বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডে (বিটিসিএল) টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গোপন লেনদেনে প্রায় ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। কপার ক্যাবল ও অপটিক্যাল ফাইবার লেইং কাজের জন্য তালিকাভুক্ত ১১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পছন্দের কিছু প্রতিষ্ঠানকে গোপনে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে তোলপাড় চলছে।
বিগত তিন বছর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে টেন্ডার সম্পন্ন হলেও চলতি বছরের এপ্রিল থেকে খুলনা, বগুড়া ও রংপুর অঞ্চলে ই-জিপি চালু করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, ই-টেন্ডারের নামে টেন্ডারে অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানকে আড়াল করে কিছু নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে অধিকাংশ কাজ ভাগ করে দেয়া হয়।
খুলনা অঞ্চলের ৬টি টেন্ডারের মধ্যে আরিয়ান এন্টারপ্রাইজ পায় ৪টি কাজ। বগুড়ার ৪টি টেন্ডারের মধ্যে পায় ২টি, আর রংপুরের ৩টি টেন্ডারের মধ্যে পায় আরও ২টি কাজ। অর্থাৎ, ১৩টি টেন্ডারের মধ্যে একই প্রতিষ্ঠান ৮টি কাজ পেয়েছে।
অন্যদিকে প্রডাক্ট প্লাস নামের একটি প্রতিষ্ঠান তিনটি অঞ্চলে একটি করে কাজ পেয়েছে যা সংশ্লিষ্টদের মতে দুর্নীতি ছাড়া সম্ভব নয়।
সরকারি বিধি অনুযায়ী টেন্ডারে অংশ নেয়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি বা ই-মেইলে অবহিত করার কথা থাকলেও কাউকেই জানানো হয়নি। অভিযোগ আছে, টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি গোপন বৈঠক করে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের ডেকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।
খুলনা অঞ্চলের ডিজিএম তরিকুল ইসলাম দাবি করেন, ই-জিপিতে টেন্ডার হয়েছে এবং কোনো অনিয়ম হয়নি তবে কেন হঠাৎ ই-জিপি চালু করা হলো সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
বগুড়ার ডিজিএম দিপুল কুমার রায় ও রংপুরের ডিজিএম জগেন্দ্রনাথ রায়ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
আরিয়ান এন্টারপ্রাইজের কর্ণধারের বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, তিনি ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে বলে বেড়ান এবং যেকোনো উপায়ে কাজ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এ ধরনের জালিয়াতি বিটিসিএলের ইতিহাসে নজিরবিহীন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত দাবি জানিয়ে তারা বলছে, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত না করলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্রমেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।