বছরের পর বছর ধরে এস. আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগ বাংলাদেশে এক খোলা গোপন রহস্য ছিল। শেখ হাসিনার পতনের পর গত দুই বছরে সেই অভিযোগের ব্যাপ্তি নতুন করে সামনে আসছে। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে অভিযোগ উঠেছে, অন্তত ৪৭০টি শেল কোম্পানির মাধ্যমে নয়টি দেশে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২,২৩,৮৫৫ কোটি টাকা) পাচার করা হয়েছে—যা বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (BFIU) নেতৃত্বে এবার নজিরবিহীনভাবে ১১৭টি দেশে অনুসন্ধান চালানো হয়, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। সাইপ্রাস, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, ইতালি, তুরস্ক, জার্সি, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং আইল অব ম্যানসহ ৯টি দেশে এস. আলম পরিবারের বিনিয়োগ শনাক্ত হয়। সাতটি দেশ ইতোমধ্যে গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছে, চারটি দেশে ব্যাংক রেকর্ড জব্দে আদালতের আদেশ কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায়।
ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে ২০১৮-২০২১ সালের মধ্যে নিবন্ধিত ১৯টি কোম্পানি পাওয়া গেছে, যার একটি গ্রিনউইচ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড নিবন্ধিত হয় শেখ হাসিনার পতনের কয়েক সপ্তাহ পর। জার্সিতে সাইফুল আলম ও স্ত্রী ফারজানা পারভীন ৬টি ট্রাস্টের মাধ্যমে দুটি ৫-তারকা হোটেলের মালিক, বাজারমূল্য প্রায় ২১০ মিলিয়ন ডলার।
তুরস্কে দুই ভাই শহিদুল আলম ও ওসমান গনির নামে অন্তত ১০টি প্রিমিয়াম ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। দুবাইয়ে জামাতা বেলাল আহমেদের নামে ৬টি বিলাসবহুল ভিলা ও ২টি জমির প্লট (মূল্য প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার)। আইল অব ম্যান-এ ছেলে আশরাফুল আলমের নামে ৭ মিলিয়ন ডলারের ভিলা, যা তার মা ফারজানা পারভীনের উপহার হিসেবে নিবন্ধিত।
বেলাল আহমেদ অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার নাগরিকত্ব কিনেছেন বিনিয়োগের মাধ্যমে, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে ১ লাখ ডলার দিয়ে। এই অর্থ কানাডার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করা হয়।
ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি জোরপূর্বক দখল। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দখল ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর। প্রক্সি কোম্পানির মাধ্যমে শেয়ার কেনা ও ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ। ভুয়া ঋণ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা।
২০২৪ সালের আগস্টে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দুদক এস. আলম ও স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে ১,৫৩৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলা করেছে। দুই ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংক থেকে ২,২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা রয়েছে। আদালত তাদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছে।