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, হাবিবুর নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং তার অধীনস্থরা গুলি চালায়। ২০ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে চানখাঁরপুলে পুলিশের ভূমিকা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত হয়। ২৫ মে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে বিচারাধীন মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তার, তার স্ত্রী ও সন্তানদের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত করা হয়। পরিবার ও ব্যক্তিগত কোম্পানির সব লেনদেন এবং ব্যাংক লকার ব্যবহারও সীমিত করা হয়।

তবে, হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ নেই। তার অবস্থানও স্পষ্ট নয়। তার গ্রেপ্তার হওয়াটাও প্রায় অনিশ্চিত।

ফেসবুকে সরব মনিরুল, ধরতে অনীহা পুলিশের

অন্যদিকে, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ও বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, নাকি দেশেই আছেন— তা নিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২৫ কোটি টাকা আনার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ফেসবুকে সরব থাকা মনিরুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তারে যেন অনীহা পুলিশের!

এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মনিরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হয়। ওই সময় তিনি বলেন, ‘আমি পালিয়ে যাইনি। পালাবও না। আমি দেশেই ছিলাম, দেশেই আছি। ভবিষ্যতে দেশেই থাকব।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অনেক সন্ত্রাসী, জঙ্গি জামিনে মুক্তি পেয়েছে; যাদের আমি নিজের হাতে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তারা আমাকে এখন হুমকি দিচ্ছে। আমি তো এখন পুলিশের কেউ নই। আমাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। আমি এখন স্বাধীন। তাই কোথায় আছি সেটা বলতে পারছি না। তবে, দেশেই আছি। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি বাসায় ফিরিনি।’

গত অক্টোবরে তিনি একটি টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পাসপোর্ট বাতিল হওয়ার কারণে দেশ ছাড়া সম্ভব হয়নি। দেশেই আছেন।’ তবে, মনিরুল ইসলামের দেশে থাকার এ দাবি মিথ্যা বলে উল্লেখ করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও আল-জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ওই অনুসন্ধানী সাংবাদিক লেখেন, “পলাতক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের বাংলাদেশে অবস্থানের দাবি মিথ্যা। অন্তত ৬ অক্টোবর (২০২৪ সাল) পর্যন্ত তিনি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ছিলেন। ৬ অক্টোবর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৯ মিনিটে তোলা ছবির ফরেনসিক অ্যানালাইসিস করে ‘নয়াদিল্লিতে তিনি ছিলেন’ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।”

Tag :
About Author Information

GOURANGA BOSE

জনপ্রিয় সংবাদ

ঠাকুরগাঁওয়ে বন্ধুমহল ব্লাড ডোনার সোসাইটির ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন সম্পন্ন

গুম,খুন ও গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত তবুও ধরা ছোঁয়ার বাইরে অপরাধী পুলিশ কর্মকর্তারা

আপডেট সময় : ০৩:০৯:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

 

পুলিশের রাজনৈতিক ভূমিকা ও ব্যাপক দমন-পীড়নের কারণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে’ রূপ নিয়েছিল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগে আওয়ামীলীগের স্বৈরাচারী শাসকের পতন ঘটে। দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ৫ আগস্টের পর দেশের সার্বিক নিরাপত্তা, আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে পুলিশের একাংশের বিতর্কিত ভূমিকা।

শুধু মাঠপর্যায়ে নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম জড়িয়েছে গুম, নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘন; সর্বোপরি অবৈধ সম্পদ অর্জনের মতো গুরুতর অভিযোগে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দলীয় লেজুড়বৃত্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে যেমন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, আবার অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে করা হয়েছে গ্রেপ্তার।তবে, অধিকাংশ ‘বিতর্কিত ও অপরাধী’ পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন পলাতক অবস্থায়। সময়মতো তাদের গ্রেপ্তার বা অবস্থান শনাক্ত করতে না পারায় প্রশ্ন উঠছে— আইন কি শুধুই দুর্বলদের জন্য, নাকি প্রভাবশালী পলাতক কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারে রয়েছে সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছার অভাব!

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের আল্টিমেটাম সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক প্রভাবশালী কর্মকর্তা আর কাজে যোগ দেননি। এমন পলাতক বা আত্মগোপনে থাকা কর্মকর্তাদের ‘অপরাধী’ হিসেবে সন্ধান করেও খুঁজে পাচ্ছে না বাহিনী-সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ ৮ জুলাই দেওয়া তথ্যমতে, নানা অভিযোগে কর্মকর্তাসহ ৫১ জন পুলিশ সদস্যকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করা হয়েছে ৮২ জন সদস্যকে। তদন্তকারী সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে দিতে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে এনসিবি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমন-পীড়ন, হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ নানা অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬১ জন। গ্রেপ্তার-পরবর্তী তাদের প্রত্যেককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

 

কর্মস্থলে অনুপস্থিতি ও বরখাস্ত কর্মকর্তারা

 

পুলিশের কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনতে গত ১১ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, পুলিশের যেসব সদস্য কাজে যোগ দেননি, তাদের জন্য শেষ সময় হচ্ছে ১৪ আগস্ট। ওই দিনের মধ্যে যদি কেউ যোগ না দেন, তাহলে ধরে নেওয়া হবে তারা চাকরি করতে ইচ্ছুক নন। এর আগে ৮ আগস্টের মধ্যে কর্মকর্তাসহ অনুপস্থিত সদস্যদের নিজ নিজ ইউনিটে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর (অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ৪০ দিন পর্যন্ত) কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ১৮৭ জন সদস্য। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডিআইজি (উপ-মহাপরিদর্শক) পদমর্যাদার একজন, অতিরিক্ত ডিআইজি সাতজন, পুলিশ সুপার দুজন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একজন, সহকারী পুলিশ সুপার পাঁচজন, পুলিশ পরিদর্শক পাঁচজন, এসআই ও সার্জেন্ট ১৪ জন, এএসআই নয়জন, নায়েক সাতজন ও কনস্টেবল ১৩৬ জন।এর মধ্যে কর্মস্থলে গরহাজির ৪৯ জন, স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেন তিনজন, ছুটি শেষ হয়ে গেলেও কাজে ফেরেননি ৯৬ জন। এছাড়া, অন্যান্য কারণে পুলিশের ৩৯ সদস্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ-ই আর কর্মস্থলে যোগ দেননি।

কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা পুলিশের চার কর্মকর্তাকে সর্বশেষ গত ১৪ জুলাই সাময়িক বরখাস্ত করে সরকার। এর মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ভাই ও ডিএমপির সহকারী কমিশনার (এসি) গোলাম রুহানীও রয়েছেন। রুহানী গত বছরের ১১ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। বরখাস্ত হওয়া বাকি তিন কর্মকর্তা হলেন- ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. রওশানুল হক সৈকত, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল ইসলাম এবং ডিএমপির (ট্রাফিক মিরপুর জোন) সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ।

পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ ৮ জুলাই দেওয়া তথ্যমতে, নানা অভিযোগে কর্মকর্তাসহ ৫১ জন পুলিশ সদস্যকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করা হয়েছে ৮২ জন সদস্যকে। তদন্তকারী সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে দিতে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে এনসিবি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমন-পীড়ন, হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ নানা অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬১ জন। গ্রেপ্তার-পরবর্তী তাদের প্রত্যেককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছ।

বাধ্যতামূলক অবসরে ৫১ কর্মকর্তা ওসি

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, নানা অভিযোগে কর্মকর্তাসহ ৫১ পুলিশ সদস্যকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, সিআইডির সাবেক প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আতিকুল ইসলাম, র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করা অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার হারুন-অর রশিদ, হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (অতিরিক্ত আইজিপি সুপারনিউমারারি) পরবর্তীতে ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত আইজিপি কৃষ্ণ পদ রায়, খন্দকার লুৎফুল কবির, মীর রেজাউল আলম, রেলওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, শিল্পাঞ্চল পুলিশের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) এ কে এম হাফিজ আক্তার, ঢাকা পুলিশ টেলিকমের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) বশির আহম্মদ, ডিআইজি আব্দুল বাতেন, ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, ডিআইজি আতিকুল ইসলাম, ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি-সিটিটিসি প্রধান) মো. আসাদুজ্জামান, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মোজাম্মেল হক, সরদার রকিবুল ইসলাম, মো. ইমাম হোসেন, অ্যাডিশনাল ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, আরআরএফ পুলিশ সুপার (পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্তির আদেশপ্রাপ্ত) মো. মীজানুর রহমান, এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, ডিএমপির সহকারী পুলিশ সুপার মো. দাদন ফকির, এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভূঁইয়া মাহবুব হাসান, সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান ঝন্টু, সিআইডির (এপিবিএনে বদলির আদেশপ্রাপ্ত) মো. জিয়াউর রহমান, এসবির সহকারী পুলিশ সুপার আবু মো. ফজলুল করিম, শিল্পাঞ্চল পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রনজিত কুমার বড়ুয়া, বেতবুনিয়া পিএসটিএসের সহকারী পুলিশ সুপার অপ্পেলা রাজু নাহা, সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. আক্তারুজ্জামান, সিলেট এসএমপির সহকারী পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আজিজুর রহমান সরকার।

জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা ২২টি মামলায় মোট ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। পলাতক রয়েছেন ৮৭ জন আসামি।

গত ১০ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান। ট্রাইব্যুনালে মামলার পরিসংখ্যান নিয়ে বলা হয়, মোট ৩৩৯টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি মিস কেইসে ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মোট ৩৯টি মামলার তদন্ত চলছে। এর মধ্যে সাবেক পুলিশ প্রধান ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালকসহ অন্তত সোয়া তিন ডজন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তারা প্রত্যেকে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।

ওই কর্মকর্তারা হলেন- সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের সাবেক উপ-কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা, রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন, র‌্যাবের দুই সাবেক কর্মকর্তা এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী, বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন, আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় বরখাস্ত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, দারুস সালাম জোনের সাবেক এডিসি এম এম মইনুল ইসলাম, ডিএমপির বাড্ডা জোনের সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা, ঢাকার ওয়ারী জোনের সাবেক এসি তানজিল আহমেদ, পুলিশের সাবেক এসি (ডিবি) জাবেদ ইকবাল, উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ওসি মো. মুজিবুর রহমান, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল হক, ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ, এসআই চঞ্চল চন্দ্র, সাবেক এসআই মো. আব্দুল মালেক, কনস্টেবল মুকুল হোসেন, শাহবাগ থানার ওসি অপারেশন মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন, মো. নাসিরুল ইসলাম, সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সাহা, রবিউল আলম, গাজীপুরের কোনাবাড়ি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিদর্শক কে এম আশরাফ উদ্দিন, গাজীপুরের সাবেক ডিবি সদস্য পরিদর্শক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল ফাহিম হাসান, কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান সজিব, মো. আকরাম হোসেন, উত্তরার কনস্টেবল হোসেন আলী ও সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপন।

পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ

এদিকে, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুলকে।

সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার আটক

জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় হওয়া একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহারকে ২০ জুন রাতে রাজধানীর বেইলি রোড থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ইকবাল বাহার বেইলি রোডের একটি ক্লাবে জুয়া খেলছিলেন। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিএমপি জানায়, গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী, মিরপুর মডেল ও গুলশান থানায় পৃথক তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ইকবাল বাহার ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পুলিশে যোগ দেন। ২০১৯ সালে সেখান থেকে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে স্বাভাবিক অবসরে যান।

ডিএমপির সাবেক কর্মকর্তা মশিউর ও জুয়েল বরখাস্তের পর গ্রেপ্তার

গত বছরের ২৪ নভেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান ও সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের আগেই ডিবির সাবেক ডিসি (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ও পুলিশ সুপার হিসেবে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত মশিউর রহমানকে নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার করে ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে পাঠানো হয়। অন্যদিকে, ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগের এডিসি (সুপারনিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) জুয়েল রানাকে নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার করে ১৮ অক্টোবর আদালতে পাঠানো হয়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য কয়েক ধাপে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা- ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। তাদের মধ্যে আর্থিক অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল

বরখাস্ত-অবসরে পাঠানো অধিকাংশ কর্মকর্তা আত্মগোপনে-পলাতক

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের পলাতক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কেউ কানাডা, কেউ ভারতে, আবার কেউ দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে আছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের মনিরুল ইসলাম ও ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, হারুন অর রশীদ ও বিপ্লব কুমার সরকার।

হাবিবুর রহমানের অবস্থান জানে না পুলিশ

৫ আগস্টের পরেও অনেকটা সরবে থাকা হাবিবুর রহমান এখন কোথায়, তা নিশ্চিত নয় পুলিশ। ২০০১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীতে দীর্ঘ ও আলোচিত কর্মজীবন সম্পন্ন করেন হাবিবুর রহমান। ৫ আগস্টও ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি সক্রিয় ছিলেন। ৫ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে আর উপস্থিত হননি। তিনি দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

গত ২৫ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের মামলায় হাবিবুরসহ চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। চানখাঁরপুলে আন্দোলন দমনের সময় ছয়জন নিহতের ঘটনায় হাবিবুরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, হাবিবুর নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং তার অধীনস্থরা গুলি চালায়। ২০ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে চানখাঁরপুলে পুলিশের ভূমিকা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত হয়। ২৫ মে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে বিচারাধীন মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তার, তার স্ত্রী ও সন্তানদের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত করা হয়। পরিবার ও ব্যক্তিগত কোম্পানির সব লেনদেন এবং ব্যাংক লকার ব্যবহারও সীমিত করা হয়।

তবে, হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ নেই। তার অবস্থানও স্পষ্ট নয়। তার গ্রেপ্তার হওয়াটাও প্রায় অনিশ্চিত।

ফেসবুকে সরব মনিরুল, ধরতে অনীহা পুলিশের

অন্যদিকে, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ও বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, নাকি দেশেই আছেন— তা নিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২৫ কোটি টাকা আনার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ফেসবুকে সরব থাকা মনিরুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তারে যেন অনীহা পুলিশের!

এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মনিরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হয়। ওই সময় তিনি বলেন, ‘আমি পালিয়ে যাইনি। পালাবও না। আমি দেশেই ছিলাম, দেশেই আছি। ভবিষ্যতে দেশেই থাকব।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অনেক সন্ত্রাসী, জঙ্গি জামিনে মুক্তি পেয়েছে; যাদের আমি নিজের হাতে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তারা আমাকে এখন হুমকি দিচ্ছে। আমি তো এখন পুলিশের কেউ নই। আমাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। আমি এখন স্বাধীন। তাই কোথায় আছি সেটা বলতে পারছি না। তবে, দেশেই আছি। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি বাসায় ফিরিনি।’

গত অক্টোবরে তিনি একটি টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পাসপোর্ট বাতিল হওয়ার কারণে দেশ ছাড়া সম্ভব হয়নি। দেশেই আছেন।’ তবে, মনিরুল ইসলামের দেশে থাকার এ দাবি মিথ্যা বলে উল্লেখ করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও আল-জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ওই অনুসন্ধানী সাংবাদিক লেখেন, “পলাতক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের বাংলাদেশে অবস্থানের দাবি মিথ্যা। অন্তত ৬ অক্টোবর (২০২৪ সাল) পর্যন্ত তিনি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ছিলেন। ৬ অক্টোবর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৯ মিনিটে তোলা ছবির ফরেনসিক অ্যানালাইসিস করে ‘নয়াদিল্লিতে তিনি ছিলেন’ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।”