ঢাকা ০৫:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
জালিয়াতির চক্রে রাজউক।নথি জালিয়াতিতে জড়িত রাজউকের বিশেষ চক্রের সাথে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ। লক্ষ্মীপুরে আলোচিত যুবলীগ–ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার উখিয়ায় অস্ত্র-গুলিসহ আরাকান আর্মির এক সদস্যের আত্মসমর্পণ নিজের বাল্যবিবাহ নিজেই বন্ধ করল অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতু চিরিরবন্দরে বিআরটিসি বাস খাদে, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন যাত্রীরা আউলিয়াপুরে শিশু ও যুব ফোরামের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি মাদারীপুর রাজৈর থানা হেফাজত হতে মাদক মামলায় অভিযুক্ত আসামির পলায়ন। উলিপুরে ৫ বছরের কন্যাশিশুকে ধ’র্ষণের অভিযোগে ব্যক্তি গ্রেফতার সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অভিযোগে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাকির খান গ্রেফতার চিরিরবন্দর বিন্যাকুড়ি ইছামতী নদীতে ৮ বছর বয়সী শিশুর নদীতে পড়ে মৃত্যু

রিক্সাচালকদের প্রশিক্ষণে নয়া প্রযুক্তির ব্যবহার।ব্যয় ৬ কোটি টাকা।

রিক্সাচালকদের প্রশিক্ষণে ল্যাপটপ ব্যবহার, ব্যয় ৬ কোটি টাকা। ৩০০ জন মাস্টার ট্রেইনারকে একটি করে ল্যাপটপ-প্রজেক্টর দেবে ডিএনসিসি

• মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণে ব্যয় আরও ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা

• আগস্টে পল্টন, ধানমন্ডি, উত্তরায় চলবে বুয়েটের ই-রিক্সা

• এখন সড়কে যেসব ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলছে, সেগুলো তুলে দেওয়া হবে

ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাচালকদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রশিক্ষক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রথম ধাপে ৩০০ জন প্রশিক্ষক (মাস্টার ট্রেইনার) তৈরি করছে সংস্থাটি। তারা পরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তৈরি করা অটোরিকশার (ই-রিকশা) চালকদের প্রশিক্ষণ দেবেন।

এই প্রশিক্ষক তৈরিতে ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় করছে ডিএনসিসি। আর অটোরিকশাচালকদের প্রশিক্ষণে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর কিনবে সংস্থাটি। শিগগির দরপত্র আহ্বান করবে সিটি করপোরেশন।

তবে এত টাকা ব্যয়ের পরও সড়কে অটোরিকশাচালকদের শৃঙ্খলায় আনা সম্ভব হবে কী না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায় বলে জানিয়েছেন অংশীজনেরা।

তারা জানান, অবৈধ অটোরিকশা উৎপাদন বন্ধ না করে এবং সড়কে বিদ্যমান অটোরিকশা চলাচল স্বাভাবিক রেখে সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন কঠিন হবে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন বা সরকারের উচিত আগে অবৈধ অটোরিকশা তৈরি বন্ধ রাখা।

গত বছরের ৫ আগস্টের আগে ঢাকার সড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা বন্ধে অনেকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে ডিএনসিসি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু বারবারই তারা ব্যর্থ হয়ে কার্যক্রম স্থগিত করে। পরে গত এপ্রিলে ডিএনসিসি এলাকায় অবৈধ অটোরিকশা বন্ধের উদ্যোগ নেয় ডিএনসিসি। এ সময় গুলশান-বনানীসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান অটোরিকশাচালকরা।

ই- রিকশা চলতি মাসেই পরীক্ষামূলকভাবে পল্টন, ধানমন্ডি ও উত্তরার সড়কে নামানোর কথা। প্রতিটি রিকশার সম্ভাব্য দাম প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা।- ডিএনসিসি-ডিএসসিসি

পরে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ডিএনসিসি-ডিএসসিসি ব্যাটারিচালিত রিকশার শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের একটি দল হাইড্রোলিক ব্রেক, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ই-রিকশা তৈরি করছে। এসব রিকশা চলতি মাসেই পরীক্ষামূলকভাবে পল্টন, ধানমন্ডি ও উত্তরার সড়কে নামানোর কথা। প্রতিটি রিকশার সম্ভাব্য দাম প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা।রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণে ল্যাপটপ ব্যবহার, ব্যয় ৬ কোটি টাকা।

ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির পরিবহন বিভাগ সূত্র জানায়, এখন সড়কে যেসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে, সেগুলো ক্রমান্বয়ে তুলে দেওয়া হবে। বুয়েটের নতুন মডেলের রিকশা তৈরির জন্য চালকদের এক বছর সময় দেওয়া হবে। এজন্য তাদের বাংলাদেশ ব্যাংক ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) ঋণ দেবে।

আর নতুন রিকশা সড়কে নামানোর আগেই চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে সরকার। এ প্রশিক্ষণের আগে ৩০০ জন প্রশিক্ষক তৈরি করছে ডিএনসিসি। এর মধ্যে ১০০ জন পুলিশ সদস্য ও ২০০ জন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের তালিকা থেকে নেওয়া হয়েছে। যুব উন্নয়নের ওই তালিকার মধ্যে ১৭৫ জন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থী। বাকি ২৫ জন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির ট্রেইনার।

গত ২৮ জুন ডিএনসিসির নগর ভবনে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিন দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণের প্রথম ধাপে ২০০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। বাকি ১০০ জনের প্রশিক্ষণও সম্পন্ন হয়। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্র্যাক রোড সেফটি প্রোগ্রামকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রশিক্ষণ শেষে মাঠপর্যায়ে যাওয়ার আগে মাস্টার ট্রেইনারদের সবাইকে একটি করে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর দেওয়া হবে। এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ছয় কোটি টাকা। – ডিএনসিসির হিসাব বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির হিসাব বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, মাস্টার ট্রেইনার তৈরির প্রশিক্ষণের জন্য ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ৩০০ জন প্রশিক্ষকের পেছনে এ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ২০০ জন প্রশিক্ষণের সময়ে দৈনিক ভাতা বাবদ প্রত্যেক প্রশিক্ষককে এক হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে প্রশিক্ষণ চলাকালে খাবার ও নাশতার খরচও রয়েছে। সরকারের কর বাদে প্রশিক্ষকেরা তিন দিনে আড়াই হাজার টাকা করে পেয়েছেন। এছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে মাঠপর্যায়ে যাওয়ার আগে মাস্টার ট্রেইনারদের সবাইকে একটি করে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর দেওয়া হবে। এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ছয় কোটি টাকা। প্রতিটি ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরে এক লাখ করে দুই লাখ টাকা ব্যয় হবে।রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণে ল্যাপটপ ব্যবহার, ব্যয় ৬ কোটি টাকা

ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর প্রশিক্ষকদের কী কাজে লাগবে, এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান সারাক্ষণ বার্তাকে বলেন, মাস্টার ট্রেইনাররা যখন ই-রিকশা চালকদের প্রশিক্ষণ দেবেন, তখন তাদের ডাটাবেজ তৈরিতে ল্যাপটপ লাগবে। আবার সড়কে ট্রাফিক আইন; দুর্ঘটনার কারণ; সড়কে যানজট তৈরির কারণ; চালকদের আত্মোপলব্ধি তৈরি করা; অর্থ উপার্জনকারী হিসেবে তারা যেন নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবেন; পাশাপাশি যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন; অন্যচালকের ভুলেও দুর্ঘটনা কীভাবে হয়; গতি থামানোর জন্য যে সময় প্রয়োজন; ডানে-বামে কীভাবে মোড় নিতে হয় তা প্রজেক্টরেসহ বিভিন্ন বিষয় ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশনের জন্য প্রজেক্টর দরকার। এগুলো সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকেই কেনা হচ্ছে বলে জানি।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির সিস্টেম অ্যানালিস্ট আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম সারাক্ষণ বার্তাকে বলেন, ই-রিকশা প্রশিক্ষকদের জন্য ল্যাপটপ এবং প্রজেক্টর কিনতে ডিএনসিসিতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু কেনাকাটাও রয়েছে। এখন এগুলো কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

তবে ই-রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর ব্যবহার এবং এ খাতে ব্যয়ের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার বা সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগই সুফল পায়নি। উল্টো নগরে যাত্রীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ শতগুণ বেড়েছে। এবার বুয়েটের ই-রিকশা নিয়ে সরকারের এই উদ্যোগ সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে বলে আশা করা যায়। এজন্য সিটি করপোরেশনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণে ল্যাপটপ ব্যবহার, ব্যয় ৬ কোটি টাকা।গত ২৮ জুন ডিএনসিসির নগর ভবনে প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার ছিলেন রিকশাওয়ালা ভাইয়েরা। তাদের যখন আমরা নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লাইসেন্সিং সিস্টেমে আনবো, তখন আর কেউ তাদের অবৈধ বলার সুযোগ পাবে না।ই-রিকশা প্রশিক্ষণে যা শেখানো হয়েছে

গত ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন ডিএনসিসিতে ই-রিকশা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনদিনের প্রশিক্ষণে মূলত তারা ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন, সেগুলোই শেখানো হয়। এ-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষকদের জন্য একটি উপস্থাপনা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে তারা ওইসব বিষয়ে নিজেরা প্রশিক্ষণ নেন। পরে রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। পাশাপাশি একজন প্রশিক্ষকের যেসব দক্ষতা ও গুণ থাকা লাগে, সেগুলোও শেখানো হয়েছে।

প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান বলেন, প্রশিক্ষণে উপস্থাপনার বিষয়গুলো প্রশিক্ষকদের শেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় দিন প্রশিক্ষক হিসেবে রিকশাচালকদের তারা যেভাবে শেখাবেন, এগুলো চর্চা করানো হয়। যেন সবার সামনে কথা বলার দক্ষতা ও অভ্যাস তৈরি হয়। শেষদিন বুয়েটের নকশা করা ব্যাটারিচালিত রিকশার কারিগরি বিষয়ের ওপর তৈরি করা উপস্থাপনা শেখানো হয় যেন একজন চালক ওই রিকশা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং রিকশাটি সঠিকভাবে চালাতে পারেন।

বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়কে বিদ্যমান ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে বুয়েটের ই-রিকশার ডিজাইন অনেক আধুনিক। এ ই-রিকশার মূল বৈশিষ্ট্য হলো: এটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। এর নকশা করা হয়েছে সাধারণ ইজিবাইকের চেয়ে বেশি টেকসই এবং স্থিতিশীল করার জন্য। এছাড়া বুয়েটের ই-রিকশার গতি সাধারণত ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যা শহরের রাস্তায় চলাচলের জন্য নিরাপদ। এর হাইড্রোলিক ব্রেক এবং উন্নত যাত্রী সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এই রিকশাগুলো ৩২৫ থেকে ৪২৫ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারে। রিকশার চেসিস এবং বডি ফ্রেম মাইল্ড স্টিল ও লাইটওয়েট অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি, যা এটিকে স্থিতিশীল রাখে। অনুমোদিত চার্জিং পয়েন্টে চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যা রিকশাটিকে আরও ব্যবহার উপযোগী করে তুলবে।

Tag :
About Author Information

GOURANGA BOSE

জনপ্রিয় সংবাদ

জালিয়াতির চক্রে রাজউক।নথি জালিয়াতিতে জড়িত রাজউকের বিশেষ চক্রের সাথে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ।

রিক্সাচালকদের প্রশিক্ষণে নয়া প্রযুক্তির ব্যবহার।ব্যয় ৬ কোটি টাকা।

আপডেট সময় : ০৩:৩১:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

রিক্সাচালকদের প্রশিক্ষণে ল্যাপটপ ব্যবহার, ব্যয় ৬ কোটি টাকা। ৩০০ জন মাস্টার ট্রেইনারকে একটি করে ল্যাপটপ-প্রজেক্টর দেবে ডিএনসিসি

• মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণে ব্যয় আরও ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা

• আগস্টে পল্টন, ধানমন্ডি, উত্তরায় চলবে বুয়েটের ই-রিক্সা

• এখন সড়কে যেসব ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলছে, সেগুলো তুলে দেওয়া হবে

ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাচালকদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রশিক্ষক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রথম ধাপে ৩০০ জন প্রশিক্ষক (মাস্টার ট্রেইনার) তৈরি করছে সংস্থাটি। তারা পরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তৈরি করা অটোরিকশার (ই-রিকশা) চালকদের প্রশিক্ষণ দেবেন।

এই প্রশিক্ষক তৈরিতে ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় করছে ডিএনসিসি। আর অটোরিকশাচালকদের প্রশিক্ষণে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর কিনবে সংস্থাটি। শিগগির দরপত্র আহ্বান করবে সিটি করপোরেশন।

তবে এত টাকা ব্যয়ের পরও সড়কে অটোরিকশাচালকদের শৃঙ্খলায় আনা সম্ভব হবে কী না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায় বলে জানিয়েছেন অংশীজনেরা।

তারা জানান, অবৈধ অটোরিকশা উৎপাদন বন্ধ না করে এবং সড়কে বিদ্যমান অটোরিকশা চলাচল স্বাভাবিক রেখে সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন কঠিন হবে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন বা সরকারের উচিত আগে অবৈধ অটোরিকশা তৈরি বন্ধ রাখা।

গত বছরের ৫ আগস্টের আগে ঢাকার সড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা বন্ধে অনেকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে ডিএনসিসি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু বারবারই তারা ব্যর্থ হয়ে কার্যক্রম স্থগিত করে। পরে গত এপ্রিলে ডিএনসিসি এলাকায় অবৈধ অটোরিকশা বন্ধের উদ্যোগ নেয় ডিএনসিসি। এ সময় গুলশান-বনানীসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান অটোরিকশাচালকরা।

ই- রিকশা চলতি মাসেই পরীক্ষামূলকভাবে পল্টন, ধানমন্ডি ও উত্তরার সড়কে নামানোর কথা। প্রতিটি রিকশার সম্ভাব্য দাম প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা।- ডিএনসিসি-ডিএসসিসি

পরে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ডিএনসিসি-ডিএসসিসি ব্যাটারিচালিত রিকশার শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের একটি দল হাইড্রোলিক ব্রেক, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ই-রিকশা তৈরি করছে। এসব রিকশা চলতি মাসেই পরীক্ষামূলকভাবে পল্টন, ধানমন্ডি ও উত্তরার সড়কে নামানোর কথা। প্রতিটি রিকশার সম্ভাব্য দাম প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা।রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণে ল্যাপটপ ব্যবহার, ব্যয় ৬ কোটি টাকা।

ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির পরিবহন বিভাগ সূত্র জানায়, এখন সড়কে যেসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে, সেগুলো ক্রমান্বয়ে তুলে দেওয়া হবে। বুয়েটের নতুন মডেলের রিকশা তৈরির জন্য চালকদের এক বছর সময় দেওয়া হবে। এজন্য তাদের বাংলাদেশ ব্যাংক ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) ঋণ দেবে।

আর নতুন রিকশা সড়কে নামানোর আগেই চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে সরকার। এ প্রশিক্ষণের আগে ৩০০ জন প্রশিক্ষক তৈরি করছে ডিএনসিসি। এর মধ্যে ১০০ জন পুলিশ সদস্য ও ২০০ জন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের তালিকা থেকে নেওয়া হয়েছে। যুব উন্নয়নের ওই তালিকার মধ্যে ১৭৫ জন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থী। বাকি ২৫ জন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির ট্রেইনার।

গত ২৮ জুন ডিএনসিসির নগর ভবনে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিন দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণের প্রথম ধাপে ২০০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। বাকি ১০০ জনের প্রশিক্ষণও সম্পন্ন হয়। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্র্যাক রোড সেফটি প্রোগ্রামকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রশিক্ষণ শেষে মাঠপর্যায়ে যাওয়ার আগে মাস্টার ট্রেইনারদের সবাইকে একটি করে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর দেওয়া হবে। এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ছয় কোটি টাকা। – ডিএনসিসির হিসাব বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির হিসাব বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, মাস্টার ট্রেইনার তৈরির প্রশিক্ষণের জন্য ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ৩০০ জন প্রশিক্ষকের পেছনে এ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ২০০ জন প্রশিক্ষণের সময়ে দৈনিক ভাতা বাবদ প্রত্যেক প্রশিক্ষককে এক হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে প্রশিক্ষণ চলাকালে খাবার ও নাশতার খরচও রয়েছে। সরকারের কর বাদে প্রশিক্ষকেরা তিন দিনে আড়াই হাজার টাকা করে পেয়েছেন। এছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে মাঠপর্যায়ে যাওয়ার আগে মাস্টার ট্রেইনারদের সবাইকে একটি করে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর দেওয়া হবে। এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ছয় কোটি টাকা। প্রতিটি ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরে এক লাখ করে দুই লাখ টাকা ব্যয় হবে।রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণে ল্যাপটপ ব্যবহার, ব্যয় ৬ কোটি টাকা

ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর প্রশিক্ষকদের কী কাজে লাগবে, এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান সারাক্ষণ বার্তাকে বলেন, মাস্টার ট্রেইনাররা যখন ই-রিকশা চালকদের প্রশিক্ষণ দেবেন, তখন তাদের ডাটাবেজ তৈরিতে ল্যাপটপ লাগবে। আবার সড়কে ট্রাফিক আইন; দুর্ঘটনার কারণ; সড়কে যানজট তৈরির কারণ; চালকদের আত্মোপলব্ধি তৈরি করা; অর্থ উপার্জনকারী হিসেবে তারা যেন নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবেন; পাশাপাশি যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন; অন্যচালকের ভুলেও দুর্ঘটনা কীভাবে হয়; গতি থামানোর জন্য যে সময় প্রয়োজন; ডানে-বামে কীভাবে মোড় নিতে হয় তা প্রজেক্টরেসহ বিভিন্ন বিষয় ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশনের জন্য প্রজেক্টর দরকার। এগুলো সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকেই কেনা হচ্ছে বলে জানি।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির সিস্টেম অ্যানালিস্ট আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম সারাক্ষণ বার্তাকে বলেন, ই-রিকশা প্রশিক্ষকদের জন্য ল্যাপটপ এবং প্রজেক্টর কিনতে ডিএনসিসিতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু কেনাকাটাও রয়েছে। এখন এগুলো কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

তবে ই-রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর ব্যবহার এবং এ খাতে ব্যয়ের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার বা সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগই সুফল পায়নি। উল্টো নগরে যাত্রীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ শতগুণ বেড়েছে। এবার বুয়েটের ই-রিকশা নিয়ে সরকারের এই উদ্যোগ সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে বলে আশা করা যায়। এজন্য সিটি করপোরেশনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণে ল্যাপটপ ব্যবহার, ব্যয় ৬ কোটি টাকা।গত ২৮ জুন ডিএনসিসির নগর ভবনে প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার ছিলেন রিকশাওয়ালা ভাইয়েরা। তাদের যখন আমরা নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লাইসেন্সিং সিস্টেমে আনবো, তখন আর কেউ তাদের অবৈধ বলার সুযোগ পাবে না।ই-রিকশা প্রশিক্ষণে যা শেখানো হয়েছে

গত ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন ডিএনসিসিতে ই-রিকশা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনদিনের প্রশিক্ষণে মূলত তারা ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন, সেগুলোই শেখানো হয়। এ-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষকদের জন্য একটি উপস্থাপনা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে তারা ওইসব বিষয়ে নিজেরা প্রশিক্ষণ নেন। পরে রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। পাশাপাশি একজন প্রশিক্ষকের যেসব দক্ষতা ও গুণ থাকা লাগে, সেগুলোও শেখানো হয়েছে।

প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান বলেন, প্রশিক্ষণে উপস্থাপনার বিষয়গুলো প্রশিক্ষকদের শেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় দিন প্রশিক্ষক হিসেবে রিকশাচালকদের তারা যেভাবে শেখাবেন, এগুলো চর্চা করানো হয়। যেন সবার সামনে কথা বলার দক্ষতা ও অভ্যাস তৈরি হয়। শেষদিন বুয়েটের নকশা করা ব্যাটারিচালিত রিকশার কারিগরি বিষয়ের ওপর তৈরি করা উপস্থাপনা শেখানো হয় যেন একজন চালক ওই রিকশা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং রিকশাটি সঠিকভাবে চালাতে পারেন।

বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়কে বিদ্যমান ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে বুয়েটের ই-রিকশার ডিজাইন অনেক আধুনিক। এ ই-রিকশার মূল বৈশিষ্ট্য হলো: এটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। এর নকশা করা হয়েছে সাধারণ ইজিবাইকের চেয়ে বেশি টেকসই এবং স্থিতিশীল করার জন্য। এছাড়া বুয়েটের ই-রিকশার গতি সাধারণত ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যা শহরের রাস্তায় চলাচলের জন্য নিরাপদ। এর হাইড্রোলিক ব্রেক এবং উন্নত যাত্রী সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এই রিকশাগুলো ৩২৫ থেকে ৪২৫ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারে। রিকশার চেসিস এবং বডি ফ্রেম মাইল্ড স্টিল ও লাইটওয়েট অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি, যা এটিকে স্থিতিশীল রাখে। অনুমোদিত চার্জিং পয়েন্টে চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যা রিকশাটিকে আরও ব্যবহার উপযোগী করে তুলবে।