হিন্দুদের দূর্গা পূজা।উৎসবের সেরা মজা। আছে পূজা,আছে সামাজিকতা, আছে মহানুভবতার ছোয়া,আছে ভালবাসা, আছে আবেগ।তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পূজা,ভালবাসা সব মিলিয়েই পালন করতে আসে আপনালয়ে। পূজা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলে-ও সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে সময় লাগে। তাই দেবী দুর্গার বিসর্জন হলেও এ পূজা যেন নতুন কোন আনুষ্ঠানিকতার জন্ম দেয়। আপনজনকে নতুন করে কাছে পায়।যে আবেগ নিয়ে দূর থেকে ছুটে আসে সে আবেগ যেন মন থেকে যায় না। দেবী দুর্গার বিদায় হলে প্রকৃতি যেন বিদায় বেদনার আবেগে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
মাগুরা জেলার ৯১৮০০০ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৬৪০০০ হিন্দু।এই জনগোষ্ঠী এ বছর ৬১৯ টি প্রতিমা মন্দিরে দুর্গা পূজা সম্পন্ন করেছে।
গত কাল (০২/১০/২৫)আনুষ্ঠানিক বিসর্জন ছিল।আজ০৩/১০/২৫ দাতিয়াদহের পাল পাড়ার ঘাটে বিসর্জন হলো দূর্গা প্রতিমা।এ উপলক্ষ্যে মধুমতী নদীর ধারে মেহগনি বনে আয়োজন হয়েছিল আড়ং।এ আড়ং শুধু আজ থেকে নয়,পাল পাড়ার জন্ম থেজেই এ আয়োজন,এখনও বিদ্যমান।এক সময় এ গ্রাম সহ তারাপুর গ্রামের প্রতিমা একত্রিত করে নৌকায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বিসর্জন দেওয়া হতো। আর নৌকার উপরই চলত আরতি। নৃত্য পটিয়সি নারী পুরুষ এ আরতিতে যোগ দিত।নাচের তালে তালে দেবীকে মুগ্ধ করা।
আমার ছেলে বেলা থেকেই এ আড়ংয়ে আড়ম্বর উপস্থিতি ছিল।তখন আসতাম নানার হাত ধরে।নানা একেবারে পরহেজগার মুসলমান ছিলেন।কোনদিন নামাজ কাজা পড়তে দেখিনি।কোরান Recite করতে দেখেছি প্রতি ফজর নামাজ পর।শব্দ দূষণ হীন সেই সময়ে অনেক দূর থেকে তার আওয়াজ শোনা যেত।তিনি কিনতে আসতেন সংসারের জিনিসপত্র। আর আমাকে কিনে দিতেন দানাদার, কদমা,কটকটি(গজা)। ভীষণ খুশী হতাম।সাম্প্রদায়িক কোন শব্দ উচ্চারণ করতে শুনিনি। সদা হাস্যোজ্জ্বল সকল মানুষের সাথে নমনীয় আচরণ দেখেছি। এ আড়ং ছিল এলাকার মানুষের মিলন আড়ং,মিলন মেলা। মেলাকে তখন আড়ংই বলত। এখন মেলা বলে। আড়ং শব্দটা প্রায় বিলুপ্ত। প্রায় বিলুপ্ত সৌহার্দের মত। সারা দেশে ১৯৭১ সাল থেকে মন্দির,প্রতিমা ভাংগার অনেক গান শুনলেও এ গ্রামের মন্দিরে কোনদিন দূর্বৃত্তের ছোয়া পড়েছে আমার জানা নেই।
১৯৪৭ সালে ধর্ম দিয়ে মাটিতে খন্ডিত চিহ্ন পড়লেও সংস্কৃতি এ মানুষ গুলোকে এখনও খন্ডিত করতে পারে নাই। তাই এ ধরনের আড়ংয়ে হিন্দু মুসলমান উভয়ের উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
এখনো উভয়ের মিলনে প্রানবন্ত হয় দাতিয়াদহের পাল পাড়ার দুর্গা পূজার আড়ং।
অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম 










