বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে চলছে উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ’র শাসন ও একছত্র আধিপত্য। তিনি যা বলছেন চেয়ারম্যান সেটিতেই সন্মতি দিচ্ছেন। নিয়োগ,বদলী ,পদোন্নতি, কেনাকাটার টেন্ডার সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ। ফলে তার দ্বারা জাতীয়তাবাদী শক্তির সমর্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। এতে করে আন্তর্জাতিক এই সাহায্য সংস্থাটির কাছে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সবকার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা যোগদান করেই জাতীয়তাবাদী ঘরাণার একজন কর্মকর্তার ওপর চালিয়েছেন প্রশাসনের স্টিমরোলার। একটার পর একটা মিথ্যে অভিযোগ সৃষ্টি করে এই কর্মকর্তাকে নাজেহাল করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার পদ থেকে। এমন কি তার চাকুরী খেয়ে ফেলার জন্য নানামুখী অপচেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সত্য কখনো চেপে রাখা যায় না। অবশেষে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে আসল তথ্য। এখন তিনি নিজেই নিজের খোড়া গর্তে পড়েতে যাচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে যোগদান করেই যে কর্মকর্তার ওপর মিথ্যে অভিযোগের খড়গ চালিয়েছেন তিনি হলেন প্রতিষ্ঠানের সব থেকে বিচক্ষণ পরিচালক ইমাম জাফর শিকদার। যাকে পুরা ১৬ টি বছরই ছিলো চাকুরীচ্যুত করার এক মহাপরিকল্পনা।
এই সুলতান আহমেদের লক্ষ্য ছিলো রেড ক্রিসেন্টেকে জাতীয়তাবাদমুক্ত করে ফ্যাসিজমের ঘাঁটি স্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠা করা। যার প্রমাণ বেরিয়ে এলো তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এর মাধ্যমে। যেটি এতদিন গোপন রাখা হয়েছিলো। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন ঘটনা ছিলো না সেখানে বরং একজন পরীক্ষার্থী এর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিলো একটি ম্যাসেজ যা ছিলো পরিচালক ইমাম জাফর শিকদারকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে। যে রিপোর্ট ঘেটে দেখা যায় আসলে সুলতান আহমেদকে ততকালী ফ্যাসিস্টদের এজেন্ডা বাস্তবায়নই ছিলো তার কাজ।
প্রশ্নফাঁস দাবার ঘুঁটি নেড়েছেন উপ-মহাসচিব সুলতান:
রেডক্রিসেন্টে প্রশ্নফাঁসের নেপথ্যে ছিল ষড়যন্ত্রের ছঁক। এই ছঁক এঁকেছেন রেডক্রিসেন্টের উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ। আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি নেওয়া সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তা রেডক্রিসেন্টের উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ নিজের আসন পাকাপোক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে আসছেন। বিষয়টি সামনে আসে গত ১২ মে সোসাইটির ডিসিআরএম বিভাগের জিআরআইপি প্রকল্পের স্কিল ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে লিখিত পরীক্ষার সময়। এতে মোট ৮জন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী সৈয়দ আতাউর রহমান হলে বসে প্রশ্ন ও পূর্বেই তৈরিকৃত উত্তর বের করে পরীক্ষার খাতায় লিখতে থাকেন। এ সময় পরীক্ষার হলে আসেন উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ ও সহকারী পরিচালক ফারজানা আক্তার। ফাঁসকৃত প্রশ্ন এবং পূর্বেই তৈরি করা উত্তর দেখে পরীক্ষা দেয়ার অভিযোগে তারা সৈয়দ আতাউর রহমানের পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র জব্দ করেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে উপ-মহাসচিব আহমেদ সুলতানের নীলনকশা। এইচক্রই পরীক্ষার্থী সৈয়দ আতাউর রহমানের কাছে আগেই প্রশ্ন এবং উত্তর তুলে দিয়েছিল আবার এই চক্রই ফাঁসকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়ার অভিযোগে আতাউর রহমানের পরীক্ষার উত্তরপত্র জব্দ করেন। এ যেনো ‘সর্প হয়ে দংশন করো ওঝা হয়ে ঝাড়ো’র মতো ঘটনা।
ঘটনার পেছনে আছে অন্য ঘটনা। দেশ থেকে আওয়ামী অপশাসনের অবসান হলেও নানান দপ্তরে ঘাপটি মেরে আছে আওয়ামী দোসররা। এরা নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে সুকৌশলে আওয়ামী বিরোধী বা প্রশাসনের দক্ষ কর্মকর্তাদের ফাঁসাতে নানান অপকর্ম করছেন। প্রশ্নফাঁসের ঘটনাও তেমনই এক সাজানো কৌশলী ঘটনা।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি হলেও বিশেষ ব্যবস্থায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত তদন্ত রিপোর্টে এই চক্রের মুখোশ উন্মোচন হলেও এতদিন বিষয়টি গোপন করে রাখা হয়েছিল। মূল উদ্দেশ্য পরিচালক জাফর ইমাম শিকদারকে ফাঁসানো।
উল্লেখ্য, সুলতান আহমেদের মুল কাজই হচ্ছে আওয়ামী বিরোধীদের কোনঠাসা করে রাখা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের আসল রহস্য যা সোসাইটির পরিচালক জাতীয়তাবাদী চেতনার একজন কমকর্তাকে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারী সুলতানেরা ১৬ টি বছর যাবত চাকরিচ্যুত করার অপচেস্টা চালিয়েছিল যা বর্তমানেও চলমান। এদের কাজই হল জাতীয়তাবাদী আদর্শের লোকজনকে হটিয়ে রেডক্রিসেন্টকে ফ্যাসিস্টদের স্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
কিছুদিন আগে “অবৈধ পথে শত কোটি টাকার মালিক: রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালক ইমাম জাফরের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন” শিরোনামে একাধিক নিউজ পোর্টালে যে সংবাদ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে সেটিরও নেপথ্যে ছিলেন এই সুলতান চক্র।
এ প্রসঙ্গে রেডক্রিসেন্ট এর একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, পরিচালক ইমাম জাফরের কোন অবৈধ সম্পদ আছে বলে তাদের জানা নেই। একটি গোষ্ঠি তার নামে এসব মিথ্যা ও বেনামি অভিযোগ দায়ের করিয়ে তাকে সামাজিক ও মানুষিক ভাবে হয়রানি করতেছে। তার দীর্ঘ চাকরি জীবনে এমন কোন দুর্নীতির বিষয় উত্থাপিত হয়নি। তাকে নিয়ে রেডক্রিসেন্টে যে ঠিকাদারী ব্যবসা ও নিয়োগ, বদলী বাণিজ্যের কথা বলা হয়েছে সেটাও সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ তার বা তার কোন আত্মীয় স্বজনের রেডক্রিসেন্ট লাইসেন্স আছে বলে প্রমান পাওয়া যায় নি।
তাছাড়া তার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর যে অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে তা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। গুটি কয়েক চাকরিচ্যাত দুর্নীতিবাজ ও কুচক্রি মহাল তার নামে এসব মিথ্যা মানহানীকর তথ্য ছড়িয়ে সামাজিক ভাবে সম্মানহানী করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আসলে তিনি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও চাকরীচ্যুত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়েছেন। তারা তার মান-সম্মানহানী ও চাকরী জীবনের অর্জিত সাফল্য ম্লান করার জন্য সংবাদ মাধ্যমে নানা প্রকার মনগড়া মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারি মিলে তার বিরুদ্ধে বহুদিন আগে থেকেই গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন এখনও আছেন। এই চক্রটি বিভিন্ন সময় এধরনের মিথ্যা বেনামি অভযোগ দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করিয়ে কর্মকর্তাসহ সোসাইটির ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে আসছেন।আমরা রেডক্রিসেন্ট এর একধিক কর্মচারি ও কর্মকর্তার সাথে কথা বলে এর সততা প্রমান পেয়েছি। পরিচালক ইমাম জাফর সিকদার এই চক্রের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার।
উপ-মহাসচিব সুলতানের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও অপসারণ দাবী:
এ প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহকালে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মগবাজারস্থ প্রধান কার্যালয় ও ঢাকার অন্যান্য শাখায় কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, পরিচালক ইমাম জাফর সিকদার বিগত ১৬ টি বছর আওয়ামী নির্যাতনের শিকার। তিনি অসীম ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে টিকে আছেন। এখন সময় এসেছে প্রতিকার পাওয়ার। তারা আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসর উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারণ চান।