জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরীকে বদলি করে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তাকে কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূল্য সংযোজন কর আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট করা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে মামলা করে।
দুদকের উপপরিচালক সাইদুজ্জামান মামলাটি করেন। অনুসন্ধান দলে ছিলেন উপসহকারী পরিচালক সুবিমল চাকমা। দুদকের মামলার আসামিকে বিচারকের পদে পদায়ন করায় সমালোচনা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরীর নামে ১৩ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৭৯ টাকা সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন) মঈদুল ইসলাম বলেন, “দুদক মামলা করলে দুদক বিধিমালার ২৬ বিধি অনুযায়ী তা এনবিআরকে জানানোর কথা। এনবিআর এটা জানার পরে স্বাভাবিকভাবেই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রজু করে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা। (দুর্নীতি একটি চরম নৈতিক স্খলন)। এনবিআর তা না করে ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট করে বদলি করার মাধ্যমে তাকে পুরস্কৃত করেছে দেখা যায়। যারা তাকে অন্যায্যভাবে পুরস্কৃত করেছে তাদের বিষয়ও খতিয়ে দেখা উচিত, কিসের বিনিময়ে তারা এ কাজ করেছেন। তবে, দেখার বিষয় হলো দুদক থেকে জানানো হয়েছিল কি না! তাকে এখনো গ্রেপ্তার না করে দুদকও আইনবিধি ভঙ্গ করেছে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “মামলার বিষয়ে দুদক থেকে এখনও কেনো চিঠি পায়নি। সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি।” তবে দুদকের মামলার পর তাকে বদলি করে কাস্টমস ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট করার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, মুখপাত্র ও মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আকতার হোসেন ও সচিব খালেদ মোহাম্মদ রহীমকে কল করা হলে তারা রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে করা প্রশ্নেরও উত্তর দেননি।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, বেলাল হোসাইন দাখিল করা বিবরণীতে ৪ কোটি ৬০ লাখ ১৯ হাজার ৭১৩ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। নিজের দাখিলকৃত বিবরণীতে ৮ কোটি ৮৩ লাখ ১১ হাজার ১৬৬ টাকা সম্পদের তথ্য প্রদর্শন করেন তিনি। কিন্তু অনুসন্ধানে তার নামে ১৩ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৭৯ টাকা সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৪ কোটি ৬০ লাখ ১৯ হাজার ৭১৩ টাকা সম্পদ গোপন করা হয়।
বেলাল হোসাইন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ৪ কোটি ৯৭ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৬ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন, যা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এছাড়া তার নিট সম্পদের মূল্য ৭ কোটি ৫২ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৩ টাকা এবং পারিবারিক ব্যয় ৮ কোটি ৯৭ লাখ ১২ হাজার ১৩ টাকা পাওয়া গেছে। ফলে পারিবারিক ব্যয়সহ মোট সম্পদ অর্জনের পরিমাণ ১৬ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার ৪২৬ টাকা। এর বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় ছিল ১১ কোটি ৫২ লাখ ৫৮ হাজার ৩০ টাকা।
সারাক্ষণ ডেস্ক 













