ঢাকা ০৫:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ:
জালিয়াতির চক্রে রাজউক।নথি জালিয়াতিতে জড়িত রাজউকের বিশেষ চক্রের সাথে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ। লক্ষ্মীপুরে আলোচিত যুবলীগ–ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার উখিয়ায় অস্ত্র-গুলিসহ আরাকান আর্মির এক সদস্যের আত্মসমর্পণ নিজের বাল্যবিবাহ নিজেই বন্ধ করল অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতু চিরিরবন্দরে বিআরটিসি বাস খাদে, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন যাত্রীরা আউলিয়াপুরে শিশু ও যুব ফোরামের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি মাদারীপুর রাজৈর থানা হেফাজত হতে মাদক মামলায় অভিযুক্ত আসামির পলায়ন। উলিপুরে ৫ বছরের কন্যাশিশুকে ধ’র্ষণের অভিযোগে ব্যক্তি গ্রেফতার সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অভিযোগে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাকির খান গ্রেফতার চিরিরবন্দর বিন্যাকুড়ি ইছামতী নদীতে ৮ বছর বয়সী শিশুর নদীতে পড়ে মৃত্যু

বিগত সরকারের আমলে পূর্বাচল -ঝিলমিল আবাসন প্রকল্পে বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ দেয়া বিতর্কিতদের প্লট বাতিল করেনি রাজউক

  • স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৫:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • ৬৭ জন সংবাদটি পড়েছেন

 

 

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসন টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তার সহযোগীদের নাম-পরিচয়। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এ তালিকায় উঠে আসে প্রভাবশালী আমলা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বেশকিছু গণমাধ্যমকর্মীর নাম; যারা মূলত ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ রক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্পে তারা পান প্লট কিংবা ফ্ল্যাট বরাদ্দ। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এসব সম্পদের বরাদ্দ বাতিলের দাবি ওঠে। কিন্তু এক বছর হতে চললেও বাতিল করা হয়নি বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ পাওয়া বিতর্কিতদের প্লট।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আইন সংশোধন হয় ১৯৮৬ সালে। নতুন আইনে বলা হয়, ‘সরকার যাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাকেই প্লট বরাদ্দ দিতে পারবে।’ ওই ধারাটির মাধ্যমে সরকারি আবাসন প্রকল্পগুলো হয়ে ওঠে ক্ষমতা অপব্যবহারকারী লোকদের সুবিধা দেয়ার হাতিয়ার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বৈরশাসক তার শাসন টিকিয়ে রাখতে বরাবরই আমলা, রাজনীতিবিদসহ সমাজের প্রতাপশালী ও প্রশাসনিক ক্ষমতাধরদের ওপর বেশি নির্ভর করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, প্রশাসন, রাজনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের নানা ব্যক্তির সমর্থনেরও প্রয়োজন পড়েছে। এ সমর্থনের বিনিময়ে এসব মানুষকে সম্পদ বাড়ানোর পথ প্রশস্ত করে দেয়া হয় নানাভাবে। পাশাপাশি উপঢৌকন হিসেবে দেয়া হয় নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা। গত সরকারের আমলেও রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত আবাসিক এলাকা ও সরকারি প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন বিচার বিভাগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, চলচ্চিত্রশিল্পীসহ সরকারঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তি।

রাজউকের সবচেয়ে বড় আবাসন প্রকল্প পূর্বাচল। মধ্যবিত্তের জন্য আবাসন চাহিদা মেটাতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। যদিও পূর্বাচলের এ জমি সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারাই। প্রথম পর্যায়ের লটারির মাধ্যমে তাদের ১ হাজার ৬৩২টি প্লট বরাদ্দ দেয় রাজউক। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার চাকরিজীবীদের ৬৫৪, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি কোটায় ৪৭২, বেসরকারি চাকরিজীবীদের ৫৯১, প্রবাসী কোটায় ৫৯১, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২৯৬, সচিব কোটায় ২৪, আইনজীবী কোটায় ১১০, বিচারপতি কোটায় ১৪, সংসদ সদস্য কোটায় ৫৭, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোটায় ৫৭, অন্যান্য কোটায় ১৮১, শিল্পী কোটায় ১৫১ ও সাংবাদিক কোটায় ৫৫টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। রাজউক কর্মকর্তা, সংরক্ষিত ও প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও দেয়া হয় প্লট বরাদ্দ। লটারির পরও বিভিন্ন সময় পূর্বাচলের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী।

আমলা-রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন গবেষক মোহাম্মদ এজাজ। বর্তমানে তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত এক বছরেও বিতর্কিত এসব বরাদ্দ বাতিল না করায় রাজউকের সমালোচনা করে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার পেছনে আমলা, প্রশাসনের প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীদের বেশ ভূমিকা ছিল। যে কারণে বিশেষ বিবেচনায় তাদের নামে রাজউকের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত সরকারের এ দোসরদের প্লট বরাদ্দ বাতিল করা খুব জটিল কোনো বিষয় নয়। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। এটা জুলাই চেতনারও দাবি। পাশাপাশি আগামীতে কেউ যেন আর সরকারের এমন উপহার না পায়, আইন করে সে পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে।’

ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহরে জমি বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে ১৬ জনকে আসামি করে গত জানুয়ারিতে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পাশাপাশি জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের সাবেক পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মো. হাফিজুর রহমান, উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাবিবুর রহমান, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২), শেখ শাহিনুল ইসলাম ও রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলামকে আসামি করা হয়। দুদক সূত্রে জানা যায়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নং রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেন শেখ হাসিনা ও তার স্বজনরা। সে কারণে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলাটি করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাজউকের প্লট বরাদ্দে যত অনিয়ম হয়েছে, সেগুলো তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৪ অক্টোবর রুলসহ এ বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়। ১২০ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অনিয়ম ও রাজনৈতিক বিবেচনায় যেসব প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেগুলো নিয়ে কাজ চলমান। হাইকোর্ট একটি হাইপাওয়ার তদন্ত কমিশন গঠন করে দিয়েছেন। সেখানে একজন সাবেক সচিব, তার সঙ্গে বাইরের একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং আমাদের একজন সদস্য (প্রশাসন) আছেন। তারা এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যাচাই-বাছাই চলছে। শিগগিরই রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। তারপর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরের বছর বিচারপতি কোটায় রাজউকের প্লট বরাদ্দ পান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট শাসক হয়ে ওঠার পেছনে তার মুখ্য ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মতো কেরানীগঞ্জে রাজউকের ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পেও ‘অনুগত ও তোষামোদকারীদের’ মূল্যবান প্লট দিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারি চাকরি, জনসেবা ও সমজাতীয় খাতে জাতীয়ভাবে ‘অসামান্য অবদানের’ নামে ঝিলমিলে দেয়া হয় দুই শতাধিক প্লট। অসামান্য অবদানের নামে ওই প্রকল্পে প্লট পান অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানও, যিনি প্রথম মেয়াদে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। আবদুস সোবহান ছিলেন শেখ হাসিনা সরকারের অনুগত ও ঘনিষ্ঠ।

সরকারের আস্থাভাজন আমলা-প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্লট দেয়ার ক্ষেত্রে শুধু যে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে তা নয়, বরং নগর পরিকল্পনায়ও নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের (ইউআরপি) অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘গুলশান-বনানী থেকে শুরু করে পরিকল্পিত যত আবাসিক এলাকা ছিল, সবগুলোয় দেখা যাবে মনঃপূত ব্যক্তিকে প্লট দিয়েছে সরকার। আর সেটি করতে গিয়ে প্ল্যানের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। উত্তরায় এত সুন্দর আবাসিক এলাকা, সেখানেও লেক সাইট অংশে প্ল্যানের বাইরে গিয়ে সরকারের ঘনিষ্ঠদের প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হয়। একইভাবে মিরপুরে রামচন্দ্রপুর খালসহ বেশ কয়েকটি খাল ভরাট করে সরকারের পছন্দসই ব্যক্তিদের প্লট বরাদ্দ দিয়েছে গণপূর্ত। আমি বলতে চাচ্ছি, এভাবে রাজনৈতিক বরাদ্দ শুধু যে স্বৈরাচার সরকারকে টিকিয়ে রাখে কেবল তা নয়, একটি নগরীকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। যার ভুক্তভোগী ওই নগরীতে বসবাস করা প্রতিটি নাগরিক। এ ধরনের বরাদ্দের উদাহরণ আগেও ছিল। যারাই রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ পেয়েছে তাদের প্লট বাতিল করার পাশাপাশি যারা এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।’

প্রথম বরাদ্দের পর থেকে এ পর্যন্ত জমি কেনা-বেচার মাধ্যমে প্রচুর প্লটের মালিকানা বদল হয়েছে। ফলে সরকারিভাবে যারা প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন, আর্থিকভাবে তারা অভাবনীয় লাভবান হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তারা সারা জীবন চাকরির পর পেনশন হিসেবে মোট যে পরিমাণ অর্থ পেতেন, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ আয় করে নিচ্ছেন শুধু পূর্বাচলের প্লট বিক্রি করে।

স্বৈরশাসক তৈরির ক্ষেত্রে তাই সরকারের উপহারের এসব প্লট বড় ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান। ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) এ পরিচালক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে দামি হলো জমি। সরকার কারো কর্মে খুশি হলে তাকে পদ-পদবিসহ জমিও উপহার দেয়। এজন্য আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করে রাজউক ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের মতো জমিস্বল্পতার দেশে একান্ত প্রয়োজন হলে সরকার যোগ্য ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ একটা ফ্ল্যাট উপহার দিতে পারে। কিন্তু সেটা না করে হাজার হাজার আমলা-রাজনৈতিক ব্যক্তিকে সরকার প্লট দিয়েছে। জনগণের এসব সম্পদ দ্রুত উদ্ধার করে জনকল্যাণে ব্যবহার করার দাবি জানাচ্ছি।’

জনগণের অর্থে বেতন নিয়ে যেসব আমলা আইন-নীতির তোয়াক্কা না করে প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন তাদেরও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ড. আদিল মুহাম্মদ খান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে শেখ হাসিনা সরকারের পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্লট বরাদ্দ বাতিল না হওয়া প্রমাণ করে এ সরকার জুলাই চেতনা ধারণ করে না। বিশেষ করে যারা গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে তাদের মধ্যে আমরা সে চেতনা দেখি না। যখন একটা সরকারের পারিষদ জুলাই চেতনার পুরোটা ধারণ না করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে আপস করে, তখন অবস্থা এমনই হয়। এসব অবৈধভাবে দেয়া বরাদ্দ বাতিল করার দাবি ছিল জনগণের। অন্তর্বর্তী সরকার এটা বাস্তবায়ন করে দেখাতে পারেনি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নে অবিলম্বে ঐসকল বরাদ্দকৃত প্লট ও ফ্ল্যাট বাতিল করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুধু সময়ের দাবি নয় এটি নৈতিকতা ও বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশের ১৮ কোটি গণ মানুষের প্রাণের আকুতি।

Tag :
About Author Information

GOURANGA BOSE

জনপ্রিয় সংবাদ

জালিয়াতির চক্রে রাজউক।নথি জালিয়াতিতে জড়িত রাজউকের বিশেষ চক্রের সাথে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ।

বিগত সরকারের আমলে পূর্বাচল -ঝিলমিল আবাসন প্রকল্পে বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ দেয়া বিতর্কিতদের প্লট বাতিল করেনি রাজউক

আপডেট সময় : ০৯:৩৫:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

 

 

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসন টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তার সহযোগীদের নাম-পরিচয়। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এ তালিকায় উঠে আসে প্রভাবশালী আমলা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বেশকিছু গণমাধ্যমকর্মীর নাম; যারা মূলত ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ রক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্পে তারা পান প্লট কিংবা ফ্ল্যাট বরাদ্দ। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এসব সম্পদের বরাদ্দ বাতিলের দাবি ওঠে। কিন্তু এক বছর হতে চললেও বাতিল করা হয়নি বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ পাওয়া বিতর্কিতদের প্লট।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আইন সংশোধন হয় ১৯৮৬ সালে। নতুন আইনে বলা হয়, ‘সরকার যাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাকেই প্লট বরাদ্দ দিতে পারবে।’ ওই ধারাটির মাধ্যমে সরকারি আবাসন প্রকল্পগুলো হয়ে ওঠে ক্ষমতা অপব্যবহারকারী লোকদের সুবিধা দেয়ার হাতিয়ার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বৈরশাসক তার শাসন টিকিয়ে রাখতে বরাবরই আমলা, রাজনীতিবিদসহ সমাজের প্রতাপশালী ও প্রশাসনিক ক্ষমতাধরদের ওপর বেশি নির্ভর করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, প্রশাসন, রাজনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের নানা ব্যক্তির সমর্থনেরও প্রয়োজন পড়েছে। এ সমর্থনের বিনিময়ে এসব মানুষকে সম্পদ বাড়ানোর পথ প্রশস্ত করে দেয়া হয় নানাভাবে। পাশাপাশি উপঢৌকন হিসেবে দেয়া হয় নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা। গত সরকারের আমলেও রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত আবাসিক এলাকা ও সরকারি প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন বিচার বিভাগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, চলচ্চিত্রশিল্পীসহ সরকারঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তি।

রাজউকের সবচেয়ে বড় আবাসন প্রকল্প পূর্বাচল। মধ্যবিত্তের জন্য আবাসন চাহিদা মেটাতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। যদিও পূর্বাচলের এ জমি সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারাই। প্রথম পর্যায়ের লটারির মাধ্যমে তাদের ১ হাজার ৬৩২টি প্লট বরাদ্দ দেয় রাজউক। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার চাকরিজীবীদের ৬৫৪, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি কোটায় ৪৭২, বেসরকারি চাকরিজীবীদের ৫৯১, প্রবাসী কোটায় ৫৯১, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২৯৬, সচিব কোটায় ২৪, আইনজীবী কোটায় ১১০, বিচারপতি কোটায় ১৪, সংসদ সদস্য কোটায় ৫৭, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোটায় ৫৭, অন্যান্য কোটায় ১৮১, শিল্পী কোটায় ১৫১ ও সাংবাদিক কোটায় ৫৫টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। রাজউক কর্মকর্তা, সংরক্ষিত ও প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও দেয়া হয় প্লট বরাদ্দ। লটারির পরও বিভিন্ন সময় পূর্বাচলের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী।

আমলা-রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন গবেষক মোহাম্মদ এজাজ। বর্তমানে তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত এক বছরেও বিতর্কিত এসব বরাদ্দ বাতিল না করায় রাজউকের সমালোচনা করে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার পেছনে আমলা, প্রশাসনের প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীদের বেশ ভূমিকা ছিল। যে কারণে বিশেষ বিবেচনায় তাদের নামে রাজউকের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত সরকারের এ দোসরদের প্লট বরাদ্দ বাতিল করা খুব জটিল কোনো বিষয় নয়। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। এটা জুলাই চেতনারও দাবি। পাশাপাশি আগামীতে কেউ যেন আর সরকারের এমন উপহার না পায়, আইন করে সে পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে।’

ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহরে জমি বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে ১৬ জনকে আসামি করে গত জানুয়ারিতে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পাশাপাশি জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের সাবেক পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মো. হাফিজুর রহমান, উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাবিবুর রহমান, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২), শেখ শাহিনুল ইসলাম ও রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলামকে আসামি করা হয়। দুদক সূত্রে জানা যায়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নং রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেন শেখ হাসিনা ও তার স্বজনরা। সে কারণে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলাটি করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাজউকের প্লট বরাদ্দে যত অনিয়ম হয়েছে, সেগুলো তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৪ অক্টোবর রুলসহ এ বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়। ১২০ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অনিয়ম ও রাজনৈতিক বিবেচনায় যেসব প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেগুলো নিয়ে কাজ চলমান। হাইকোর্ট একটি হাইপাওয়ার তদন্ত কমিশন গঠন করে দিয়েছেন। সেখানে একজন সাবেক সচিব, তার সঙ্গে বাইরের একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং আমাদের একজন সদস্য (প্রশাসন) আছেন। তারা এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যাচাই-বাছাই চলছে। শিগগিরই রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। তারপর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরের বছর বিচারপতি কোটায় রাজউকের প্লট বরাদ্দ পান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট শাসক হয়ে ওঠার পেছনে তার মুখ্য ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মতো কেরানীগঞ্জে রাজউকের ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পেও ‘অনুগত ও তোষামোদকারীদের’ মূল্যবান প্লট দিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারি চাকরি, জনসেবা ও সমজাতীয় খাতে জাতীয়ভাবে ‘অসামান্য অবদানের’ নামে ঝিলমিলে দেয়া হয় দুই শতাধিক প্লট। অসামান্য অবদানের নামে ওই প্রকল্পে প্লট পান অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানও, যিনি প্রথম মেয়াদে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। আবদুস সোবহান ছিলেন শেখ হাসিনা সরকারের অনুগত ও ঘনিষ্ঠ।

সরকারের আস্থাভাজন আমলা-প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্লট দেয়ার ক্ষেত্রে শুধু যে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে তা নয়, বরং নগর পরিকল্পনায়ও নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের (ইউআরপি) অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘গুলশান-বনানী থেকে শুরু করে পরিকল্পিত যত আবাসিক এলাকা ছিল, সবগুলোয় দেখা যাবে মনঃপূত ব্যক্তিকে প্লট দিয়েছে সরকার। আর সেটি করতে গিয়ে প্ল্যানের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। উত্তরায় এত সুন্দর আবাসিক এলাকা, সেখানেও লেক সাইট অংশে প্ল্যানের বাইরে গিয়ে সরকারের ঘনিষ্ঠদের প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হয়। একইভাবে মিরপুরে রামচন্দ্রপুর খালসহ বেশ কয়েকটি খাল ভরাট করে সরকারের পছন্দসই ব্যক্তিদের প্লট বরাদ্দ দিয়েছে গণপূর্ত। আমি বলতে চাচ্ছি, এভাবে রাজনৈতিক বরাদ্দ শুধু যে স্বৈরাচার সরকারকে টিকিয়ে রাখে কেবল তা নয়, একটি নগরীকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। যার ভুক্তভোগী ওই নগরীতে বসবাস করা প্রতিটি নাগরিক। এ ধরনের বরাদ্দের উদাহরণ আগেও ছিল। যারাই রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ পেয়েছে তাদের প্লট বাতিল করার পাশাপাশি যারা এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।’

প্রথম বরাদ্দের পর থেকে এ পর্যন্ত জমি কেনা-বেচার মাধ্যমে প্রচুর প্লটের মালিকানা বদল হয়েছে। ফলে সরকারিভাবে যারা প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন, আর্থিকভাবে তারা অভাবনীয় লাভবান হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তারা সারা জীবন চাকরির পর পেনশন হিসেবে মোট যে পরিমাণ অর্থ পেতেন, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ আয় করে নিচ্ছেন শুধু পূর্বাচলের প্লট বিক্রি করে।

স্বৈরশাসক তৈরির ক্ষেত্রে তাই সরকারের উপহারের এসব প্লট বড় ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান। ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) এ পরিচালক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে দামি হলো জমি। সরকার কারো কর্মে খুশি হলে তাকে পদ-পদবিসহ জমিও উপহার দেয়। এজন্য আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করে রাজউক ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের মতো জমিস্বল্পতার দেশে একান্ত প্রয়োজন হলে সরকার যোগ্য ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ একটা ফ্ল্যাট উপহার দিতে পারে। কিন্তু সেটা না করে হাজার হাজার আমলা-রাজনৈতিক ব্যক্তিকে সরকার প্লট দিয়েছে। জনগণের এসব সম্পদ দ্রুত উদ্ধার করে জনকল্যাণে ব্যবহার করার দাবি জানাচ্ছি।’

জনগণের অর্থে বেতন নিয়ে যেসব আমলা আইন-নীতির তোয়াক্কা না করে প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন তাদেরও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ড. আদিল মুহাম্মদ খান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে শেখ হাসিনা সরকারের পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্লট বরাদ্দ বাতিল না হওয়া প্রমাণ করে এ সরকার জুলাই চেতনা ধারণ করে না। বিশেষ করে যারা গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে তাদের মধ্যে আমরা সে চেতনা দেখি না। যখন একটা সরকারের পারিষদ জুলাই চেতনার পুরোটা ধারণ না করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে আপস করে, তখন অবস্থা এমনই হয়। এসব অবৈধভাবে দেয়া বরাদ্দ বাতিল করার দাবি ছিল জনগণের। অন্তর্বর্তী সরকার এটা বাস্তবায়ন করে দেখাতে পারেনি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নে অবিলম্বে ঐসকল বরাদ্দকৃত প্লট ও ফ্ল্যাট বাতিল করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুধু সময়ের দাবি নয় এটি নৈতিকতা ও বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশের ১৮ কোটি গণ মানুষের প্রাণের আকুতি।