‘এ অফিস দুর্নীতিমুক্ত’– নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ঝুলছে এমন সাইনবোর্ড। তবে বাস্তবতা উল্টো, রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। এখানে কর্মচারীর মুখ থেকে কথা বের করতেও দেখাতে হয় টাকার চেহারা! সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরে টেবিলে টাকা ফেললে যেভাবে চাইবেন, সবকিছু মিলবে সেভাবে। ওপর মহলের ছায়ায় সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। ঘুষ ছাড়া মিলেনা সেবা, নড়েনা ফাইল। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা না দিলে কাজ হয় না এই অফিসে। জমির দলিল আটকে রেখে ভুক্তভোগীদের চাপের মুখে ঘুষ দাবি সাব-রেজিস্ট্রার, উমেদার ও নকলনবিশদের নিয়মিত আচরণে পরিণত হয়েছে।
জমি নিবন্ধন করতে এলে সরকার নির্ধারিত ফির বদলে নির্ধারিত টাকার ছক ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর নানা বাহানায় আদায় করা হয় টাকা। বছরের পর বছর চলছে এভাবেই। ফতুল্লা সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে এর আগে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ছিলেন সাজ্জাদুল কবির। ফতুল্লায় কর্মরত থেকে অনেক দাপটের সাথে ‘নিজেকে দুধের ধোয়া, তুলশি পাতা’ সাজিয়ে বেপরোয়া দুর্নীতি করে গেছে। বর্তমানে দায়িত্বরত সাব রেজিস্ট্রার এস এম আদনান নোমান। বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছে। এসোসিয়েশন ও আইন উপদেষ্টার নাম ভাঙ্গিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেদারসে।
দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও অনিয়ম-দুর্নীতির আতুর ঘরে পরিণত হওয়া গজারিয়া রেজিস্ট্রি অফিস সিন্ডিকেট, দালালদের রোষানলে ও বিকল্প কৌশলে প্রতি দলিল থেকে অফিস খরচের নামে মৌজা রাউন্ড ফিগারের উপর ভিত্তি করে ০.৫% থেকে ১% অতিরিক্ত খরচ নেওয়া, বিশেষ করে অবৈধ লেনদেনগুলো হয়ে থাকে নিয়োগবহির্ভূত উমেদার ও অফিস সহকারীর মাধ্যমে। এছাড়াও সেরেস্তা খরচের নামে দলিল লেখক ভেন্ডার সমিতির নেতাদের সখ্যতায় দলিল প্রতি লাখে ৩০০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি টাকা দিতে হয় সেবাগ্রাহকদের। দাতাগ্রহিতার মধ্যে জমির প্রকৃত বিনিময় মূল্য বেশি হলেও তা সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের সহায়তায় কম দেখানো হয়। যে কারণে প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
জানা যায়, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মোহরার বা সংশ্লিষ্টদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিম্ন আয়ের থেকে মধ্য আয়ের সাধারণ মানুষ সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত মোটা অঙ্কের ব্যয় করে দলিল সম্পাদন করতে বাধ্য হচ্ছেন। অফিসের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ফি আদায়ের তালিকা টানানো থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তালিকায় বিভিন্ন প্রকৃতির দলিলের মধ্যে সাফ-কবলা, হেবা ঘোষণাপত্র, দানপত্র ও বন্ধকী দলিল সম্পাদনের জন্য পৃথক ফি উল্লেখ রয়েছে। তারপরও উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মোহরার আনোয়ার জানান, প্রতিটি দলিল সম্পাদনের বিপরীতে দলিলে উল্লিখিত জমির মোট মূল্যের ওপর ১ শতাংশ অফিসকে দিতেই হবে। এই ১ শতাংশ টাকা অফিসকে না দিলে দলিল সম্পাদন হয় না। ১ শতাংশ খরচের মধ্যে বরাদ্দ সাব রেজিস্ট্রার খরচ, আউটসোর্সিংয়ে নকল নবিশদের খরচ, অফিস খরচ ইত্যাদি।
নকলনবিশ ও কেরানির ঘুষ বাণিজ্য:
সদর রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ লেনদেন, দালালের দৌরাত্ম্য ও জমির শ্রেণি পরিবর্তনের নামে রাজস্ব ফাঁকিসহ নানা অভিযোগ। এ দপ্তরে সিন্ডিকেটের মূল মহানায়ক অফিস সহকারী ও নকলনবিশ প্রধান আনোয়ার। দলিল ভেন্ডার সমিতির সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির নেতৃবৃন্দরা দলিল প্রতি সেরেস্তা খরচের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, যার পূর্ণাঙ্গ মুল ভূমিকায় রয়েছে আনোয়ার। শুধু তাই নয়, তারা পে-অর্ডারেও ঘুষ নেয়।
দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক টিমের তদন্তে উঠে আসা অনিয়ম প্রসঙ্গে সাব-রেজিস্ট্রার এস এম আদনান নোমান’কে সারাক্ষণ বার্তার প্রতিনিধি মুঠোফোনে যোগাযোগ করে চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।