ঢাকা ০৭:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
জনগণ প্রচলিত রাজনীতির পরিবর্তন চায়: তারেক রহমান মাগুরায় সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮৭ লাখ টাকা উধাও: গ্রাহকের অভিযোগে তোলপাড় ঠাকুরগাঁওয়ে বন্ধুমহল ব্লাড ডোনার সোসাইটির ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন সম্পন্ন বিটিভির বার্তা বিভাগে ক্ষমতার অপব্যবস্থাপনা: মুন্সী ফরিদুজামান ও সৈয়দা তাসমিনা আহমেদের নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি নিয়ে নতুন বিতর্ক ঠাকুরগাঁও সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১৪ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ ঠাকুরগাঁওয়ে সেনা অভিযানে ২১ বোতল ফেন্সিডিলসহ তালিকাভুক্ত জুলাই যোদ্ধা আটক গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা: রাজৈরে মানববন্ধন, দোষীদের ফাঁসির দাবি এস. আলম গ্রুপের ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ: ১১৭ দেশে নজিরবিহীন অনুসন্ধান জামায়াতের ভাব বেড়ে গেছে: গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জালিয়াতির চক্রে রাজউক।নথি জালিয়াতিতে জড়িত রাজউকের বিশেষ চক্রের সাথে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ।

অফিস বয় থেকে কোটিপতি। ইসলামী শিল্পগোষ্ঠী “কলরব”কে ঘিরে ভয়ঙ্কর দুর্নীতির অভিযোগ।

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১০:৫০:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • ৬০ জন সংবাদটি পড়েছেন

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামী সংগীত পরিবেশক দল ‘কলরব’ এখন আর শুধু সংগীতের নাম নয়, বরং এক চরম বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবার অভিযোগ করছে, কলরবকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত কোটি টাকার এক দুর্নীতির সাম্রাজ্য। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার বড় ভাই মো. শামসুল আলম।

সংবাদ সম্মেলনে শামসুল আলম বলেন, কলরব তার ভাইয়ের হৃদয়ের সংগঠন ছিল, যেটি তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গড়ে তুলেছেন নিষ্ঠা ও শ্রম দিয়ে। কিন্তু আজ সেই সংগঠনটি অফিস বয় বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হাতে পড়ে লুটপাটের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর মোবাইল ফোনে কলার টিউন ও রিং ব্যাক টিউন হিসেবে কলরবের গজল ব্যবহারে বিপুল অর্থ আয় শুরু হয়, কিন্তু পরিবারের সদস্যদের কাছে সে আয়ের কোনো হিসাব কখনোই আসেনি। বরং কৌশলে সংগঠনের সমস্ত আয় এবং মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন বদরুজ্জামান। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নামে আসা স্পন্সর, অনুদান, কনটেন্ট আয়ের সমস্ত কিছুই জমা হয় এখন তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ‘হলিটিউন’-এর নামে। মধ্যরাতে সমাবেশস্থলের ছবি পোস্ট করে যা বললেন সাইদী পুত্র ।সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী উম্মে হাবিবা বলেন, তার সন্তানরা আজ এতিম। তারা কলরবের প্রতিষ্ঠাতার উত্তরসূরি হয়েও কোনো সম্মান, কোনো আর্থিক সুবিধা তো দূরে থাক, বরং সবদিক থেকেই বঞ্চিত। অথচ যারা একসময় অফিস বয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তারা এখন একের পর এক ফ্ল্যাট, গাড়ি, প্রোডাকশন হাউজের মালিক।

সংবাদ সম্মেলনে আজাদের পরিবার দাবি করে, কলরবের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক বদরুজ্জামান এবং প্রধান পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌস শুধু সংগঠনের অর্থ আত্মসাৎ করেননি, বরং প্রতিষ্ঠাতার স্মৃতি, শ্রম ও সুনামকেও ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের পেছনে। সংগঠনের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের নাম বদলে ‘হলিটিউন’ করে ফেলা হয়েছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব শুধু গোপনই নয়, বরং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অন্যান্য সদস্যদের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে মাসোহারা, উপহার এবং হুমকির মাধ্যমে।

আজাদের পরিবারের ভাষ্য, কলরব প্রতিষ্ঠার সময় যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই আজ সংগঠন থেকে বিদায় নিয়েছেন, কেউ কেউ চুপ থাকেন নিরুপায় হয়ে। যারা প্রশ্ন তুলেছেন, তারা একে একে বহিষ্কৃত হয়েছেন। অথচ সংগঠনের আয় বছরের পর বছর ধরে বেড়েছে মোবাইল ফোন কোম্পানি, কর্পোরেট স্পন্সর, ইউটিউব এবং ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এসব থেকে সংগঠনের তেমন কোনো স্থায়ী সম্পদ তৈরি না হলেও বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠজনরা হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক, যা তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০৪ সালে ইসলামী শিল্পগোষ্ঠী ‘কলরব’ প্রতিষ্ঠা করেন আইনুদ্দীন আল আজাদ। ২০১০ সালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলে কলরব শিল্পগোষ্ঠী বদরুজ্জামান ও রশিদ আহম্মেদ ফেরদৌস পরিচালনা করে আসছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কথা ছিল শিল্পগোষ্ঠী কলরব থেকে উপার্জিত অর্থ তার পরিবারকে প্রদান করা হবে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি আয় হলেও আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবারকে কিছুই দেওয়া হয় না। উপরন্ত জালিলয়াতির মাধ্যমে শিল্পীগোষ্ঠী সমস্ত সম্পদ নিজেদের নাম করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, শিল্পগোষ্ঠী কলরবের অফিস বয় বদরুজ্জামান ইউটিউব, ব্রাইট সলিউশন মাল্টিমিডিয়া লিমিডেট ও হলি টিউনসহ বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্রবাসি সিটি, হেলিকপ্টারসহ গ্রুপ অব কোম্পানীর শীর্ষ শেয়ারদারী মালিক। অথচ আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবার আজ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন, স্ত্রী ও সন্তানরা আর্থিক কষ্টে ভুগছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যানের মধ্যে আইনুদ্দীন আল আজাদের স্ত্রী উম্মে হাবিবা, শ্বশুর গোলাম নবী, ছেলে গালিব বিন আজাদ, বড় মামা সাইফুল ইসলাম ও ছোট মামা শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

Tag :
About Author Information

GOURANGA BOSE

জনপ্রিয় সংবাদ

জনগণ প্রচলিত রাজনীতির পরিবর্তন চায়: তারেক রহমান

অফিস বয় থেকে কোটিপতি। ইসলামী শিল্পগোষ্ঠী “কলরব”কে ঘিরে ভয়ঙ্কর দুর্নীতির অভিযোগ।

আপডেট সময় : ১০:৫০:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামী সংগীত পরিবেশক দল ‘কলরব’ এখন আর শুধু সংগীতের নাম নয়, বরং এক চরম বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবার অভিযোগ করছে, কলরবকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত কোটি টাকার এক দুর্নীতির সাম্রাজ্য। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার বড় ভাই মো. শামসুল আলম।

সংবাদ সম্মেলনে শামসুল আলম বলেন, কলরব তার ভাইয়ের হৃদয়ের সংগঠন ছিল, যেটি তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গড়ে তুলেছেন নিষ্ঠা ও শ্রম দিয়ে। কিন্তু আজ সেই সংগঠনটি অফিস বয় বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হাতে পড়ে লুটপাটের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর মোবাইল ফোনে কলার টিউন ও রিং ব্যাক টিউন হিসেবে কলরবের গজল ব্যবহারে বিপুল অর্থ আয় শুরু হয়, কিন্তু পরিবারের সদস্যদের কাছে সে আয়ের কোনো হিসাব কখনোই আসেনি। বরং কৌশলে সংগঠনের সমস্ত আয় এবং মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন বদরুজ্জামান। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নামে আসা স্পন্সর, অনুদান, কনটেন্ট আয়ের সমস্ত কিছুই জমা হয় এখন তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ‘হলিটিউন’-এর নামে। মধ্যরাতে সমাবেশস্থলের ছবি পোস্ট করে যা বললেন সাইদী পুত্র ।সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী উম্মে হাবিবা বলেন, তার সন্তানরা আজ এতিম। তারা কলরবের প্রতিষ্ঠাতার উত্তরসূরি হয়েও কোনো সম্মান, কোনো আর্থিক সুবিধা তো দূরে থাক, বরং সবদিক থেকেই বঞ্চিত। অথচ যারা একসময় অফিস বয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তারা এখন একের পর এক ফ্ল্যাট, গাড়ি, প্রোডাকশন হাউজের মালিক।

সংবাদ সম্মেলনে আজাদের পরিবার দাবি করে, কলরবের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক বদরুজ্জামান এবং প্রধান পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌস শুধু সংগঠনের অর্থ আত্মসাৎ করেননি, বরং প্রতিষ্ঠাতার স্মৃতি, শ্রম ও সুনামকেও ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের পেছনে। সংগঠনের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের নাম বদলে ‘হলিটিউন’ করে ফেলা হয়েছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব শুধু গোপনই নয়, বরং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অন্যান্য সদস্যদের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে মাসোহারা, উপহার এবং হুমকির মাধ্যমে।

আজাদের পরিবারের ভাষ্য, কলরব প্রতিষ্ঠার সময় যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই আজ সংগঠন থেকে বিদায় নিয়েছেন, কেউ কেউ চুপ থাকেন নিরুপায় হয়ে। যারা প্রশ্ন তুলেছেন, তারা একে একে বহিষ্কৃত হয়েছেন। অথচ সংগঠনের আয় বছরের পর বছর ধরে বেড়েছে মোবাইল ফোন কোম্পানি, কর্পোরেট স্পন্সর, ইউটিউব এবং ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এসব থেকে সংগঠনের তেমন কোনো স্থায়ী সম্পদ তৈরি না হলেও বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠজনরা হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক, যা তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০৪ সালে ইসলামী শিল্পগোষ্ঠী ‘কলরব’ প্রতিষ্ঠা করেন আইনুদ্দীন আল আজাদ। ২০১০ সালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলে কলরব শিল্পগোষ্ঠী বদরুজ্জামান ও রশিদ আহম্মেদ ফেরদৌস পরিচালনা করে আসছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কথা ছিল শিল্পগোষ্ঠী কলরব থেকে উপার্জিত অর্থ তার পরিবারকে প্রদান করা হবে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি আয় হলেও আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবারকে কিছুই দেওয়া হয় না। উপরন্ত জালিলয়াতির মাধ্যমে শিল্পীগোষ্ঠী সমস্ত সম্পদ নিজেদের নাম করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, শিল্পগোষ্ঠী কলরবের অফিস বয় বদরুজ্জামান ইউটিউব, ব্রাইট সলিউশন মাল্টিমিডিয়া লিমিডেট ও হলি টিউনসহ বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্রবাসি সিটি, হেলিকপ্টারসহ গ্রুপ অব কোম্পানীর শীর্ষ শেয়ারদারী মালিক। অথচ আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবার আজ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন, স্ত্রী ও সন্তানরা আর্থিক কষ্টে ভুগছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যানের মধ্যে আইনুদ্দীন আল আজাদের স্ত্রী উম্মে হাবিবা, শ্বশুর গোলাম নবী, ছেলে গালিব বিন আজাদ, বড় মামা সাইফুল ইসলাম ও ছোট মামা শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।