নির্মাণ নিরাপত্তা না থাকায় ছয়তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিক মো. ইব্রাহিম (৩৬)-এর মৃত্যু হয় ৩১ জুলাই ২০২৫, চট্টগ্রামের হালিশহরের পুলিশ লাইন এলাকায়। এই মৃত্যুর পরপরই ঠিকাদারের পক্ষ থেকে পরিবারের সঙ্গে একটি সমঝোতা দলিল করে—সরকারি ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে লেখা সেই চুক্তি এখন নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
চুক্তিপত্রে প্রতারণার ফাঁদ, তারিখই বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে, নিহত ইব্রাহিমের পিতাকে নগদ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে ৩১ জুলাই ২০২৫ তারিখে। পাশাপাশি, বাকি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা “১৫ জানুয়ারি ২০২৫” তারিখে দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, চুক্তি যখন করা হয়েছে তখন সেই তারিখ (১৫/০১/২০২৫) ছয় মাস আগেই পেরিয়ে গেছে। অর্থাৎ, একটি মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ব্যবহার করে বাকি টাকা আদায়ের পথই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।
এটি কেবল ভুল নয়, বরং এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত প্রতারণার ফাঁদ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।পরিবারের ভাষ্য: “টাকায় নয়, বিচার চাই নিহতের পিতা মো. আলমগীর বলেন, “ঠিকাদারের লোকজন বলেছে টাকা দেবে, তাই আমরা চুক্তিপত্রে সই দিয়েছি। কিন্তু এখন দেখি তারিখই এমন লেখা, যে দিনই চলে গেছে আগেই! আমরা তো বুঝিনি এটা একটা কৌশল। এখন কোনো টাকা পাচ্ছি না।”
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর আহাজারি: “চুক্তি নয়, আমি চাই ন্যায়বিচার” ইব্রাহিমের ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামী চলে গেছে, আমি একা হচ্ছি। এখন শুনছি তারা যে টাকা দেওয়ার কথা বলেছে, সেটাও প্রতারণা। এটা কেমন বিচার? চুক্তি নয়, আমি চাই আইনের বিচার।”
ঠিকাদার পলাতক।এই প্রকল্পের ঠিকাদার আবদুল্লাহ টিটু—চট্টগ্রাম জেলা ঠিকাদার সমিতির সভাপতি। তার প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স শাহ জাব্বারিয়া কনস্ট্রাকশন। অভিযোগ রয়েছে, নিরাপত্তাহীন অবস্থায় শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোর পাশাপাশি মৃত্যুর পর তা চাপা দেওয়ার জন্য কৌশলে চুক্তি বানিয়ে দেন তার লোকজন।
আইনি বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু প্রতারণা নয়—প্রমাণ লোপাটের অপচেষ্টা
আইনজীবীরা বলছেন, বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ২০১, ৪২০ ও ৪৬৩ ধারায় এ ধরনের চুক্তি জালিয়াতি, প্রতারণা এবং প্রমাণ নষ্ট করার অপরাধের আওতায় পড়ে। বিশেষ করে ময়নাতদন্ত এড়াতে এই কৌশল প্রয়োগ করা হলে তা আরও গুরুতর অপরাধ। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সারাক্ষণ বার্তাকে বলেন “তদন্ত চলছে, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে” হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, “এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতির কাজ চলছে।
মানবাধিকার সংগঠন বলছে, “এটি মৃত্যুর বিচার নয়, মৃত্যুকে মুছে ফেলার আয়োজন”
স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন বলছে, “এই ঘটনা প্রমাণ করে, শ্রমিক মারা গেলে সেটা ক্ষতিপূরণের নয়, বরং চাপা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
চট্টগ্রামের এই নির্মাণ প্রকল্পে শ্রমিক ইব্রাহিমের মৃত্যু, তার পর তৈরি হওয়া স্ট্যাম্পে লেখা চুক্তিপত্র—সব মিলে এক ভয়াবহ বাস্তবতার চিত্র উঠে এসেছে। যেখানে মৃত্যু মানেই সমঝোতা, বিচার নয় বরং প্রতারণা। সময় আগেই শেষ হয়ে যাওয়া তারিখ বসিয়ে প্রমাণ করে দেওয়া হয়েছে—এই মৃত্যু শুধু শরীর ভেঙেছে না, ভেঙেছে আইন ও মানবতার মেরুদণ্ড। সমাজের সুশীলরা ক্ষোভে ফুঁসছে। মৃত্যুর সাথে কখনো আপোষ করা যায়না।এটা আইন ও মানবাধিকারের চরম লংঘন।