২০১২ সালে যাত্রা শুরু করা রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৩ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডের মধ্যে অন্তত ৮ জনই আওয়ামী লীগপন্থী বা সরাসরি নেতা, যারা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বার্থে প্রভাব বিস্তার করছেন বলে জানা গেছে।
ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর স্ত্রী রাশিদুল আরা হাসনিন, মাগুরার সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের স্ত্রী সিমা রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারের স্ত্রী মাহমুদা আলী শিকদার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি সাইদুর রহমান খানের স্ত্রী কামরুন রহমান খান।
এছাড়া পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এ.কে.এম কামরুজ্জামান খান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের টিউশন ফি সর্বনিম্ন ২ লাখ ৭০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক আয় দাঁড়ায় অন্তত ২০০ কোটি টাকা, যার বড় অংশই সরাসরি ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের অ্যাকাউন্টে চলে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নামলেও তাদের তালিকা ধরে নানা হয়রানি ও নিরুৎসাহিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভিন্নমত দমন করতে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতারা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেন। খালিদ মাহমুদ সরাসরি সদস্য না হয়ে নিজের স্ত্রীকে ট্রাস্টি বোর্ডে বসান। লিয়াকত শিকদার শুধু বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েরও ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার শা, যিনি আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।