ঢাকা ০৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
ঠাকুরগাঁওয়ে বন্ধুমহল ব্লাড ডোনার সোসাইটির ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন সম্পন্ন বিটিভির বার্তা বিভাগে ক্ষমতার অপব্যবস্থাপনা: মুন্সী ফরিদুজামান ও সৈয়দা তাসমিনা আহমেদের নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি নিয়ে নতুন বিতর্ক ঠাকুরগাঁও সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১৪ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ ঠাকুরগাঁওয়ে সেনা অভিযানে ২১ বোতল ফেন্সিডিলসহ তালিকাভুক্ত জুলাই যোদ্ধা আটক গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা: রাজৈরে মানববন্ধন, দোষীদের ফাঁসির দাবি এস. আলম গ্রুপের ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ: ১১৭ দেশে নজিরবিহীন অনুসন্ধান জামায়াতের ভাব বেড়ে গেছে: গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জালিয়াতির চক্রে রাজউক।নথি জালিয়াতিতে জড়িত রাজউকের বিশেষ চক্রের সাথে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ। লক্ষ্মীপুরে আলোচিত যুবলীগ–ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার উখিয়ায় অস্ত্র-গুলিসহ আরাকান আর্মির এক সদস্যের আত্মসমর্পণ

কর কান্ডে নয়া মোড়,তিন শতাধিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ,তদন্তে আয়কর গোয়েন্দা ইউনিট

  • স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০১:২৬:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
  • ২২ জন সংবাদটি পড়েছেন

 

সরকারের তিন শতাধিক প্রকৌশলীর আয়কর ফাঁকির তদন্ত শুরু করেছে এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এর মধ্যে এলজিইডির ৩০ জন এবং সড়ক ও জনপথের ১০ জন। বাকিরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত, পিডিবি, ওয়াসা, বিভিন্ন সিটি করপোরেশনসহ সরকারি অন্যান্য দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ প্রকৌশলী ২-৩ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের আয়কর নথি বিভিন্ন কর অঞ্চল থেকে আয়কর গোয়েন্দার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।

আয়কর গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, তারা দেশে আত্মীয়-স্বজনের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গড়ে তুলেছেন। মৎস্য ও পোলট্রি খামারে বিনিয়োগের নামে অবৈধ আয় গোপন করেছেন, দিয়েছেন কর ফাঁকি।

এ বিষয়ে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব বলেন, ‘কয়েকজন প্রকৌশলীর সব ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। কর ফাঁকি শনাক্ত হওয়ায় কর বাবদ কয়েকজন প্রকৌশলী তাদের কর জমাও দিয়েছেন। এসব প্রকৌশলীর আয়কর নথিতে প্রদর্শন না করা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ খোঁজা হচ্ছে। তাদের বিষয়ে রেকর্ডপত্র চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রিহ্যাব, ভূমি অফিস, বিআরটিএ, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

এসব প্রকৌশলীর মধ্যে সিলেট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম ফারুক হোসেন, তার স্ত্রী মাহফুজা খাতুন ও মেয়ে তাসমিয়া ফাতেহা ফারুকের সব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল বিভিন্ন ব্যাংকে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। তাদের তিনজনের ৩ কোটি টাকার বেশি কর ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের নামে ৮০টির বেশি এফডিআর রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগ আয়কর নথিতে প্রদর্শন করা হয়নি। মেয়ের নামে মৎস্য ও পোলট্রি খামার থেকে আয় প্রদর্শন করা হলেও খামারের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তিনি খুলনা কর অঞ্চলের সাতক্ষীরা সার্কেলের করদাতা।

জানতে চাইলে প্রকৌশলী কেএম ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমার আয়কর নথি আয়কর গোয়েন্দা নিয়েছে, এটা জানি। তারা বলেছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পুনরায় হিসাব চালু করে দেবে।’

এলজিইডির আরেক প্রকৌশলী এসএম কবির ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকার কর ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে আয়কর গোয়েন্দা।

প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানের বাড়ি লক্ষ্মীপুর। তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী। তার স্ত্রীর নামে আটতলা বাড়ি পাওয়া গেছে। কর ফাঁকি শনাক্ত হওয়ায় এ প্রকৌশলী এরই মধ্যে ১ কোটি টাকার কর জমা দিয়েছেন। প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি ২০ বছরের মতো সিলেটেই আছি। আমার কর নথি সিলেটে। তারা অন্যায়ভাবে কর চাপিয়ে দিয়েছে।’

এছাড়া এলজিইডির ফিরোজ আলম তালুকদার, বাচ্চু মিয়া, সড়ক ও জনপথের মনিরুল ইসলাম, পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ ও পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান ও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রব্বেসহ ৩০০ প্রকৌশলীর আয়কর নথির তদন্ত চলছে।

তাদের মধ্যে খালেদ মাহমুদ ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ৩৪তম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। তার আগে তিনি পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর এক বছর মেয়াদে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে পুনরায় নিয়োগ দেয়া হয়। তার আগে তিনি ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পিডিবির ৩৮তম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি পিডিবির সদস্য, কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান। সরকার বদলের পর সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের ঢাকা সার্কেলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিয়ে জয়দেবপুর-বেদগ্রাম-ভূলতা-মদনপুর বাইপাস প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক করা হয়।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রব্বে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ফজলে রব্বেকে ঢাকায় প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরসংলগ্ন ছুটি, প্রশিক্ষণ ও প্রেষণজনিত সংরক্ষিত (সিভিল) পদে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে পদায়ন করা হয়।

Tag :
About Author Information

GOURANGA BOSE

জনপ্রিয় সংবাদ

ঠাকুরগাঁওয়ে বন্ধুমহল ব্লাড ডোনার সোসাইটির ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন সম্পন্ন

কর কান্ডে নয়া মোড়,তিন শতাধিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ,তদন্তে আয়কর গোয়েন্দা ইউনিট

আপডেট সময় : ০১:২৬:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

 

সরকারের তিন শতাধিক প্রকৌশলীর আয়কর ফাঁকির তদন্ত শুরু করেছে এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এর মধ্যে এলজিইডির ৩০ জন এবং সড়ক ও জনপথের ১০ জন। বাকিরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত, পিডিবি, ওয়াসা, বিভিন্ন সিটি করপোরেশনসহ সরকারি অন্যান্য দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ প্রকৌশলী ২-৩ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের আয়কর নথি বিভিন্ন কর অঞ্চল থেকে আয়কর গোয়েন্দার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।

আয়কর গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, তারা দেশে আত্মীয়-স্বজনের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গড়ে তুলেছেন। মৎস্য ও পোলট্রি খামারে বিনিয়োগের নামে অবৈধ আয় গোপন করেছেন, দিয়েছেন কর ফাঁকি।

এ বিষয়ে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব বলেন, ‘কয়েকজন প্রকৌশলীর সব ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। কর ফাঁকি শনাক্ত হওয়ায় কর বাবদ কয়েকজন প্রকৌশলী তাদের কর জমাও দিয়েছেন। এসব প্রকৌশলীর আয়কর নথিতে প্রদর্শন না করা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ খোঁজা হচ্ছে। তাদের বিষয়ে রেকর্ডপত্র চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রিহ্যাব, ভূমি অফিস, বিআরটিএ, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

এসব প্রকৌশলীর মধ্যে সিলেট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম ফারুক হোসেন, তার স্ত্রী মাহফুজা খাতুন ও মেয়ে তাসমিয়া ফাতেহা ফারুকের সব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল বিভিন্ন ব্যাংকে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। তাদের তিনজনের ৩ কোটি টাকার বেশি কর ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের নামে ৮০টির বেশি এফডিআর রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগ আয়কর নথিতে প্রদর্শন করা হয়নি। মেয়ের নামে মৎস্য ও পোলট্রি খামার থেকে আয় প্রদর্শন করা হলেও খামারের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তিনি খুলনা কর অঞ্চলের সাতক্ষীরা সার্কেলের করদাতা।

জানতে চাইলে প্রকৌশলী কেএম ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমার আয়কর নথি আয়কর গোয়েন্দা নিয়েছে, এটা জানি। তারা বলেছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পুনরায় হিসাব চালু করে দেবে।’

এলজিইডির আরেক প্রকৌশলী এসএম কবির ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকার কর ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে আয়কর গোয়েন্দা।

প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানের বাড়ি লক্ষ্মীপুর। তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী। তার স্ত্রীর নামে আটতলা বাড়ি পাওয়া গেছে। কর ফাঁকি শনাক্ত হওয়ায় এ প্রকৌশলী এরই মধ্যে ১ কোটি টাকার কর জমা দিয়েছেন। প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি ২০ বছরের মতো সিলেটেই আছি। আমার কর নথি সিলেটে। তারা অন্যায়ভাবে কর চাপিয়ে দিয়েছে।’

এছাড়া এলজিইডির ফিরোজ আলম তালুকদার, বাচ্চু মিয়া, সড়ক ও জনপথের মনিরুল ইসলাম, পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ ও পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান ও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রব্বেসহ ৩০০ প্রকৌশলীর আয়কর নথির তদন্ত চলছে।

তাদের মধ্যে খালেদ মাহমুদ ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ৩৪তম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। তার আগে তিনি পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর এক বছর মেয়াদে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে পুনরায় নিয়োগ দেয়া হয়। তার আগে তিনি ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পিডিবির ৩৮তম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি পিডিবির সদস্য, কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান। সরকার বদলের পর সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের ঢাকা সার্কেলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিয়ে জয়দেবপুর-বেদগ্রাম-ভূলতা-মদনপুর বাইপাস প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক করা হয়।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রব্বে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ফজলে রব্বেকে ঢাকায় প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরসংলগ্ন ছুটি, প্রশিক্ষণ ও প্রেষণজনিত সংরক্ষিত (সিভিল) পদে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে পদায়ন করা হয়।