ফাইলের নথি জালিয়াতি করে একজনের প্লট অন্যজনকে বিক্রিতে সহায়তায় জড়িত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একটি বিশেষ চক্র। চক্রটি অত্যন্ত সুকৌশলে ফাইলে থাকা অভিযোগ নথি ও চেয়ারম্যানের অনুমোদিত নোটাংশ ফেলে দিয়ে নিজেদের মতো ফাইল তৈরি করে পুনরায় অনুমোদনের জন্য পাঠায়। এতে প্রকৃত বরাদ্দ গ্রহীতার প্লটটি অন্যজন বিক্রি করার সুযোগ পায়। আম মোক্তার দলিল রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে এই জালিয়াতি ধরা পড়ে। এমন ঘটনায় সংস্থাটির কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জড়িত কর্মকর্তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজউক কর্তৃপক্ষ।
রাজউকের প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, যারা ফাইল বা নথি গায়েবে জড়িত, তাদের কোনো ছাড় নেই। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রত্যাহার করে প্রশাসনে ন্যস্ত ও পরে বিভাগীয় মামলাসহ যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগে জানা গেছে, নথি গায়েব সিন্ডিকেটে রাজউকের সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন, উপ-পরিচালক মো. মাহবুবার রহমান, অফিস সহায়ক মো. আমিনুল ইসলাম ও কনিষ্ঠ হিসাব সহকারী আবুল কাশেম মুহাম্মদ শরীফ খান জড়িত। তারা পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৫-৩০২-১৯ প্লটের আইডি নথির নোট গায়েব করে নতুন নোট উপস্থাপন করেছেন। এর আগে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কাজটি করার জন্য পরিকল্পনা করে এই সিন্ডিকেট। ওই প্লটের আইডি নথির নোটে রাজউক চেয়ারম্যান আম মোক্তার দলিল রেজিস্ট্রির অনুমোদন স্থগিত করেছিলেন। রাজউকের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে জালিয়াতির কাজটি করেন একসময় এই সংস্থারই আউটসোর্সিং কাজে নিয়োজিত আব্দুর রহিম। যদিও অভিযোগের কোথাও তার নাম নেই।
অভিযোগের বিষয়ে উপ-পরিচালক মো. মাহবুবার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সারাক্ষণ বার্তাকে বলেন, ‘ক্ষমা করবেন, দাপ্তরিক/অফিসিয়াল কোনো ব্যাপারে কথা বলার এখতিয়ার আমার নেই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক কর্মকর্তা সারাক্ষণ বার্তাকে জানান, শুধু এই চারজনই না, এদের বাইরেও একটা দালাল চক্র রয়েছে। তারাই মূলত ডিলিং করে। এখানে বড় অঙ্কের ডিলিং হয়েছে বলে শুনেছি।
জানা গেছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকার ২৫নং সেক্টরের রোড-৩০২ এর ১৯ প্লটটি মূল অধিবাসী ক্যাটাগরিতে বরাদ্দপ্রাপ্ত মো. আবদুল মজিদ, পিতা মো. কফিল মিয়া ও ফাতেমা বেগম, স্বামী মো. মজিদ মিয়া, দিল জাহানের নামে আম মোক্তার দলিল রেজিস্ট্রির জন্য ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আম মোক্তার দলিল রেজিস্ট্রির প্রস্তাব ২০২৫ সালের ২২ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট প্লটের নথিতে উত্থাপন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ফাতেমা ইসলাম, স্বামী মহসিন আলী রেজিস্ট্রিকৃত বায়নামূলে ওই প্লটের দাবিদার উল্লেখ করে এবং প্রয়োজনীয় কাগজ উপস্থাপন করে রাজউকে আবেদন করে জানান, প্লটটি অন্যত্র বিক্রি করার পাঁয়তারা করছে অন্য একটি পক্ষ। তাই তিনি প্লটের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য গত ১৬ ফেব্রুয়ারি একটি অভিযোগ দাখিল করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) অভিযোগটি নথিভুক্ত করে নথির কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করে বিষয়টি তদন্তের জন্য চেয়ারম্যান বরাবর প্রস্তাব পাঠান।
জানা গেছে, চেয়ারম্যান উক্ত প্রস্তাব ২০ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দিয়ে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) এর দপ্তরে প্রেরণ করেন। সেখান থেকে উক্ত দপ্তরের নথি মুভমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক মো. আমিনুল ইসলাম নথিটিকে রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করে সংশ্লিষ্ট সহকারীকে না দিয়ে অন্য সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কনিষ্ঠ হিসেবে সহকারী আবুল কাশেম মুহাম্মদ শরীফ খানের হাতে হাতে দিয়ে দেন। এরপর আবুল কাশেম মুহাম্মদ শরীফ খান নথির নোটাংশের চেয়ারম্যান কর্তৃক অনুমোদিত নির্দেশনা এবং পত্রাংশের অভিযোগকারীর অভিযোগপত্র ও প্রমাণক নথি হতে অপসারণ করে নতুন করে পূর্বের অনুচ্ছেদ ১৬-২৩ মুদ্রিত করে আম মোক্তার দলিল রেজিস্ট্রির অনুমোদন প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সেই প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালকের পরিবর্তে অন্য সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন ও উপ-পরিচালক মো. মাহাবুবার রহমান কর্তৃক স্বাক্ষর করে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ফাতেমা ইসলামের পুনরায় দাখিলকৃত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-১) বিষয়টির তদন্তের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করেন।
নথি ছিঁড়ে ফেলা গুরুতর অপরাধ জানিয়ে উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মো. লিটন সরকার আমাদের সময়কে বলেন, যে কাজটি করা হয়েছে, সেটা গুরুতর অপরাধ। জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার প্রস্তুতি চলছে।