মাই টিভি দখল, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপিকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা এবং পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বিপুল টাকার মালিক হওয়াসহ নানা বিষয়ে গোয়েন্দাদের তথ্য দিচ্ছেন মাই টিভির মালিক নাসির উদ্দিন সাথী। জুলাই আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। তাকে রাজধানীর মিন্টু রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী থানার মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাক্ষণ বার্তাকে বলেন, অভিযোগ রয়েছে, মাই টিভির প্রকৃত মালিক নাসির উদ্দিন সাথী নন। জালজালিয়াতি এবং পেশিশক্তির ভয় দেখিয়ে বিলকিস জাহান নামে এক নারীর কাছ থেকে মাই টিভি দখল করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
পট পরিবর্তনের পরেও জামায়াতের কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় টেলিভিশনটিতে নিজের কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখেন সাথী। এসব বিষয়েও তিনি তথ্য দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদসহ কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতাকে ম্যানেজ করে সাথী খুব প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। এরপর নানা অপকর্মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ। টাকার বিনিময়ে শাসক দলের প্রভাবশালী নেতা, এমপি, প্রশাসনের লোকজন ও কতিপয় সাংবাদিককে হাত করে দীর্ঘদিন ধরে অপকর্মের রাজত্ব গড়ে তোলেন নাসির উদ্দিন সাথী। একই সঙ্গে তার ছেলে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির নানা অপকর্ম সম্পর্কেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে তার দেওয়া তথ্য তদন্তের জন্য রেকর্ড করা হচ্ছে। পরে এ বিষয়ে কাজ করবে সিআইডি।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা সা জানান, নাসির উদ্দিন সাথী গ্রেফতারের পর মাই টিভির কর্ণধার ও প্রতিষ্ঠাতা দাবি করা বিলকিস জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিলকিস জাহান গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, চ্যানেলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বৈরাচারী কায়দায় নাসির উদ্দিন সাথী অবৈধভাবে এটি দখল করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জবরদখল করে রেখেছেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সোমবার (১৮ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট হয়ে মাই টিভির দায়িত্বশীল চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন সাথী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রচার কার্যক্রম চালান। এর মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তার উসকানিমূলক কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে মামলার ভিকটিম আসাদুল হক বাবু মৃত্যুবরণ করেন বলে তদন্তে প্রকাশ পায়।
মামলাটি তদন্তকালে জানা যায়, মাই টিভির চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে থেকে তার অনৈতিক প্রভাব ও প্রতিপত্তি ব্যবহার করে দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে বিরোধী দলমতকে দমন করে উদ্দেশ্যমূলক হিংসাত্মক কার্যক্রম সংঘটিত করেন। মামলার প্রকৃত ঘটনা, অজ্ঞাতনামা আসামিদের পরিচয় শনাক্তকরণ ও রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে আসামিকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী ও তার ছেলে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি এবং শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। মামলাটি করেন মো. জয়নাল আবেদীন নামে এক ব্যক্তি। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় শেখ হাসিনাকে। আসামির তালিকায় ২ নম্বরে রয়েছেন সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ৩ নম্বরে সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন। মামলায় ১১ নম্বর আসামি তৌহিদ আফ্রিদি এবং ২২ নম্বর আসামি তার বাবা নাসির উদ্দিন সাথী। এ হত্যা মামলায় মোট ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।